ড. কাজী এরতেজা হাসান
প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:৪৯ এএম আপডেট: ২৫.০৯.২০২০ ২:২২ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
করোনা উদ্ভব হওয়ায় সৌদি প্রবাসীদের অনেকে দেশে ফিরে আসেন। দেশে ফেরার পর বেশ কটা মাস কেটে গেছে। করোনা দূরীভূত না হলেও অনেক কিছুই এখন স্বাভাবিক হয়ে এসেছে। খুলে দেওয়া হয়েছে বহু কর্মস্থলের জায়গা। এটা দেশ-বিদেশের সব জায়গাতেই কর্মক্ষেত্র অনেকটাই আগের চেহারা ফিরে পেয়েছে। ফলে দেশে এসে আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীরা কর্মস্থলে ফিরে যাওয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলেন। তারা অপেক্ষায় ছিলেন, কখন সবকিছু স্বাভাবিক হবে এবং কখন কর্মস্থলে ঢোকা যায়। তাদের কাজ মানেই দেশকে স্বনির্ভর করা এবং অর্থনীতির চাকাকে সচল রাখা। মূলত এরা হচ্ছেন দেশের রেমিট্যান্স যোদ্ধা, আামাদের প্রবাসী ভাই বোনেরা। তারা অর্থ আয় করে স্বদেশ এবং প্রিয়জনের সুখ নিশ্চিত করতে সৌদিতে যেতে হবে। কিন্তু এক অর্বাচীন বাধা তাদের সেই পথকে আগলে রেখেছিল। করোনার কারণে সৌদির সঙ্গে বাংলাদেশের বিমান যাতায়াত বন্ধ থাকায় আটকেপড়া প্রবাসীরা মহাসংকটের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছিলেন। দেশের পররাষ্ট্র বিভাগও তাদের কষ্টে কোনভাবেই সহায়তায় এগিয়ে আসেনি। ‘মরার ওপর খাঁড়ার ঘা’ হয়ে দেখা দেয় ভিসার মেয়াদ দ্রুতভাবে ফুরিয়ে আসায়। সেই সঙ্গে ইকামার মেয়াদও অর্থাৎ ওয়ার্ক পারমিটের সময়সীমা কমতে থাকে। আরও সরল করে বলা যায় কাজের অনুমতিপত্র। এ পরিস্থিতিতে প্রবাসীরা তাদের বিপদের বিষয়টি সরকারকে জানাতে ঢাকার কয়েকটি স্থানে বিক্ষোভ শুরু করেন। রোদ-বৃষ্টিতে ভিজে তাদের এই আহাজারি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ঘুম ভাঙাতে সক্ষম হয়নি। কুম্ভকর্ণের ঘুমের মত বিক্ষোভের তিনদিন পর তিনি জাগ্রত হলেন। কূটনৈতিক তৎপরতায় সফলতা আসায় প্রবাসীরা হাফ ছেড়ে বাঁচলেন। এসময় বাংলাদেশ ও সৌদি আরব বিমান যাতায়াত সচল করতে সম্মত হয়। দু’পক্ষের আলোচনার পর প্রতিসপ্তাহে দু’টি বিমান সৌদিতে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়েছে। বলা চলে দেশে আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীদের সংকট অনেকটাই কেটেছে। তারপরেও এ ক্ষেত্রে একটি বিষয়ে বলতে হয়, আটকেপড়া সৌদি প্রবাসীদেরকে তাদের কর্মস্থলে যথাসময়ে পাঠানোর তাগিদ কেন সরকারের সংশ্লিষ্ট দায়িত্ববান ব্যক্তিরা অনুভব করেননি? কেন এই সব রেমিট্যান্স যোদ্ধাদের টানা তিনদিন বিক্ষোভ করতে হলো? সঙ্গতভাবেই প্রশ্ন আসে এই অচলাবস্থার জন্য দায়ী কে বা কারা?
বিশ^নেতা-রাষ্ট্রনায়ক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দেশকে উন্নতির সর্বোচ্চ চূড়ায় নিয়ে যেতে সমস্ত প্রাণশক্তি নিংড়ে দিচ্ছেন। দেশকে সম্মানজনক স্থানে নিয়ে যেতে নিরলস পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। কিন্তু পরম পরিতাপের বিষয় সরকারের দায়িত্বশীলরা এই ব্যাপারে বারবার অদক্ষতার পরিচয় দিচ্ছে। যাদের উপর নির্ভর করে মানুষের এবং দেশের সমৃদ্ধি তারা কেন এভাবে দায়িত্বহীনতার পরিচয় দেবে? আমরা ধিক্কার জানাই যেসব অধিনস্তদের যারা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিধারাকে অনুসরণ করতে পারছে না, তাঁর কর্ম-উদ্দীপনাকে পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি এই ব্যর্থগোষ্ঠিকে চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। তবে আশা এবং আনন্দের কথা সৌদি প্রবাসীদের ইকামা ও ভিসার মেয়াদ বাড়ানোয় সরকারের কূটনীতি সফল হয়েছে। এ ব্যাপারে গণমাধ্যমগুলো জানায়, সৌদি সরকার ইকামার মেয়াদ বাড়িয়েছে। ভিসার মেয়াদও বাড়ানো হচ্ছে। পাশাপাশি বিমান বাংলাদেশকে নিয়মিত ফ্লাইট পুনরায় চালুর অনুমতি দিয়েছে রিয়াদ। পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন, ‘যে সব সৌদি প্রবাসীর ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে, সে দেশের সরকার তাদের মেয়াদ বাড়িয়ে দেবে। সৌদি সরকারকে অ্যাপ্রোচ করেছিলাম মেয়াদ বাড়ানোর জন্য। তারা এতে সাড়া দিয়েছে। রোববারে সৌদি মিশন খুলবে। যাদের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, তারা বাড়িয়ে নিতে পারবে।’ আমাদের প্রবাসীরা এখন নিশ্চিন্তে সৌদি আরবে ফিরে যেতে পারবেন।’
একটা বিষয় আমাদের ভেবে দেখতে হবে যে, প্রবাসীদের কঠোর পরিশ্রমের টাকা দেশের উন্নয়নে অবদান রাখছে। ফলে যে কোনো বিষয় তাৎক্ষণিক দেখতে হবে। তাদের সামান্য সংকটও গুরুত্বের দাবি রাখে। পরিশেষে বলতে চাই, প্রবাসীদের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সর্বোচ্চ নজর রয়েছে। অন্যদেরও সেটা না থাকা বড়ই দুঃখজনক। বিদেশে তারা নানা সংকটে পড়েন, তার সমাধানও দ্রুত করার উদ্যোগ নিতে হবে। বিদেশে অবস্থিত আমাদের দূতাবাসগুলোকে আরও তৎপরতা দেখাতে হবে। এ ব্যাপারে আর কোন বিকল্প নেই।