প্রকাশ: মঙ্গলবার, ২২ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৬:৪৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বিশ্বে করোনাভাইরাস সংক্রমিত দেশগুলোর মধ্যে ১৫তম দেশ হিসেবে বাংলাদেশে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্তের সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ অতিক্রম করেছে। আসন্ন শীত মৌসুমে করোনার প্রভাব বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ওই প্রভাব মোকাবিলায় তিনি স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্নিষ্ট বিভাগ ও মন্ত্রণালয়কে যথাযথ প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার পরপরই স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। গতকাল স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের নেতৃত্বে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বৈঠক করেছেন। এর আগে এক ভার্চুয়াল বৈঠকে জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটিও দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা দ্বিতীয় দফার সংক্রমণ প্রতিরোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা বলেছেন, প্রথম দফার সংক্রমণ সামাল দিতে গিয়ে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনার যেসব বিষয়ে ত্রুটি ধরা পড়েছে তা দ্রুত সংশোধন করতে হবে। বিশেষ করে নমুনা পরীক্ষা থেকে শুরু করে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা দ্রুততার সঙ্গে গুণগত মানে উন্নীত করতে হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে জোড়ালো প্রস্তুতি প্রয়োজন :বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য ও ভাইরোলজিস্ট অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম সমকালকে বলেন, পরপর তিন দিন সংক্রমণের হার আগের তুলনায় কমেছে বলে আত্মতুষ্টিতে ভুগে লাভ নেই। সংক্রমণের হার কমছে, জানার পর অনেকে স্বাভাবিকভাবে চলাফেরা শুরু করতে পারে। এটি হলে বিপদ আরও বাড়বে। বিশ্বের অনেক দেশে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ ঘটেছে এবং তা প্রথম দফার চেয়ে ভয়াবহ। সুতরাং সেই শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাবে না। এজন্য এখন থেকেই প্রস্তুতি নিতে হবে। শীত মৌসুমে সাধারণত রেসপাইরেটরির রোগ বেশি লক্ষ্য করা যায়। করোনা আক্রান্ত ব্যক্তির রেসপাইরেটরির রোগ থাকলে তা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। সুতরাং পদক্ষেপ নিতে হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের সাবেক ডিন অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল্লাহ সমকালকে বলেন, কয়েক সপ্তাহ ধরে করোনা সংক্রমণের হার নিম্নমুখী। তবে এই হার এখনও স্বস্তিকর অবস্থায় পৌঁছায়নি। সম্প্রতি কিছু হাসপাতালের শয্যা খালি থাকছে। অন্যদিকে অন্যান্য রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। অন্যান্য রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে কভিড-১৯ হাসপাতালের অব্যবহূত শয্যা সংখ্যা সংকোচনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য বিভাগের আরও চিন্তাভাবনা করা প্রয়োজন। কারণ করোনার সংক্রমণ এখনও শেষ হয়নি। দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের শঙ্কা রয়েছে। সুতরাং কভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলো পুরোপুরি বন্ধ না করে ভবিষ্যতে প্রয়োজনে যেন দ্রুততার সঙ্গে চালু করা যায় সেই প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে।
ডা. আব্দুল্লাহ আরও বলেন, টিকা উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী চেষ্টা চলছে। কবে নাগাদ ওই টিকা পাওয়া যাবে, তা এখনও নিশ্চিত হওয়া যায়নি। লকডাউন জীবিকার স্বার্থে সম্ভব নয়। সুতরাং সঠিকভাবে মাস্ক পরা, সাবান দিয়ে বারবার হাত ধোয়া এবং সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ বিষয়ে জনসাধারণকে আরও সচেতন ও সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য সচেতনতামূলক কার্যক্রম জোরদার করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণ প্রতিরোধে আগাম প্রস্তুতির পরামর্শ দিয়েছেন জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্যরাও। কমিটির চেয়ারপারসন অধ্যাপক ডা. মো. সহিদুল্লাহ বলেন, কভিড-১৯ সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে চ্যালেঞ্জ থাকলেও বর্তমানে পরীক্ষার সক্ষমতা বৃদ্ধির পাশাপাশি হাসপাতালের সেবার পরিধি ও মান উন্নয়ন করা হয়েছে। এর পরও যেসব বিষয়ে ঘাটতি রয়েছে, তা পূরণের উদ্যোগ নিতে হবে। অনেক দেশে দ্বিতীয় দফায় মারাত্মক সংক্রমণ লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বিভিন্ন দেশের সঙ্গে যোগযোগের পাশাপাশি দেশের অভ্যন্তরেও সবকিছু পুরোপুরি চালু হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়েও জনসাধারণের মধ্যে এক ধরনের শৈথিল্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সব ক'টি কারণে দ্বিতীয় দফায় সংক্রমণের আশঙ্কা রয়েছে। সেই সংক্রমণ প্রতিরোধের পাশাপাশি স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে এখনই করণীয় বিষয়ে রোডম্যাপ প্রস্তুত করে সে অনুযায়ী পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে বলে মনে করেন তিনি।