ড. কাজী এরতেজা হাসান
ইতিহাস আজীবন কথা বলে। ইতিহাস মানুষকে ভাবায়, তাড়িত করে। কিছু মানুষের জন্ম এবং কর্ম কালক্রমে রূপ নেয় ইতিহাসে। সেসব ঘটনাই ইতিহাসে স্থান পায়, যা কিছু ভালো, যা কিছু প্রথম, যা কিছু মানবসভ্যতার অভিশাপ-আশীর্বাদ।
তাই ইতিহাসের দিনপঞ্জিতে ১৬ সেপ্টম্বরও গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৬ সেপ্টেম্বর টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকীর জন্মদিন। ব্রিটেনের লেবার পার্টি এমপি, স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি, বিশ্বশান্তির অগ্রদূত, ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার, গনতন্ত্রের মানসকন্যা, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার ভগ্নিকণ্যা ও শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকীর জন্মদিন আজ।
টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকী হলো একজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেবার পার্টি এবং কো-অপারেটিপ পার্টির রাজনীতিবিদ। তিনি ২০১৫ সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যামস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে পার্লামেন্ট সদস্য নির্বাচিত হয়েছে। এর পূর্বে সে রিজেন্ট পার্কের কাউন্সিলর এবং ২০১০ সালে ক্যামডেন কাউন্সিলের কালচার অ্যান্ড কমিউনিটির সদস্য ছিলেন। সিদ্দিকী ১৯৮২ সালে লন্ডনের সেন্ট হেলিয়ার হাসপাতালে জন্মগ্রহণ করে।
বঙ্গবন্ধু পরিবারের অহঙ্কার টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিকী মাত্র ৩৮ বছর বয়সে তিনি বিশ্ববাসীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন কেবল নিজের যোগ্যতা দিয়ে। বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ লেবার পার্টির এই রাজনীতিবিদ তারুণ্যের প্রদীপ্ত শিখা। শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকের মেয়ে টিউলিপ সিদ্দিক ১৯৮২ সালে যুক্তরাজ্যের লন্ডনে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট থেকেই তাঁর মা শেখ রেহানা নিদারুণ দুর্দশার মধ্যে পড়ে বড় বোন শেখ হাসিনাসহ এক দেশ থেকে অন্য দেশে আশ্রয়ের সন্ধানে ঘুরেছেন। তারপর একাকী তিনি দিল্লি থেকে ১৯৭৬ সালে লন্ডনে পৌঁছান এবং ১৯৭৭ সালে লন্ডনে অবস্থানরত ড. শফিক সিদ্দিককে বিবাহ করেন। সেসময় টিউলিপের রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী মায়ের চাকরি খোঁজা, বেঁচে থাকার জন্য সংগ্রাম করা আর অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার দাবি’র লড়াই মিলেমিশে একাকার ছিল। জন্মের পর বড় হতে থাকা টিউলিপ পরদেশে আশ্রিত জীবনের বাস্তবতা পর্যবেক্ষণ করেছেন নিবিড়ভাবে। বঙ্গবন্ধুর রক্তধারা তাঁকে আদর্শবাদী রাজনীতি চর্চায় উৎসাহী করেছে। মাতামহ বঙ্গবন্ধু যেমন পাকিস্তান আমলে প্রবল প্রতিকূল অবস্থার মধ্য দিয়ে নিজেকে জনগণের নেতায় পরিণত করেছিলেন; অপরদিকে খালা শেখ হাসিনা যেমন বাংলাদেশে বারবার হত্যার সম্মুখীন হয়েও নিজেকে জননেত্রীতে পরিণত করেছেন; তেমনি আশ্রিত জীবনের দুঃখ-কষ্ট জয় করে টিউলিপ হয়ে উঠেছেন ফিনিক্স পাখি। বঙ্গবন্ধুর খুনিচক্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে নিজে গৌরবান্বিত রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছেন; তেমনি বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে মর্যাদার সঙ্গে তুলে ধরেছেন। পিতামাতার সঙ্গে টিউলিপের শৈশব কেটেছে বাংলাদেশ, ভারত ও সিঙ্গাপুরে। ১৫ বছর বয়স থেকে তিনি হ্যাম্পস্টিড ও কিলবার্নে বসবাস করছেন। ওই এলাকায় স্কুলে পড়েছেন ও কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন। লন্ডনের কিংস কলেজ থেকে পলিটিক্স, পলিসি ও গভর্নমেন্ট বিষয়ে তিনি স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। মাত্র ১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টির সদস্য হওয়া টিউলিপ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রেটার লন্ডন অথরিটি এবং সেইভ দ্য চিলড্রেনের সঙ্গেও কাজ করেছেন। তিনি ২০১৫ সালের ৭ মে অনুষ্ঠিত