#শেখ হাসিনাকে কখনো ক্লান্ত হতে দেখিনি: অধ্যাপক আলী আশরাফ।
#নেত্রী বলেছিলেন,‘তুই কাল আসিস, পোলাও রান্না শিখিয়ে দিবো’: সাবিনা আক্তার তুহিন।
#বাংলাদেশের যা কিছু ভালো, সবকিছুতেই শেখ হাসিনা জড়িত: ফাইয়াজুল হক রাজু।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এখন শুধু বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নন, তিনি এখন বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছেন। অত্যন্ত প্রখর মেধা নিয়ে, প্রজ্ঞা আর নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে পৌঁছে দিয়েছেন। তিনিই আমাদের উন্নয়নের ফিনিক্স পাখি। দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপে এসব কথা বলেন আলোচকরা। মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সংসদ সদস্য এবং সাবেক ডেপুটি স্পিকার অধ্যাপক আলী আশরাফ, ঢাকা মহানগর উত্তর যুব মহিলা লীগের সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য সাবিনা আক্তার তুহিন এবং তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ফাইয়াজুল হক রাজু। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন আহমেদ।
অধ্যাপক আলী আশরাফ বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমতে আমাদের নেত্রী, জাতির জনকের সুযোগ্য কন্যা, জননেত্রী, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের মানুষের উন্নয়নের জন্য বেঁচে আছেন। এই মাসে আমাদের নেত্রী জন্মেছিলেন বলে এই মাসটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ মাস। আমি বক্তব্যের শুরুতেই সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, তার পরিবারের সকল শহীদ এবং কারাগারে শহীদ জাতীয় চার নেতার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছি। তাদের হত্যা করা হয়েছিল, বাংলাদেশের স্বাধীনতা হত্যা করার জন্যই। আজ থেকে ৭৪ বছর আগে বাংলার এক নিভৃত গাঁয়ে টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনার জন্ম হয়েছিল। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর আওয়ামী লীগের তৎকালীন সভাপতি মালেক উদ্দিন উকিলের নেতৃত্বে প্রথম টুঙ্গিপাড়ায় গিয়েছিলাম। দেখছি, কতটা অজোঁপাড়া গ্রাম ছিল এটা। চারদিকে শুধু পানি আর পানি। বঙ্গবন্ধু তার জীবনের বেশির ভাগ সময়ে কারাগারেই থেকেছেন। পুরোনো ঢাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে থাকতেন। অনেক কষ্টের মধ্য দিয়েই তাকে সময় কাটাতে হয়েছে। শৈশব কাল থেকেই কষ্ট করে সময় পার করতে হয়েছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে। ইডেন কলেজে পড়া অবস্থায় ভোটে নির্বাচিত হয়ে ভিপি হয়েছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় প্রতিটি রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে তিনি অগ্রণী ভূমিকায় ছিলেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর লন্ডনে প্রতিবাদ জানিয়ে একটা সভা হয়েছিল। