নয়টি প্রতিষ্ঠান সঙ্গে একটি বাগানবাড়ি। চার বছরের মধ্যে থাইল্যান্ডেই এসব সম্পদ গড়েছেন প্রধান গ্রুপের কর্ণধার সেলিম প্রধান। এর বাইরে তিনি অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে আয় করা ১৩ কোটি ২৮ লাখ টাকা পাচারও করেছেন বিদেশে।
অবৈধভাবে অর্থপাচারের তথ্যপ্রমাণ পাওয়ার পর আদালতে অভিযোগপত্র দিয়েছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। সেই অভিযোগপত্রে সেলিম প্রধানের এসব সম্পত্তির তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
গত বছরের শেষ দিকে র্যাবের ক্যাসিনো বিরোধী অভিযানে গ্রেফতার হন সেলিম প্রধান। দেশত্যাগের আগ মুহূর্তে বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতারের পর সেলিম প্রধানকে নিয়ে তার অফিসে অভিযানে যায় র্যাব। গুলশান-২-এ মমতাজ ভিশনে সেলিম প্রধানের অফিস থেকে নগদ সাত লাখ টাকা, ৭৭ লাখ টাকা সমমানের বিদেশী মুদ্রা ও আট কোটি টাকার চেক উদ্ধার করে র্যাব। এছাড়া সেখানে বিদেশী মদ ও হরিণের চামড়া পাওয়া যায়।
পাচারের উদ্দেশ্যে বিপুল পরিমান দেশী-বিদেশী মুদ্রা রাখার অপরাধে সেলিম প্রধানে বিরুদ্ধে একটি মানি লন্ডারিং মামলা করে র্যাব।
সিআইডির এএসপি (মিডিয়া) মো. জিসানুল হক বলেন, গুলশান থানায় র্যাবের দায়ের করা মামলাটির তদন্ত শুরু করে সিআইডির ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইম ইউনিট। প্রায় এক বছর তদন্তের পর অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে অবৈধ উপার্জন এবং বিদেশে সেলিম প্রধানের অর্থ পাচারের প্রমাণ পাওয়া যায়। যার ভিত্তিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে সেলিম প্রধানসহ ছয়জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেয়া হয়েছে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সিআইডির পরিদর্শক শহিদুল ইসলাম খান জানান, অনলাইন ক্যাসিনোর মাধ্যমে উপার্জিত অর্থের মধ্যে ১৩ কোটি ২৮ লাখ ৮৯ হাজার ১৪৬ টাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়া থাইল্যান্ডে সেলিম প্রধানের ৯টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে। রয়েছে একটি বাগানবাড়িও। পাচার করা তিনি থাইল্যান্ডে এসব সম্পদ গড়েছেন। এই কাজে তাকে সহযোগিতা করেছেন মো. আক্তারুজ্জামান, মো. রোমান, আরিফুর রহমান ওরফে সীমান্ত আরিফ, চৌধুরী গোলাম মাওলা ওরফে শাওন এবং ইয়াংসিক লি। তাদের সবাইকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয়া হয়েছে।
গোয়েন্দারা বলছেন, সেলিম প্রধানের আসল পরিচয় নিয়ে ধোঁয়াশা থাকলেও তাকে অনেকেই চেনে থাই ডন হিসেবে। কারণ তার বিপুল অংকের বিনিয়োগ রয়েছে থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক ও পাতায়া শহরে। ঢাকার বেশ কয়েকজন প্রভাবশালী রাজনীতিক থাইল্যান্ডে হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। এসব অর্থ পাচারে সহায়তা করেছেন সেলিম প্রধান। এছাড়া আন্তর্জাতিক ক্যাসিনো নেটওয়ার্কের সঙ্গেও তিনি জড়িত।
তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, সেলিম প্রধান একসময় থাইল্যান্ডের ডন হিসেবে পরিচিত ছিলেন। থাইল্যান্ডের পাতায়া বিচ ঘেঁষা পাশাপাশি দুটি বিলাসবহুল অ্যাপার্টমেন্ট ভবন রয়েছে তার। পাতায়া শহরেও প্রধান স্পা নামে একাধিক বিউটি সেন্টার রয়েছে। এর বাইরে সেলিম প্রধানের জাপানের রাজধানী টোকিওতে বাড়ি রয়েছে। কিন্তু টোকিওতেও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে কালো তালিকাভুক্ত হয় তিনি। জাপান থেকে বহিষ্কার করা হলে চলে যান আমেরিকায়। সেখানে এক আমেরিকানকে বিয়েও করেন। আমেরিকান স্ত্রীকে কাজে লাগিয়ে তিনি ফের জাপানে ঢোকার চেষ্টা করেন। কিন্তু এ যাত্রায়ও সফল হননি। সেলিম প্রধানকে গ্রেফতার করে বাংলাদেশে পাঠানো হয়। তবে তাকে বেশি দিন কারাবাস করতে হয়নি।
র্যাব সূত্র জানায়, অনলাইনে বিশ্বের সুপরিচিত ক্যাসিনোগুলোর সঙ্গে জুয়াড়িদের যুক্ত করার কাজ করতেন সেলিম। তিনি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ‘প্রধান গ্রুপ’-এর কর্ণধার। তার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে জাপান-বাংলাদেশ সিকিউরিটি প্রিন্টিং অ্যান্ড পেপারস লিমিটেড, পি২৪ ল ফার্ম, এইউ এন্টারটেইনমেন্ট, পি২৪ গেমিং, প্রধান হাউস ও প্রধান ম্যাগাজিন। এর মধ্যে পি২৪ গেমিংয়ের মাধ্যমে তিনি জুয়াড়িদের ক্যাসিনোয় যুক্ত করতেন।
২০১৬ সালে সেলিম প্রধানের প্রতিষ্ঠান পি ২৪ কেবল কম্পিউটার গেমস বাজারে আনত। পরে অনলাইন জুয়া ও ক্যাসিনো কারবারে জড়িয়ে পড়ে প্রতিষ্ঠানটি। পি২৪-এর সঙ্গে বাংলাদেশে ১৫০টি অপারেটর এবং ক্যাসিনো যুক্ত আছে। অনলাইনে বিশ্বের সবচেয়ে প্রচলিত ক্যাসিনোর সঙ্গে যুক্ত করে দেয়ার ক্ষমতা আছে তাদের। জুয়াড়িদের মুঠোফোনে লাইভ ক্যাসিনোতে যুক্ত করে দেওয়ার সুবিধা তারা এনেছে ২০১৮ সালের ৭ ডিসেম্বর।