প্রকাশ: শনিবার, ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ২:১৯ পিএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একদিনে আরও ২১ জনের মৃত্যু হয়েছে, আর নতুন রোগী শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৮৩ জন। গতকাল শুক্রবার বিকালে সংবাদমাধ্যমে বিজ্ঞপ্তি পাঠিয়ে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষ থেকে দেশে করোনাভাইরাস পরিস্থিতির এই সর্বশেষ তথ্য জানানো হয়। সেখানে বলা হয়, সকাল ৮টা পর্যন্ত শনাক্ত ১ হাজার ৩৮৩ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৩ লাখ ৫৬ হাজার ৭৬৭ জন হল। আর গত এক দিনে মারা যাওয়া ২১ জনকে নিয়ে দেশে করোনাভাইরাসে মোট মৃতের সংখ্যা ৫ হাজার ৯৩ জনে দাঁড়াল। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হিসাবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ১ হাজার ৯৩২ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত একদিনে। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা বেড়ে ২ লাখ ৬৭ হাজার ২৪ জন হয়েছে। বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, তা সাড়ে তিন লাখ পেরিয়ে যায় ২১ সেপ্টেম্বর। এর মধ্যে ২ জুলাই ৪ হাজার ১৯ জন কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ শনাক্ত। প্রথম রোগী শনাক্তের ১০ দিন পর ১৮ মার্চ দেশে প্রথম মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ২২ সেপ্টেম্বর সেই সংখ্যা পাঁচ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়, যা এক দিনের সর্বোচ্চ মৃত্যু। জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের তালিকায় বিশ্বে শনাক্তের দিক থেকে পঞ্চদশ স্থানে আছে বাংলাদেশ, আর মৃতের সংখ্যায় রয়েছে ২৯তম অবস্থানে।
বিশ্বে এ পর্যন্ত শনাক্ত রোগীর সংখ্যা ইতোমধ্যে ৩ কোটি ২২ লাখ পেরিয়েছে; মৃতের সংখ্যা পৌঁছেছে ৯ লাখ ৮৩ হাজারের ঘরে। স্বাস্থ্য অধিদফতর জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় সারা দেশে ১০৩টি ল্যাবে ১২ হাজার ৪৭৩টি নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এ পর্যন্ত পরীক্ষা হয়েছে ১৮ লাখ ৮৮ হাজার ১০টি নমুনা। একদিনে নমুনা পরীক্ষার বিবেচনায় শনাক্তের হার ১১ দশমিক ০৯ শতাংশ, এ পর্যন্ত মোট শনাক্তের হার ১৮ দশমিক ৯০ শতাংশ। শনাক্ত বিবেচনায় সুস্থতার হার ৭৪ দশমিক ৮৫ শতাংশ এবং মৃত্যুর হার ১ দশমিক ৪৩ শতাংশ। মৃত্যুবরণকারীদের বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে দেখা যায়, একদিনে ঢাকা বিভাগে ১৭ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৬ জন, খুলনা বিভাগে ২ জন, রাজশাহী, সিলেট ও রংপুর বিভাগে ১ জন করে মারা গেছেন। এ পর্যন্ত মৃত্যুবরণকারীদের বিভাগভিত্তিক বিশ্লেষণে ঢাকা বিভাগে মারা গেছেন ২ হাজার ৫০৭ জন; যা ৪৯ দশমিক ৪৩ শতাংশ। চট্টগ্রাম বিভাগে ১ হাজার ৫০ জন; যা ২০ দশমিক ৭০ শতাংশ। রাজশাহী বিভাগে ৩৩৫ জন; যা ৬ দশমিক ৬০ শতাংশ। খুলনা বিভাগে ৪২৭ জন; যা ৮ দশমিক ৪২ শতাংশ। বরিশাল বিভাগে ১৮৬ জন; যা ৩ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সিলেট বিভাগে ২২৪ জন; যা ৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। রংপুর বিভাগে ২৩৬ জন; যা ৪ দশমিক ৬৫ শতাংশ এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১০৭ জন; যা ২ দশমিক ১১ শতাংশ।
ঢাকা মহানগরীতে কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৫ হাজার ৪৫০টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তি রোগীর সংখ্যা ১ হাজার ৭১৭ জন ও শয্যা খালি আছে ৩ হাজার ৭৩৩টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ২৯২টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি রোগী আছে ১৮৬ জন ও শয্যা খালি আছে ১০৬টি। চট্টগ্রাম মহানগরীতে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭৮২টি, ভর্তিকৃত রোগী ১৫৪ জন ও শয্যা খালি আছে ৬২৮টি। আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৩৯টি, আইসিইউ শয্যায় ভর্তি আছে ১৭ জন ও শয্যা খালি আছে ২২টি। সারা দেশে অন্যান্য হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ৭ হাজার ৩৮৬টি, সাধারণ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগী ৭৯৭ জন ও শয্যা খালি আছে ৬ হাজার ৩৮৯টি