প্রকাশ: শুক্রবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ১:২৭ এএম | প্রিন্ট সংস্করণ
রোহিত ঝড়ে উড়ে গেলেন কেকেআর :নাম কলকাতা নাইট রাইডার্স। খোদ কলকাতার কোন খোলোয়াড় না থাকলেও নস্টালজিয়ায় আক্রান্ত বাঙালিরা একটু ভরসা রেখেছিল । একটু বললে বোধ হয় কম বলা হবে। বরং বলা চলে কেকেআরের সমর্থনে উত্তাল ঢাকা এবং কলকাতা। খেলার আগে পশ্চিবঙ্গের দিদি দিনেসকার্ত্তিককে শুভাশিষ জানাতে ভোলেন নি। কিন্তু গত বুধবার বাঙালি হোচট খেল। একি হাল কলকাতার? এত দামী দামী ব্যাটার আর বোলারদের পাড়ার ব্যাটার আর বোলারের নামিয়ে এনে বীরদর্পে ম্যাচ জিতে নিল মুম্বাই! মুম্বাই তথা সাবেক বেম্বাইয়ের সঙ্গে অবশ্য আত্মিক সম্পর্ক আছে বাঙালির। সেই সম্পর্ককে এভাবে উল্টো দিলেন রোহিত তার উপায় কি হবে? বলা যেতে পারে এই রোহিত একাই হারিয়ে দিলেন কেকেআরকে। গত বুধবার আবুধাবি দেখলো হিটম্যান শো। ৫৪ বলে ৮০ করলেন তিনি।সেখানে বাউন্ডারির চেয়ে ওভার বাউন্ডারি বেশি। তিনটি চারের সঙ্গে ডবল মারেন ছক্কা। শুধু তাই নয়, এর পাশাপাশি গড়লেন দু’টি নতুন রেকর্ডও।মুম্বাইয়ের ইনিংসে লাইমলাইট ছিনিয়ে নেন রোহিতই। কামিন্সের এক ওভারে যেমন দু’টি বড় ছয় মারেন। তেমনই রেয়াত করেননি রাসেল-নারিন সহ কোনও বোলারকেই।
অনবদ্য রেকর্ডে সমৃদ্ধ রোহিত : এদিন অনবদ্য দু’টি রেকর্ডও গড়েন রোহিত শর্মা। আরসিবি অধিনায়ক বিরাট কোহলি এবং সানরাইজার্স হায়দরাবাদ অধিনায়ক তথা অস্ট্রেলিয়ান তারকা ডেভিড ওয়ার্নারের রেকর্ড ভাঙেন। আইপিএলে কোনও একটি নির্দিষ্ট দলের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বেশি রান করার ক্ষেত্রে কোহলি এবং ওয়ার্নারকে টপকে গেলেন রোহিত।গতবুধবারের বিধ্বংসী ইনিংসের পর নাইটদের বিরুদ্ধে রোহিতের সংগ্রহ ৮৯৫ রান। অর্থাৎ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে, উল্টোদিকে শাহরুখের দল থাকলেই জ্বলে ওঠেন রোহিত। এদিনও যাঁর প্রমাণ রাখলেন মুম্বাই অধিনায়ক। কেকেআরের ভাগ্য ভালো অবশ্য শতরানের আাগেই রোহিত প্যাভিলিয়নে ফিরেছেন। না ফিরলে কপালে আরও কতকি যে ছিল তা ভবিতব্যই জানে। রানরেট বাড়াতে গিয়ে শিবম মাভির বলেই আউট হন রোহিত। এছাড়া এদিন ৩৭তম অর্ধশতরান করে আরও একটি রেকর্ড গড়েন এই মুম্বায়ান। আইপিএলের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি অর্ধশতরান করার তালিকায় চার নম্বরে উঠে এলেন তিনি। সামনে শুধু ডেভিড ওয়ার্নার (৪৮), বিরাট কোহলি (৪১), এবং সুরেশ রায়না (৩৯)। শুধু তাই নয়, এদিন টুর্নামেন্টে তার ছক্কার পরিসংখ্যান দাড়াল ২০০টি। যে রেকর্ডের মালিক কেবলই তিনিই।
