ক্যাথি ক্রেসওয়েল হচ্ছেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভেলপমেন্টাল ক্লিনিকাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক। তিনি বলছেন, "স্কুলের চাপ যেহেতু এখন নেই, তাই কেউ কেউ তাদের জীবন নিয়ে হিমসিম খাচ্ছে, কেউ কেউ আবার বেশ ভালোই করছে।"
প্রফেসর ক্রেসওয়েল করোনাভাইরাস মহামারি শুরুর পর যে লকডাউন জারি করা হয়, তার প্রথম মাসে শিশুদের এবং তাদের বাবা-মার ওপর একটি সমীক্ষা চালান। এতে তিনি দেখেছেন, প্রাথমিক স্কুলের শিশুদের মধ্যে দুশ্চিন্তা, নিরানন্দ এবং মন খারাপ থাকার ব্যাপারগুলো বেড়ে গেছে।
তবে মাধ্যমিক স্কুলের ছেলে-মেয়েদের বেলায় এরকম আবেগজাত সমস্যা কম দেখা গেছে। এরা বলেছে, তাদের মনে বা ব্যবহারে সেরকম কোন পরিবর্তন ঘটেনি।
তেরএবং ১৪ বছর বয়সীদের ওপর চালানো আরেকটি জরিপে এটার প্রতিফলন দেখা গেছে। এই জরিপে দেখা যায়, গত অক্টোবরে ছেলে-মেয়েরা যতটা দুশ্চিন্তায় ভুগতো, লকডাউনের মধ্যে তাদের মধ্যে ততটা দুশ্চিন্তা ছিল না। এর মানে হচ্ছে, বয়সভেদে শিশুদের মধ্যে দুশ্চিন্তায় ভোগার ব্যাপক তারতম্য ঘটে।
দুশ্চিন্তায় ভোগা শিশুদের এবং তরুণ ছেলে-মেয়েদের সাহায্য করতে এনএইচএস পাঁচটি পরামর্শ দিচ্ছে অভিভাবকদের:
ওদের কথা শুনুন: ওরা কেমন আছে জিজ্ঞেস করুন নিয়মিত, যাতে তারা তাদের অনুভূতি সম্পর্কে কথা বলতে অভ্যস্ত হয়ে উঠে
তাদের জীবনের সঙ্গে যুক্ত থাকুন: তাদের ব্যাপারে এবং যেসব বিষয় তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ, তা নিয়ে আগ্রহ দেখান।
একটি ইতিবাচক রুটিন মানায় উৎসাহ দিন: তাদের জন্য ইতিবাচক রোল মডেল হয়ে উঠুন। নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে যাওয়া, স্বাস্থ্য সম্মত খাবার খাওয়া এবং শরীরচর্চা, খেলাধূলায় অংশ নেয়ায় উৎসাহ দিন।
তাদের আগ্রহে উৎসাহ দিন: তারা যাতে সক্রিয় থাকে, সৃষ্টিশীল থাকে এবং নতুন নতুন জিনিস শেখে এবং একটি টিমের সঙ্গে মিলে এসবে অংশ নিতে পারে, সেটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য।
ওদের কথাকে গুরুত্ব দিন: ওরা যা বলে, সেটাকে মূল্য দিন। কঠিন আবেগজড়িত বিষয় যাতে তারা মোকাবেলা করতে পারে, সেজন্যে তাদের সাহায্য করুন।
কীভাবে মানসিক দুশ্চিন্তা শুরু হয়
যে কোন কিছু থেকেই মানসিক দুশ্চিন্তার শুরু হতে পারে। স্বাস্থ্য বা টাকা-কড়ি থেকে শুরু করে কর্মক্ষেত্রে বা স্কুলে কোন পরিবর্তন। কারও সঙ্গে সম্পর্কও এর কারণ হতে পারে। এর যে কোনটাই একটা গভীর দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
করোনাভাইরাস মহামারির সময় মানসিক দুশ্চিন্তার এরকম অনেক সম্ভাব্য কারণ থাকতে পারে। যেমন ভাইরাস নিয়ে ভয়, বাইরে যাওয়া নিয়ে ভয়, অন্যদের করোনাভাইরাস সংক্রমিত করার ভয়, মাস্ক পরা কিংবা স্বাভাবিক জীবনে ফিরে যাওয়া- এরকম হাজারটা চিন্তার সঙ্গে ভবিষ্যতে কী অবস্থা দাঁড়াবে সেই চিন্তা তো আছেই।
এসব দুশ্চিন্তাকে করোনা-অ্যাংজাইটি বলে নাম দিয়েছে দাতব্য সংস্থা অ্যাংজাইটি ইউকে।
