প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৯ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদকজাতিসংঘে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার দিনটি ছিল বঙ্গবন্ধুর জীবনের সুন্দরতম ও সর্বশ্রেষ্ঠ একটি দিন। আজ ২৫ সেপ্টেম্বর সেই ঐতিহাসিক দিন, ৪৬ বছর আগে ১৯৭৪ সালের এইদিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বাংলায় ভাষণ দিয়েছিলেন। এর আগে একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য দেশের মর্যাদা লাভ করে। এর মাত্র সাত দিন পর, ২৫ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘর সাধারণ পরিষদের ২৯তম অধিবেশনে বঙ্গবন্ধু বাংলায় ভাষণ দেন। জাতিসংঘে এটিই ছিল প্রথম বাংলায় ভাষণ। এর মাধ্যমে বাংলাভাষা বিশ্ব দরবারে পেয়েছে সম্মানের আসন, আর এই ভাষাভাষী মানুষ পেয়েছে গর্ব করার অবকাশ। অনেকেই মনে করেন, বিশ্বপরিসরে এর আগে বাংলা ভাষাকে এমন করে কেউ পরিচয় করিয়ে দেননি। এ ভাষণের আর একটি দিক হল এটি সমগ্র বিশ্বের অধিকারহারা শোষিত বঞ্চিত মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠার পক্ষে সোচ্চার এক কণ্ঠস্বর। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায় প্রতিষ্ঠার একটি বলিষ্ঠ উচ্চারণ ও সাহসী পদক্ষেপ।
ভারতের প্রখ্যাত লেখক ও গ্রন্থ সমালোচক সুরজিৎ দাসগুপ্ত জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর বাংলায় ভাষণ দেওয়ার দিনটিকে তাঁর (বঙ্গবন্ধু) জীবনের সুন্দরতম ও সর্বশ্রেষ্ঠ দিন হিসাবে অবিহিত করেছেন। তিনি বলেন, ‘এর আগে শেখ মুজিবুর রহমান নিজে ধর্মনিরপেক্ষ হওয়া সত্ত্বেও লাহোরে মুসলিম দেশগুলোর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে রাজি হলেন এই শর্তে যে, পাকিস্তান বাংলাদেশকে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেবে। পাকিস্তানের স্বীকৃতির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের স্বীকৃতি এবং এই সঙ্গে জাতিসংঘে প্রবেশের অধিকার আর বাংলা ভাষাকে জাতিসংঘের অন্যতম ভাষারূপে প্রতিষ্ঠার সুযোগ। ’
আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, সাবেক মন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ একটি নিবন্ধে লিখেছেন, ঐতিহাসিক এ দিনটির সূচনা হয় একই বছরের ১৮ সেপ্টেম্বর, বুধবার। বাংলাদেশ সময় ভোর ৪টায় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে সর্বসম্মতিক্রমে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের ১৩৬তম সদস্য রাষ্ট্ররূপে আনুষ্ঠানিকভাবে গ্রহণ করা হয়। তিনি বলেন, এই ঘোষণাটি শোনার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষমাণ বঙ্গবন্ধু তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় বলেছিলেন, ‘আমি সুখি হয়েছি যে, বাংলাদেশ জাতিসংঘে তার ন্যায্য আসন লাভ করেছে। জাতি আজ গভীর কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করবে, যারা বাংলাদেশকে স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে তাদের জীবন উৎসর্গ করে গেছেন। সেই শহীদদের কথা জাতি আজ শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছে।’ প্রবীণ এই আওয়ামী লীগ নেতা বঙ্গবন্ধুর সফরসঙ্গী হিসেবে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের এই ২৯তম অধিবেশনে যোগ দিয়েছিলেন। তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুকে প্রথমে অনুরোধ করা হয়েছিল, ইংরেজিতে বক্তৃতা করার জন্য। কিন্তু প্রিয় মাতৃভাষা বাংলার প্রতি সুগভীর দরদ ও মমত্ববোধ থেকে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন তিনি মাতৃভাষা বাংলায় বক্তৃতা করতে চান।’ সিদ্ধান্তটি তিনি আগেই নিয়েছিলেন উল্লেখ করে তোফায়েল বলেন, বঙ্গবন্ধুর বাংলা বক্তৃতার ইংরেজি ভাষান্তর করার গুরু দায়িত্বটি অর্পিত হয়েছিল ফারুক চৌধুরীর ওপর। তিনি ছিলেন লন্ডনে বাংলাদেশের ডেপুটি হাইকমিশনার।
প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনাও জাতির পিতার দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বিভিন্ন অধিবেশনে মাতৃভাষা বাংলায় ভাষণ দিচ্ছেন। এবারও জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের (৭৫তম ) অধিবেশনে ভার্চুয়াল অংশ গ্রহণে বাংলায় ভাষণ দেন।
জাতিসংঘে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ স্মরণে ই-পোস্টার প্রকাশিত :বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটি জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ অধিবেশনে বঙ্গবন্ধুর প্রথম বাংলায় ভাষণ প্রদান স্মরণে ই-পোস্টার প্রকাশ করেছে। জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দেওয়ার এই অনন্য দিনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে , প্রকাশিত ই-পোস্টার স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের আওতাধীন এলাকায় তাদের ব্যবস্থাপনায় পরিচালিত ইলেক্ট্রনিক/ডিজিটাল/এলইডি স্ক্রিনে প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া ইলেক্ট্রনিক, অনলাইন ও সোশ্যাল মিডিয়ায় উক্ত ই- পোস্টার ব্যাপকভাবে প্রচারের জন্য জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির পক্ষ হতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।