সাড়ে পনেরো কোটির তারকা :সাড়ে পনের কোটির তারকাকে প্রথম ম্যাচেই উড়িয়ে দিলেন রোহিত শর্মা। এবারের নিলামে এই আকাশছোঁয়া দামেই প্যাট কামিন্সকে কিনেছিল কলকাতা নাইট রাইডার্স। আইপিএলের বল গড়ানোর আগে থেকেই প্রত্যাশার চাপ বাড়ছিল অজি বোলারের উপরে। প্রথম ম্যাচে সেই চাপ কাটিয়ে উঠতে পারলেন না কামিন্স। এদিন পুরো চার ওভার তাঁকে দিয়ে বলই করাতে পারলেন না কলকাতার অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক।গত বছরের আইপিএলে পেসারদের নিয়ে ভুগতে হয়েছিল নাইটদের। এ বার তাই সাড়ে পনেরো কোটি টাকা দিয়ে কলকাতা কিনেছিল অজি পেসারকে। টেস্টে এক নম্বর বোলার তিনি। তাই কলকাতা ভক্তরা আশা করেছিলেন রোহিতের দলকে বেগ দেবেন তিনি। পঞ্চম ওভারে তাঁর হাতে বল তুলে দেন কার্তিক। প্রথম বল ওয়াইড দিয়ে শুরু করেন। সেই ওভারে ‘হিটম্যান’ দু’টি ছয় মারেন তাঁকে। তিন ওভার বল করে প্যাট কামিন্স খরচ করেন ৪৯ রান। তাঁর আকাশছোঁয়া দরের মতোই প্রচুর রান করলেন কামিন্স। এরপর কার্তিক আর তাঁর হাতে বল তুলে দেওয়ার সাহস দেখাননি।
নির্দয় মুম্বাই ব্যাটসম্যানরা : সত্যিকার অর্থে কামিন্সর উপরে নির্দয় ছিলেন মুম্বাই ব্যাটাররা। কামিন্সের এই দুর্ভাগ্যের দিনে চুপ থাকেনি সোশ্যাল মিডিয়া। তাঁকে নিয়ে শুরু হয়ে যায় রসিকতা। নেটাগরিকদের মধ্যে অনেকে লেখেন, ‘সাড়ে পনেরো কোটি জমা করে দিলেন রোহিত।’ কেউ লেখেন, ‘পনেরো কোটি। পনেরো রান প্রতি ওভারে।’ কেউ আবার ব্যঙ্গাত্মক ছবিতে তুলে ধরেন কেকেআর মালিক শাহরুখ খানের অবস্থা।
যা বলেছিলেন গাভাস্কার : গত মঙ্গলবার এক সাক্ষাৎকারে ভারতের প্রাক্তন অধিনায়ক সুনীল গাভাস্কর এই প্রত্যাশার চাপের কথাই বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, ‘সাড়ে পনেরো কোটি টাকা দিয়ে তাঁকে নিয়েছে কেকেআর। চাপ থাকবে সেই বিশাল অঙ্কের। কামিন্সকে পারফর্ম করে প্রমাণ করতে হবে যে এই অর্থ ব্যয় বৃথা যায়নি।’ প্রথম ম্যাচে সেই চাপ কাটাতে পারেননি কামিন্স। একের পর এক বল ভুল লেন্থে করে গেলেন। পাশে দাঁড়িয়ে তরুণ শিবম মাভি দু’টি উইকেট নিয়ে গেলেও, তাঁর ঝুলি ফাঁকা। রোহিত যখন কলকাতার বোলিংকে নিয়ে ছেলেখেলা করছেন, অভিজ্ঞ বোলার হিসেবে তাঁকে থামাতে ব্যর্থ হন অজি পেসার।
আইপিএল হায় আইপিএল! : আইপিএল যেমন নতুন তারকার জন্ম দিয়েছে, তেমনই অনেক দামি তারকাকে ফিরতে হয়েছে লজ্জা নিয়ে। যদিও প্রথম ম্যাচের লজ্জা কাটানোর সুযোগ পাবেন কামিন্স। সন্দেহ নেই পরের ম্যাচগুলোয় তাঁর উপরে চাপ আরও বেড়ে গেল। এই চাপ নিজেকে প্রমাণ করার।