এবং আইসিইউ শয্যা রয়েছে ২০১টি ও আইসিইউ শয্যায় ভর্তিকৃত রোগীর সংখ্যা ৮১ জন ও শয্যা খালি আছে ১২০টি। সারা দেশে হাসপাতালে সাধারণ শয্যা সংখ্যা ১৩ হাজার ৬১৮টি, রোগী ভর্তি আছে ২ হাজার ৬৬৮ জন এবং শয্যা খালি আছে ১০ হাজার ৯৫০টি। সারা দেশে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা ৫৩২টি, রোগী ভর্তি আছে ২৮৪ জন এবং খালি আছে ২৪৮টি। সারা দেশে অক্সিজেন সিলিন্ডারের সংখ্যা ১২ হাজার ৮৬৭টি। সারা দেশে হাই ফ্লো নেজাল ক্যানেলা সংখ্যা ৫১৯টি এবং অক্সিজেন কনসেনট্রেটর ৩৪১টি। ০১৩১৩-৭৯১১৩০, ০১৩১৩-৭৯১১৩৮, ০১৩১৩-৭৯১১৩৯ এবং ০১৩১৩-৭৯১১৪০ এই নম্বরগুলো থেকে হাসপাতালের সকল তথ্য পাওয়া যাবে। কোন হাসপাতালে কতটি শয্যা খালি আছে। কত রোগী ভর্তি ও কতজন ছাড় পেয়েছেন এবং আইসিইউ শয্যা খালি আছে কি না এই ফোন নম্বরগুলোতে ফোন করে জানা যাবে। এছাড়া িি.িফমযং.মড়া.নফ এর ঈঙজঙঘঅ কর্ণারে ‘করোনা বিষয়ক অভিযোগ প্রেরণ’ লিঙ্ক অথবা যঃঃঢ়:/ধঢ়ঢ়.ফমযং.মড়া.নফ/পড়ারফ১৯-পড়সঢ়ষধরহ লিঙ্ক ব্যবহার করে করোনা বিষয়ক যেকোন অভিযোগ পাঠানো যাবে। গত এক দিনে সুস্থ হওয়া ২ হাজার ১৩৯ জনের মধ্যে ঢাকা বিভাগে রয়েছেন ১ হাজার ১২৩ জন, চট্টগ্রাম বিভাগে ৩৩১ জন, রংপুর বিভাগে ৩৮ জন, খুলনা বিভাগে ২৭০ জন, বরিশাল বিভাগে ৯২ জন, রাজশাহী বিভাগে ২১৪ জন, সিলেট বিভাগে ৬১ জন এবং ময়মনসিংহ বিভাগে ১০ জন সুস্থ হয়েছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত এক দিনে আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ২৪৩ জন, আর ছাড় পেয়েছেন ৪৩৮ জন। এখন পর্যন্ত আইসোলেশনে যুক্ত হয়েছেন ৮০ হাজার ৫৯ জন, আর ছাড় পেয়েছেন ৬৪ হাজার ৭৩ জন। বর্তমানে আইসোলেশনে আছেন ১৫ হাজার ৯৮৬ জন। গত ২৪ ঘণ্টায় কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ৯১২ জন, আর কোয়ারেন্টিন থেকে ছাড় পেয়েছেন ১ হাজার ২৮৩ জন। এখন পর্যন্ত কোয়ারেন্টিনে যুক্ত হয়েছেন ৫ লাখ ২৮ হাজার ২৯৭ জন, আর এখন পর্যন্ত ছাড় পেয়েছেন ৪ লাখ ৮২ হাজার ১৩০ জন। বর্তমানে কোয়ারেন্টিনে আছেন ৪৬ হাজার ১৬৭ জন।
বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, গত এক দিনে স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ হটলাইন নম্বরে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৮ হাজার ১০৮টি, ৩৩৩ এই নম্বরে একদিনে ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৪৯২টি এবং আইইডিসিআর’র হটলাইন ১০৬৫৫, এই নম্বরে ফোন এসেছে গত ২৪ ঘণ্টায় ১৮৫টি। সব মিলিয়ে ২৪ ঘণ্টায় ফোনকল গ্রহণ করা হয়েছে ৫৩ হাজার ৭৮৫টি। এ পর্যন্ত হটলাইনে ফোনকল এসেছে ২ কোটি ৯ লাখ ৬৭ হাজার ৩০৮টি। করোনাভাইরাস চিকিৎসা বিষয়ে এ পর্যন্ত ১৬ হাজার ৪৯৮ জন চিকিৎসক অনলাইনে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। এদের মধ্যে ৪ হাজার ২১৭ জন স্বাস্থ্য বাতায়ন ও আইইডিসিয়ার’র হটলাইনগুলোতে স্বেচ্ছাভিত্তিতে সপ্তাহে ৭ দিন ২৪ ঘণ্টা জনগণকে চিকিৎসাসেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন। এছাড়া ২৪ ঘণ্টায় কোভিড বিষয়ক টেলিমেডিসিন সেবা গ্রহণ করেছেন ৪ হাজার ৫৯৬ জন। এ পর্যন্ত শুধু কোভিড বিষয়ে স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণ করেছেন ৩ লাখ ৮৬ হাজার ২৭৯ জন। প্রতিদিন ৩৫ জন চিকিৎসক ও ১০ জন স্বাস্থ্য তথ্য কর্মকর্তা দুই শিফটে মোট ৯০ জন টেলিমেডিসিন সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।
স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, দেশের বিমানবন্দর, নৌ, সমুদ্রবন্দর ও স্থলবন্দর দিয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩ হাজার ৫৩০ জনসহ সর্বমোট বাংলাদেশে আগত ৯ লাখ ৬২ হাজার ৭৫৭ জনকে স্কিনিং করা হয়েছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পরিস্থিতি তুলে ধরে স্বাস্থ্য অধিদফতর জানায়, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৬৩ লাখ ৪১ হাজার ৬৩৫ জন এবং মৃত্যুবরণ করেছেন ১ লাখ ৫ হাজার ৫১৫ জন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ২৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত রিপোর্ট অনুযায়ী সারাবিশ্বে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ৩ কোটি ১৪ লাখ ২৫ হাজার ২৯ জন এবং ৯ লাখ ৬৭ হাজার ১৬৪ জন মৃত্যুবরণ করেছেন।