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আমি সেখানে গিয়েছিলাম। সেখানেই আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেখি। সেখানে ব্রিটিশ পার্লামেন্টের ৩০ জন সংসদ সদস্য। আমি সেখানে দীর্ঘ বক্তব্য দিয়েছিলাম। বিট্রিশরা বলেছিল, এই বক্তব্য দেয়ার পর দেশে গেলে আপনার ঝুঁকি আছে। সেদিন রাতে শেখ রেহানার বাসায় গিয়ে মালেক উকিলসহ সবাই মিলে শেখ হাসিনাকে আওয়ামী লীগের সভাপতি হতে বলেছিলাম। ১৯৮১ সালে ১৭ মে তিনি যখন ঢাকায় ফিরেন, তখন ঝড় বৃষ্টি উপেক্ষা করে লাখো মানুষের ঢল নেমেছিল। এরপর তিনি চান্দিনাতে গিয়েছিলেন নির্বাচনী সভায়। তিনি কুমিল্লার সবগুলো উপজেলাতে ঘুরেছেন। কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো নৌকায় চড়ে যেতেন। কখনো তাকে ক্লান্ত হতে দেখিনি। দিনরাত পরিশ্রম করে তিনি আওয়ামী লীগকে তৃণমূল থেকে ঐক্যবদ্ধ করেছেন। আওয়ামী লীগের মধ্যে ভাঙন যারা ধরিয়েছিল, তাদেরকে ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নিয়েছিলেন। আমরা তার পাশে সারাক্ষণ থেকেছি। তখন আমার একটা ছোট্ট গাড়ি ছিল। কি করুণ অবস্থা ছিল। কিন্তু কখনো তাকে কখনো দমে যেতে দেখিনি। আমাদের তৃণমূলের সাথে এমনকি ইউনিয়ন ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদের সাথেও যোগাযোগ রাখেন। ১৯৯১ সালে নির্বাচনে সূক্ষ্ন কারচুপির মাধ্যমে আওয়ামী লীগকে হারিয়ে দিয়েছিল। এছাড়া ১৯৮৬ সালেও আমাদের ক্ষমতায় আসতে দেয়নি এরশাদ। বঙ্গবন্ধুর খুনি কর্নেল রশিদকে সংসদে আনার জন্য পৃষ্ঠপোষকতা করেছে খালেদা জিয়ার বিএনপি। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও পরে আমার বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিল। কিন্তু দেখুন আমাদের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ক্ষমতা গ্রহণ করে শিক্ষাখাতে, বিদ্যুতখাতে অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। এদেশে এখন খাদ্য ঘাটতি নেই। দেশে অনেক মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। দারিদ্রতার হার ২০ শতাংশের নিচে নেমে এসেছে। বছরের শুরুতে নতুন বই তুলে দেয়া, সরকারি প্রাথমিক সব বিদ্যালয় পাকা করা হয়েছে। এরপর ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা, চট্টগ্রামের জনসভায় গুলিসহ বারবার হত্যার চেষ্টা করেছিল শেখ হাসিনাকে। হাওয়া ভবন বানিয়ে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন করেছিল বাংলাদেশকে।
সাবিনা আক্তার তুহিন বলেন, নবাব সিরাজউদৌলা যেদিন আম্রকাননে মীরজাফরের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে পরাজিত হয়েছিলেন, সেদিন স্বাধীন বাংলার সূর্য অস্তমিত হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু এই স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের মহানায়ক হিসাবে জন্মেছিলেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তিনি শুধু দেশ স্বাধীনই করেননি, দেশকে গড়েও তুলেছিলেন। তিনি না থাকলে বাংলাদেশকে এত তাড়াতাড়ি অনেক দেশ স্বীকৃতি দিতো না। তারই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৈশোর থেকে রাজনীতি করে আসছেন। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অত্যন্ত কাছ থেকে দেখেছি। তিনি অত্যন্ত মানবিক। তিনি নিজের শিক্ষককে সম্মান দিতে লাল গালিচা ছেড়ে দিয়েছেন। পা ছুঁয়ে সালাম করেছেন। আইভী আপার মিলাদ মাহফিলে একদিন কথা প্রসঙ্গে বলেছিলাম, আমি সবই রান্না করতে পারি, তবে পোলাও ভালো রান্না করতে পারি না। তখন নেত্রী বলেছিলেন, ‘তুই কাল আসিস, আমি পোলাও রান্না শিখিয়ে দিবো।’ তার সুযোগ্য সন্তান হিসাবে সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়মা ওয়াজেদ পুতুল নিজ নিজ অবস্থানে সফল হয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নিজের সন্তানদের সুসন্তান হিসাবে গড়ে তুলেছেন। অন্যদিকে দেখুন, খালেদা জিয়া তার ছেলেদের কি বানিয়েছে। তারা আদালতে প্রমাণিত দণ্ডিত আসামি। তারা এই দেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছিল দেশকে। সেই কলঙ্ক থেকে মুক্তি দিতেই বাংলাদেশের সরকার প্রধান হয়েছিলেন, আমাদের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনিই বাংলাদেশে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি ঘোষণা করেছেন। জিয়াউর রহমানের পরিবারের অবস্থা কতটা করুণ হয়েছে, তা আপনার সবাই দেখছেন। তারেক রহমান খাম্বার ব্যবসা করে দেশে বিদ্যুতের অবস্থা বারোটা বাজিয়েছিল। এখন বিদ্যুত যায় না, আর সে সময় মাঝে মাঝে বিদ্যুত আসতো। বিএনপি এখন রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ ২১ বছর ক্ষমতার বাইরে ছিল। কিন্তু তৃণমূলের শক্তির কারণে আওয়ামী লীগ সব সময়ই টিকে রয়েছে। জিয়ার পরিবারের অবস্থা মীরজাফরের মতোই হয়েছে। এমন একদিন আসবে যখন মীরজাফরের কবরের মতো জিয়ার কবরেও মানুষ থুতু দিবে। এরপর দেখুন, এই করোনার সময় সমাজের সকল স্তরের মানুষের জন্য প্রণোদনা দিয়ে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি এখন আমাদের ম্যাজিক কন্যা। প্রতিটি খাতে তিনি বিচক্ষণতার পরিচয় দিচ্ছেন। সারের জন্য এদেশে কোনো কৃষককে মরতে হয় না, টেন্ডার নিয়ে মারামারি হয় না, ভর্তি নিয়েও খুন হতো। এসব কিছুই হতো না। প্রশাসনিকভাবে শুধু রাজধানী নয়, সারাদেশে বিকেন্দ্রীকরণ করা হয়েছে।
ফাইয়াজুল হক রাজু বলেন, আমি আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা শেয়ার করছি আপনাদের সাথে। সময়টা ২০০৭ সাল। আমার আব্বা ওই সালেই মারা গেলেন। তখন আব্বাকে মার্কিন দূতাবাস থেকে জানানো হলো, নেত্রীকে গ্রেফতার করা হবে। তখন আব্বা বলেছিলেন, আমার ফোন থেকে নেত্রীর সাথে কথা বলতে। আমি খুব সকালে নেত্রীকে তার ফোনে ফোন করলাম। রাজু বলতেই তিনি আমাকে চিনলেন। নেত্রীকে আমি যখন বলেছিলাম, আপনাকে দুই একদিনের মধ্যে গ্রেপ্তার করা হবে। নেত্রীও বললেন, ‘আমিও শুনেছি। করলে কি আর করার। কিন্তু আমি কার কন্যা, আমার শেঁকড় কতটা শক্তিশালী সেটা জানো।’ এই বলে তিনি ফোন রেখে দিলেন। নেত্রীকে গ্রেপ্তারের পর আমরা নিয়মিত জিল্লুর রহমানের বাসায় নিয়মিত যেতাম। ওই সময় তার জন্মদিনে কোনো আওয়ামী লীগের নেতাকে আমি পাইনি। জিল্লুর রহমান চাচার বাসার সামনে প্যান্ডেল করে হুজুরদের দিয়ে মিলাদের আয়োজন করেছিলাম। এরপরই গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে আমাকে ডাকা হয়েছিল। ব্রিগেডিয়ার বারী আমাকে আকার ইঙ্গিতে হুমকিই দিয়েছিলেন। আজকে একটা কথা বলতেই হয়, তিনিই আমাদের উন্নয়নের ফিনিক্স পাখি। তার হাত ধরেই দেশের সকল উন্নয়ন হচ্ছে। বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে আমরা শেখ হাসিনাকে পেয়েছি। বাংলাদেশের যা কিছু ভালো, সেখানেই শেখ হাসিনা। অনেক ক্ষেত্রে তিনি বঙ্গবন্ধুকেও ছাড়িয়ে গেছেন। তার নেতৃত্বের পাশে থেকে হাতকে আরো শক্তিশালী করাই আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে অনেক মিথ্যাচার হয়েছে। খন্দকার মোশতাক আর জিয়াউর রহমান মিলে এদেশকে পিছিয়ে নিয়েছিল। বিপথগামী সৈন্যরা একাজ করতে পারেনি। এটা ছিল একটা সুপরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড। আমাদের নেত্রী এই বয়সে বলেছিলেন, মুহিত সাহেব যদি এই বয়সে পারেন এমন একটা মন্ত্রণালয় চালাতে। আমি কেন পারবো। তিনি দেশকে যেভাবে সেভাবে দিয়ে যাচ্ছেন, সুস্থ থেকে তিনি আমাদের এভাবেই সেবা দিবেন, এই প্রত্যাশা করি।