তারা বলছে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের পর থেকে তাদের হেল্পলাইনে সাহায্য চেয়ে আসা কলের সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে।
এখন যারা সাহায্য চেয়ে কল করে, তাদের সমস্যাগুলো স্বাভাবিক সময়ের সমস্যার চেয়ে অনেক বেশি জটিল। কলগুলো অনেক দীর্ঘ, বলছে এই সংস্থাটি।
মানসিক রোগ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, লকডাউন এবং সোশ্যাল ডিসট্যান্সিং মেনে চলার নানা বিধিনিষেধ মানুষের আগের রুটিনে অনেক বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। তারা তাদের পরিবার এবং বন্ধুদের নিয়মিত দেখতে যেতে পারছে না। এর ফলে মানসিক দুশ্চিন্তা যারা ভুগছেন, তার অবস্থা আরও খারাপ দিকে মোড় নিতে পারে।
এর পাশাপাশি করোনাভাইরাসের ভয়ে অনেকে এই মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য কারও সাহায্যও চাইছে না। এতে করে অনেকের অবস্থা গুরুতর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
"কেউ যদি ভালো বোধ না করেন, তাহলে এই করোনাভাইরাস মহামারির মধ্যেও কিন্তু তিনি সাহায্য চাইতে পারেন, বলছেন রয়্যাল কলেজ অব সাইক্রিয়াট্রিস্টের ড: বিলি বোলান্ড।
"যদি আপনার কোন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকে, দয়া করে আপনার ডাক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করুন। মানসিক স্বাস্থ্য সেবা যেটা আছে, সেটাকে ব্যবহার করুন। আপনার মানসিক স্বাস্থ্য সংকটের জন্য এনএইচএসের ১১১ অনলাইন বা টেলিফোন সার্ভিস ব্যবহার করুন।"
কার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি?
অ্যাংজাইটি বা মানসিক দুশ্চিন্তা খুব হামেশাই ঘটে এমন একটি মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা। আর এখন তো বহু মানুষ তাদের জীবন নিয়ে চিন্তিত।
আপনার জীবনে যা ঘটেছে, হতে পারে সেটা বড় কোন পরিবর্তন বা নিষ্ঠুর কোন ঘটনা- সেটি আপনাকে মানসিক দুশ্চিন্তার দিকে ঠেলে দিতে পারে।
আর কোন মানসিক স্বাস্থ্য সমস্যা থাকলে সেটা আপনাকে যে কোন বিষয়ে খুব দ্রুত দুশ্চিন্তায় ফেলে দিতে পারে। অনেক সময় এই বেশি মানসিক দুশ্চিন্তার কারণ হয়তো উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া আপনার জিন বা বংশগতি।
টিনএজার এবং তরুণরা অনেক সময় বেশি দুশ্চিন্তায় ভোগে। যাদের বিশেষ ধরণের শিক্ষা চাহিদা থাকে বা যারা নিম্ন আয়ের পরিবার থেকে আসা, তারা বেশ ঝুঁকিতে।
তবে বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে, শিশু এবং তরুণরা যে অনেক দীর্ঘ সময় ধরে ক্লাস রুমের বাইরে রয়েছে, তার দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব আসলে কী হবে, সেটা এখনই বলা সম্ভব নয়।
প্রফেসর ক্রেসওয়েল বলেন, "স্কুলের পরিবর্তিত রুটিনের সঙ্গে বা অনিশ্চয়তার সঙ্গে ছেলে-মেয়েরা কীভাবে নিজেদের মানিয়ে নিচ্ছে, সেটার ওপর নজর রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।" সূত্র: বিবিসি বাংলা