রাজশাহী মহানগরীতে আওয়ামী লীগ সভাপতি এবং রাজশাহী সিটি কর্পোরেশন মেয়র মোহাম্মদ খাইরুজ্জামান লিটন আর সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকারের অন্তর্কোন্দল রাজনীতির ভেতরের বাইরের কারো কাছেই নতুন খবর নয়। এই কোন্দলের কারণে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন পোড় খাওয়া, দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতি করা ত্যাগী নেতাকর্মীরা। এক নেতার সাথে সখ্যতা মানেই যেন আরেক নেতার চক্ষুশূল এমন বিপাকে রাজশাহী আওয়ামী লীগে এখন সাংগঠনিক বিশৃংখলা চরমে। পুরোপুরি ভেঙে পরেছে চেইন অব কমান্ড। এই কোন্দলের সকল কলকাঠি নাড়ছে ডাবলু সরকারের ভাগ্নে আরেক মহানগর আওয়ামী লীগের গত কমিটির উপ প্রচার সম্পাদক মীর ইশতিয়াক লেমন । পূর্বে রাসিক মেয়র খাইরুজ্জামান লিটনের ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করলেও সে এখন ডাবলু সরকারের মদদে গড়ে তুলেছে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি আর টেন্ডার বানিজ্যের সাম্রাজ্য। রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভেতরের বাইরের, অন্দরের খবর, লিটন, ডাবলু এবং লেমনের নানামুখী অপতৎপরতা, বিশেষ করে মীর ইশতিয়াক লেমনের অপকর্মের খতিয়ান নিয়ে আজকে থাকছে ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্ব।
জানা যায়, মেয়রের পিএস থাকাকালে সে প্রচুর পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয় টেন্ডারবাজি ও চাঁদাবাজির মাধ্যমে । স্বার্থ উদ্ধার হবার পরেই পরের নির্বাচনে তার মামা ডাবলু সরকারের সাথে হাত মিলিয়ে মেয়রের বিরুদ্ধে গোপনে বিএনপি প্রার্থীর সাথে পক্ষে কাজ করে। এমনকি সিনিয়র অনেক নেতাদের পাস কাটিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে গ্রুপিং শুরু করে। নতুন নতুন অনুপ্রবেশকারীদের সাথে নিয়ে তারা নির্বাচনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে এবং গোপনে কাজ করে । মূলত নিজের দূর্নীতি ও জবরদখলের রাজত্ব কায়েম রাখতেই লেমনের জন্য এখন ডাবলু সরকার ও মেয়রের মধ্যে কোন্দল সৃষ্টি ও তা বহাল রাখা জরুরি হয়ে পরেছে। আওয়ামী লীগ একত্রিত হলে অনুপ্রবেশকারীদের সাথে নিয়ে গড়ে তোলা লেমনের সিন্ডিকেট বাহিনী বিতাড়িত হতে পারে এই আশংকাতেই লেমন কলকাঠি নেড়ে চলেছে।
অনুসন্ধানে আরো জানা গেছে, ক্ষমতার জোড়ে লেমন হস্তান্তরের আগেই সিটি কর্পোরেশনের জমির ইজারা গ্রহণ, হিন্দুদের জমি দখলে ডাবলু সরকারকে সহায়তা প্রদান, ভয় দেখিয়ে টেন্ডার আদায়, সরকারি হাসপাতালের টেন্ডার ও ঔষধ জালিয়াতি ইত্যাদি অপকর্মের সাথে সরাসরি জড়িত। লেমনের ক্যডার বাহিনীর ভয়ে সাধারণ জনগণ এমনকি খোদ রাজশাহী আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতারাও এসব নিয়ে মুখ খুলতে নারাজ। এক লেমনের কারণে সাংগঠনিকভাবে দূর্বল হচ্ছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ, বাড়ছে নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভ ও অন্তর্দন্দ্ব। এভাবেই কোটি কোটি টাকা জালিয়াতি করা লেমনরা মামা চাচার ছায়ায় অনুপ্রবেশকারী বিএনপি জামায়াতকে সাথে নিয়ে জিতে যায় আর হেরে যায় আওয়ামী লীগ, হেরে যায় নিজের চেয়ে সংগঠনকে বেশি ভালবাসা দেয়া কর্মীরা।