কেমন আছে কেকেআর :প্রথম ম্যাচে হেরে কলকাতা নাইট রাইডার্স শিবির এখন অনেকটাই ব্যাকফুটে। যদিও গত বুধবার ছিল তাদের প্রথম ম্যাচ। কিন্তু হারটা? এবারের আইপিএলে এটিও এখন পর্যন্ত বড় হারের লজ্জা। চেন্নাই হেরেছিল তবে তা অনেকটাই সম্মানজনক। ২১৭ রানের বিপরীতে তারা তুলেছিল ২০০রান। ওভাার প্রতি রানের প্রয়োজন ছিল ১০.৮৫ ওরা করেছিল ওভার প্রতি ১০করে। আর শাহরুখের কলকাতা! কেকেআর মাঝ দরিয়ায় তরী ডুবিয়ে শুরু করল তাদের মিশন। তাই ক্রিকেট বিশ্লেষকদের মতে, একাধিক বিভাগে উন্নতির এখনও দরকার রয়েছে কলকাতার। টুর্নামেন্ট যত গড়াবে, নাইটরাও খেলায় নিশ্চয় আরও উন্নতি ঘটাবে। এ দিন দেখা গেল না রাসেল-ম্যানিয়া। আকাশছোঁয়া দরে কলকাতা শিবিরে আসা প্যাট কামিন্সও ম্যাজিক দেখাতে পারলেন না। উল্টে ব্যাট হাতে কলকাতার বোলারদের শাসন করলেন মুম্বাই অধিনায়ক । মুম্বাই যেখানে ২০ ওভারে করে ৫ উইকেটে ১৯৫ রান, সেখানে কেকে আর গুটিয়ে যায় ৯ উইকেটে ১৪৬ রানে।
কেকেআরের টস ভাগ্য আর বিড়ম্বনার হার : গতবুধবার আবু ধাবিতে টস জিতে প্রথমে ফিল্ডিং করার সিদ্ধান্ত নেন কলকাতা অধিনায়ক দীনেশ কার্তিক। একটা সময়ে মুম্বাই এত মসৃণ ভাবে এগোচ্ছিল, তাতে মনে হচ্ছিল চার বারের আইপিএল চ্যাম্পিয়নরা হয়তো ২২০-র কাছাকাছি পৌঁছে যাবে। কিন্তু মাভির বলে রোহিত আউট হওয়ার পরে মুম্বইয়ের রান তোলার গতি কমে যায়। কিন্তু ১৯৫ রানও কম নয় টি টোয়েন্টি ক্রিকেটে। আর এই রান তাড়া করার সময়ে শুরু থেকে যে গতিতে রান তুলতে হয়, তা পারেনি কলকাতা। কলকাতার ওপেনার শুবমান গিলকে (৭) শুরুতেই ফেরান বোল্ট।প্যাটিনসনকে মারতে গিয়ে আউট হন সুনীল নারিন (৯)।কার্তিক ও নীতীশ রাণা ইনিংস গোছানোর কাজ করছিলেন। রাহুল চহারের বলে এলবিডব্লিউ হন কার্তিক (৩০) । নীতীশ রানা ফেরেন ২৪ রানে।এক ওভারে লেগ কাটারে রাসেল (১১) ও অফ কাটারে মর্গ্যানকে (১৬) আউট করে ম্যাচের রাশ রোহিতের হাতে তুলে দেন বুমরাহ। বল হাতে হতাশ করলেও ব্যাট করতে নেমে প্যাট কামিন্স ১২ বলে ৩৩ রান করেন। মারেন চারটি ছক্কা। তিনি মারমুখী ব্যাটিং করায় কেকেআর-এর রান কিছুটা ভদ্রস্থ দেখায়।
দীনেশ কাতির্কের আকাশে কালো মেঘ! : ফের মুম্বইয়ের কাছে হার। নিজেদের প্রথম ম্যাচেই বড় ব্যবধানে হেরে বসল কলকাতা নাইট রাইডার্স। মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স জিতল ৪৯ রানে। ২৬ বারের সাক্ষাতে মুম্বইয়ের জয় দাঁড়াল ২০ ম্যাচে। আর কলকাতার ৬। মুম্বইয়ের বিরুদ্ধে শেষ ১০ ম্যাচে ৯ টিতে হার কলকাতার। ১৯৬ রানের জবাবে কলকাতার শুরুটা ছিল জঘন্য।প্রথম ম্যাচে অনেক প্রশ্ন তুলে দিয়ে গেল। বোলাররা দিলেন অতিরিক্ত ১৪ রান। শৃঙ্খলা রাখতে পারলেন আর কই! সবচেয়ে বড় কথা ব্যাটিং তুলে দিল অনেক প্রশ্ন। ভুল না শোধরাতে পারলে আগামী ম্যাচগুলোতেও মাথা চাপড়াতে হবে কিং খানের দলকে। কার্তিকের অধিনায়কত্বে নতুনত্ব কিছু দেখা গেল না। চাপের মাঝে একের পর এক ভুল। এরকম চলতে থাকলে মর্গ্যানর অধিনায়ক হওয়া সময়ের অপেক্ষা।