প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৯ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
ভোরের পাতা ডেস্ক/// প্রতিনিধি, কলকাতা
এতদিন ধরে গরু পাচারের নামে বাংলাদেশি পাচারকারীদের দায়ী করা হলেও এবারে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে। ভারতীয় তদন্ত সংস্থা (সিবিআই) অনুসন্ধান চালিয়ে বিএসএফের দুই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সে দেশের তিনজন বড় ব্যবসায়ীকে চিহ্নিত করেছে। সিবিআইয়ের এই অনুসন্ধানে অংশ নেন ভারতের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার ১২টি দল। এই দলে ছিলেন ১১০ জন সিবিআই কর্মকর্তা ও কর্মী। গত বুধবার এই গরু পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের ধরার জন্য সীমান্ত এলাকায় পাচারকারীদের বাড়ি বাড়ি তল্লাশি চালায় দেশটির কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিবিআই)। এসময় তারা পশ্চিমবঙ্গের সীমান্ত এলাকার ১২টি জায়গায় একযোগে তল্লাশি চালান। এই তল্লাশি চলে কলকাতা, সল্টলেক, মুর্শিদাবাদ ও শিলিগুড়িতে। ২১ সেপ্টেম্বর কলকাতার দুর্নীতি দমন শাখায় এ সংক্রান্ত মামলা হয়। সেই মামলায় উঠে আসে বিএসএফের ৩৬ নম্বর ব্যাটালিয়নের সাবেক কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমার এবং পাচার চক্রের তিন ব্যবসায়ীর নাম। তারা হলেন মহম্মদ এনামুল হক, আনারুল সেখ এবং মোহাম্মদ গোলাম মোস্তফা। এই তিন ব্যবসায়ী সরাসরি গরু পাচার চক্রের সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযোগ আছে। তাদের সঙ্গে ছিল বিএসএফের কমান্ড্যান্টের গভীর সখ্যতা। এ সম্পর্কের জেরে সীমান্তে নিয়মিত চলত গরু পাচার। আর সীমান্তে পাচারকালে কোনো গরু ধরা পড়লে, তা বিএসএফ আটক করে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সস্তায় নিলামে বিক্রি করে দেওয়া হতো। ওই সব গরুকে রোগা, অসুস্থ ও বাছুর হিসেবে চিহ্নিত করে নিলামে তোলা হতো। আর নিলামে কিনতেন পাচারকারী ওই তিন ব্যবসায়ী। তারপর আবার তারাই ওই গরু পাচার করে দিতো বাংলাদেশে। এরপর বিক্রির এই টাকা ভাগ হতো বিএসএফ, সীমান্তের শুল্ক বিভাগ এবং পুলিশের মধ্যে। এভাবেই বিএসএফের সক্রিয় সমর্থনে সীমান্তে গরু পাচার ছিল নৈমিত্তিক ঘটনা। তবে দায়ী করা হতো বাংলাদেশের ক্ষুদ্র এবং প্রান্তিক আয়ের মানুষকে। এনিয়ে সীমান্তে হত্যাকা-েরও শিকার হয়েছেন এসব অসহায় বাংলাদেশি। ২০১৮ সালে এই গরু পাচার নিয়ে প্রথম তদন্ত শুরু করে সিবিআই। তখন উঠে আসে মালদহ ও মুর্শিদাবাদের দায়িত্বে থাকা বিএসএফ কমান্ড্যান্ট সতীশ কুমারসহ ওই সব পাচারকারীর নাম। সতীশ কুমার দায়িত্বে ছিলেন ২০১৫ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। সতীশ কুমার সীমান্ত থেকে ২০ হাজার গরু আটক করলেও তার কোনো হিসাব পায়নি সিবিআই। বিএসএফের সঙ্গে পাচার চক্রের এতই দহরম মহরম ছিল যে পাচারকারী এনামুলের ‘হক স্টিল ইন্ডাস্ট্রি’তে মোটা বেতনে এনামুল হক চাকরি দিয়েছিলেন সতীশের পুত্র ভুবন ভাস্করকে। এছাড়া ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে ৪৫ লাখ রুপি ঘুষ নেওয়ার অভিযোগে ধরা পড়েন অন্য এক বিএসএফ কমান্ড্যান্ট জিবু ম্যাথু। সেই মামলায়ও গ্রেফতার হন গরু পাচারকারী এনামুল হক। জিবু ম্যাথুকে সেদিন ধরা হয়েছিল ছত্তিশগড়ের আলাপুঝা স্টেশন থেকে। পরে তাকে আনা হয় মালদহে।
তদন্তে সিবিআই জানতে পারে, এনামুলের বাড়ি রয়েছে নেপাল এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়েও। এদিকে মুর্শিদাবাদের কুলগাছি-রামচন্দ্রপুরের এনামুলের বাড়ি, রাইস মিল, স্টিল মিল তল্লাশি করে সিবিআই পেয়েছে বেশ কিছু নথি ও কাগজপত্র। সঙ্গে গরু পাচারের বিভিন্ন রুটের ছবি। এদিকে গতকাল রাজ্যজুড়ে এই পাচারকারীদের ধরতে অভিযান চালায় সিবিআই। সতীশ কুমার পশ্চিমবঙ্গ থেকে বদলি হয়ে এখন আছেন ছত্তিশগড়ের রাজধানী রায়পুরে। সেখানেও গত বুধবার তল্লাশি চালিয়েছে সিবিআই। সতীশ কুমারের সল্টলেকের বি-জে ব্লকের দোতলা একটি বাড়ি এবং নিউটাউনে তার কেনা একটি বড় আবাসন সিল করে দেয় সিবিআই। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় বহু কাগজপত্র। এছাড়া এদিন এনামুলসহ অন্যদের ধরার জন্য অভিযান চালায় সিবিআই। তবে এসময় কোনো পাচারকারীকে গ্রেফতার করতে পারেনি সিবিআই।