বর্তমান সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সারাদেশের সাথে তাল মিলিয়ে উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় দুর্নিবার গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে শিক্ষা ও সবুজের শহর রাজশাহী। রাস্তা সংস্কার, বঙ্গবন্ধু হাইটেক পার্ক, নতুন বিরতিহীন ট্রেনসহ নানা ধরণের মেগা উন্নয়ন প্রকল্পের বদৌলতে এক মেগাসিটিতে পরিণত হচ্ছে রাজশাহী। রাজশাহীর সর্বত্রই লাগতে শুরু করেছে বর্তমান সরকারের উন্নয়নের ছোঁয়া। কিন্তু এই রাজশাহী নগরীর উপর প্রেতাত্মার মত ভর করেছে মীর ইশতিয়াক আহমেদ ওরফে লেমন। এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেখানে এই ভয়ংকর গডফাদার আর তার ক্যাডার বাহিনীর পদচারণা নেই। শিক্ষা, স্বাস্থ্য সহ সকল সরকারী টেন্ডার সবখানে পেছন থেকে কলকাঠি নাড়ে এই টেন্ডারবাজ গং।
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ওষুধ ও খাবারের টেন্ডার হস্তগত করে নিম্নমানের ওষুধ ও খাবার সরবরাহ, রাস্তার কাজে নিম্নমানের কাঁচামাল সরবরাহ ছাড়াও নানা রকম সকারী কাজে দুর্নীতি করে রাতারাতি টাকার কুমির বনে গেছে এই লেমন ও তার গং। লেমন গংদের এমন দুর্নীতি ও অপকর্মের জন্য দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে, তারা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন থেকে। লেমন গংদের কাছে অপদস্থ হওয়ার ভয়ে প্রকাশ্যে প্রকাশ্যে কেউ মুখ খুলছেনা। প্রাণের ভয়ে আর পরিবারের মা বোনের চিন্তায় এই লম্পট চরিত্রের ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ করতেও ভয় পায় জনসাধারণ।
এই গডফাদারের সাথে হাত মিলিয়েছে প্রশাসনের কিছু লোভী অফিসার। একাধিক সূত্র থেকে জানা যায় টাকার বিনিময়ে লেমন গংকে সকল প্রকার সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছে প্রশাসনের একাধিক কর্মকর্তা। প্রায় প্রতিরাতেই এসব কর্মকর্তাদের সাথে মদ আর নারী নিয়ে ফূর্তির আসর বসে লেমনের বোয়ালিয়া থানা মোড়ের আড্ডাখানায়। এই আড্ডাখানাও এক সংখ্যালঘু পরিবারকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ক্রয় করা। এখানেই শেষ নয়। নিজের ক্যডার বাহিনীর মাধ্যমে সে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রুয়েটকে পরিণত করেছে মাদকের সাম্রাজ্যে। বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অভ্যন্তরে তৈরি করেছে মাদকের সিন্ডিকেট আর নষ্ট করছে শত সহস্র ছাত্রের জীবন।
নিজের অপকর্মের মসনদ শক্ত করতে লেমন সহচর সেজে বসেছে রাজশাহীর কিছু বিপথগামী রাজনীতিবীদদের। এইসকল রাজনীতিবীদদের কালো ছায়াতেই টেন্ডারবাজ লেমন আজ গডফাদার লেমন হওয়ার সাহস পেয়েছে। আর সুযোগ বুঝে টাকার বিনিময়ে বিক্রি হয়েছে কিছু সাংবাদিকও। সাংবাদিকতা ছেড়ে তারা এখন লেমন গংদের পদলেহন করতেই বেশি ব্যস্ত।
একসময় এই লেমনের নজর ছিল রাজশাহীর নগর ভবনের দিকেও। নগর ভবনকে সে পরিণত করতে চেয়েছিল তার অবৈধ আয়ের আরেক উৎস হিসেবে। কিন্তু বর্তমান মেয়র খায়রুজ্জামান লিটনের দুর্নীতির বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান আর সততায় সেখান থেকে বিতাড়িত হয় এই সিন্ডিকেট।
উল্লেখ্য, এই গডফাদারের পাহাড়সম সম্পদের পরিমাণ জেনে হতবাক খোদ দুদক। গোপন সূত্রে জানা গেছে, ইতোমধ্যে দুদক থেকে বিভিন্ন আইনশৃংখলা প্রয়োগকারী সংস্থাকে চিঠি দেয়া হয়েছে লেমনের সকল সম্পদ ও অবৈধ উপার্জনের তথ্য একত্রিত করার জন্য। কারা যুক্ত এই গডফাদারের সাথে? কারা সেই দুর্নীতিবাজ অফিসার আর রাজনীতিবিদ যাদের ছত্রছায়ায় আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয় লেমনের মত সন্ত্রাসীরা?
আগামী পর্বে: লেমনের পৃষ্ঠপোষকতায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনে বিএনপি, জামায়াত, জঙ্গিরা