যুক্তরাজ্যের সাধারণ নির্বাচনে লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন নির্বাচনী এলাকায় লেবার পার্টির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে বিজয়ী হন। ২০১৫ সালে এমপি হওয়ার আগে তিনি রিজেন্ট পার্কের কাউন্সিলর এবং ২০১০ সাল থেকে চার বছর ক্যামডেন কাউন্সিলের কালচার অ্যান্ড কমিউনিটির সদস্য ছিলেন। মূলত ২০১৫ সালে একই দল থেকে তিনজন বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত নারী বিজয়ী হন তার মধ্যে টিউলিপ ছিলেন ব্যতিক্রমী। তবে ব্রিটিশ এমপি রুশনারা আলী ও রূপা হকও আমাদের অহঙ্কার।
প্রথমবার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে জয়ী হওয়া টিউলিপকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। ব্রিটেনের সাধারণ নির্বাচনে টানা তৃতীয়বারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে ছায়ামন্ত্রী হলেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড ও কিলবার্ন থেকে নির্বাচিত এই বাঙালি এমপি লেবার পার্টির ছায়া মন্ত্রীসভার স্থান পেয়ে যান।
‘ব্রিটেনের ৫৮ তম সাধারণ নির্বাচনে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসন থেকে তৃতীয়বারের মতো এমপি পদে বিজয়ী হয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি, শেখ রেহানা ও শফিক সিদ্দিকীর বড় মেয়ে ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগ্নি টিউলিপ।’
‘এর আগে পরপর দুইবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধুর নাতনি টিউলিপ রেজওয়ানা সিদ্দিক। লন্ডনের হ্যামপস্টেড ও কিলবার্ন আসন থেকে এবার তৃতীয়বারের মতো নির্বাচনে অংশ নিলেন তিনি। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, পূর্ব ইউরোপীয় ও মুসলিম ভোটারদের সমর্থন টিউলিপের জয়ে ইতিবাচক ভূমিকা রেখেছে।
আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ৭৪ এ পদার্পণ করবেন এ মাসের ২৮ তারিখ। বঙ্গবন্ধুর তৃতীয় প্রজন্মকে ধীরে ধীরে দলীয় রাজনীতিতে সক্রিয় করা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন অনেকে। শেখ হাসিনা নিজেও জাতির জনকের তৃতীয় প্রজন্মকে রাজনীতির মাঠে সক্রিয় করতে চান তিনি। হাইকমান্ড থেকে তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও জাতির জনকের তৃতীয় প্রজন্মকে রাজনীতিতে সক্রিয় দেখতে চান। এ লক্ষ্যে তৃণমূল থেকে প্রধানমন্ত্রীর ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ হাসিনার ছোট বোন শেখ রেহানা, তার ছেলে রেদওয়ান সিদ্দিকী ববিকে মোটামুটি সক্রিয় দেখা গেছে। তবে তারা প্রচারের আলোতে না এসে দেশের ভালোর জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। শেখ রেহানার কন্যা টিউলিপ সিদ্দিকী ব্রিটিশ পার্লামেন্টের সদস্য হওয়ায় তিনি বাংলাদেশের রাজনীতিতে সরাসরি কোনো ভূমিকা পালন না করলেও মায়ের মতোই বহির্বিশ্বে বাংলাদেশকে আরো সমুন্নত করতে কাজ করে যাচ্ছেন। তবে ব্রিটেন নয়, বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাকে সক্রিয় দেখতে চান শেখ হাসিনা। ইংল্যান্ডে এক সাক্ষাৎকারে টিউলিপ নিজেই এ তথ্য জানিয়েছেন। এসব রাজনীতির বাইরে এসে দুই সন্তানের জননী টিউলিপ সিদ্দিকী একজন মানবিক, নিরহংকারী মানুষ৷ সাদাকে সাদা এবং কালোকে কালো বলার সৎ সাহস নিয়ে তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন দুর্বার গতিতে। তার ৩৮ তম জন্মদিনে এটাই কামনা করি, বঙ্গবন্ধুর রক্তের উত্তরাধিকার হিসাবে টিউলিপ সিদ্দিকী যেমম বিদেশে বাংলাদেশের নাম উজ্জ্বল করে নিজেকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছেন, সেই ধারা যেন সারাজীবন অব্যাহত থাকে। টিউলিপ সিদ্দিকী যেন একটি ফুল যে ফুল গৌরবে সৌরভে আমাদের সব সময় গর্বিত করবেন। তার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করছি। শুভ জন্মদিন টিউলিপ সিদ্দিকী
লেখক:
সম্পাদক ও প্রকাশক, দৈনিক ভোরের পাতা ও দ্যা পিপলস টাইমস
পরিচালক, এফবিসিসিআই
প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি, ইরান-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