বৃহস্পতিবার ২৮ নভেম্বর ২০২৪ ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ছাড়াই ১ কোটি ৩০ লাখ টাকার গাড়ি ক্রয়
বিআইডব্লিউটিয়ের উপপরিচালকের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
আরিফুর রহমান
প্রকাশ: মঙ্গলবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০২০, ৮:১০ পিএম আপডেট: ০৮.০৯.২০২০ ৮:২৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ) এর উপপরিচালক (প্রশাসন) সিরাজুল ইসলাম ভূইয়ার বিরুদ্ধে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ছাড়াই নিজের খেয়ালখুশীমতো ৭ দিনের মধ্যে অন্তত ২ কোটি টাকা দিয়ে ৩টি গাড়ি কেনার অন্তরালে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। পরিচালকের এহেন দুর্নীতির বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের প্রতিমন্ত্রী বরাবর অভিযোগপত্র দাখিল করেছে বিআইডব্লিউটিয়ের এক কর্মকর্তা। 

অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ-ভারতের নৌপ্রটোকলের অধীনে ২০১৯-২০ অর্থবছরে বরাদ্দকৃত অর্থের অব্যয়িত অর্থে  থেকে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে ২টি জিপ গাড়ী ক্রয় করেন পরিচালক সিরাজুল ইসলাম। একটি নিশান এক্সট্রিল- ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮-৭১৫৬, অপরটি হোন্ডাই কোম্পানীর ঢাকা মেট্রো ঘ-১৮-৭১৫৭। নিশান গাড়িটি বর্তমানে বিআইডব্লিউটিয়ের নৌনিট্রা বিভাগের পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম ব্যবহার করলেও হোন্ডাই গাড়িটি পড়ে আছে বিআইডব্লিউটিয়ের যানবাহনপুলের ধুঁেলারস্তুপে। আবার রাজস্বখাতভুক্ত ৫২ আসন বিশিষ্ট একটি স্টাফ বাস পুরাতন দেখিয়ে বিক্রি করে তদস্থলে ৩০ আসন বিশিষ্ট একটি এসিযুক্ত মিনিবাস ৬৯ লাখ টাকায় ক্রয় করেও দুর্নীতি করেছেন।

ভারত-বাংলাদেশ নৌপ্রটোকলের অধিনে কোন গাড়ির বরাদ্দ ছিলো না এবং গাড়ী কেনার বিষয়ে নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয়ের কোন ছাড়পত্র বা পূর্ব অনুমোদন নেয়া হয়নি। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা সিরাজুল ইসলাম নৌপ্রটোকলের অধীনে অব্যয়িত অর্থ ফেরত দেয়া লাগবে বিধায় তড়িঘড়ি করে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন না নিয়ে মাত্র ৭ দিন সময়ের মধ্যে ১ কোটি ৩০ লাখ টাকা দিয়ে দুটি জিপ গাড়ী ক্রয় করেন। গত ২৩ জুন-২০২০ থেকে ৩০ জুন-২০২০ সময়ে মধ্যে গাড়ি কেনার যাবতীয় কাজ সম্পন্ন করেন।  যেখানে টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতেই সময় লাগে নুন্যতম ১ মাস, সেখানে এতো অল্প সময়ে কিভাবে গাড়িগুলো কেনা হলো এমন প্রশ্নের উত্তরে বিআইডব্লিউটিয়ের কর্মকর্তাদের অনেকেই বলেছেন এটা স্পষ্টঃত দুর্নীতি। 

অনুসন্ধানে জানা গেছে, অব্যয়িত অর্থ ফেরত দেয়ার ভয়ে কোন প্রকার নিয়ম নীতির তোয়াক্কা না করে এবং নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন ছাড়া একক ক্ষমতাবলে গাড়ি দুটি ক্রয় করেন তিনি। তবে গাড়ি ক্রয় করে এখন কিছুটা বেকায়দায় পড়েছেন এই কর্মকর্তা।নিজের অপরাধ ঢাকতে নৌপরিবহন মন্ত্রনালয়ের অনুমোদন  পেতে দৌড়ঝাপ শুরু করেছেন পুরোদমে। 
তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে ‘বিআইডব্লিউটিএ’র উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম ভূইয়া ভোরের পাতাকে বলেন, ‘আমরা মন্ত্রনালয়ে চিঠি দিয়েছি গাড়ি কেনার জন্য। কিন্তু এখনো কোন অনুমোদন আমাদের দেয় নেই।’ তাহলে যে দুটি গাড়ি কিনেছেন সেটা কিভাবে কিনলেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমাদের অধিদফতরে অর্থ বছরের বাজেটে যে টাকা ছিল তা অনেকাংশ ব্যবহৃত হয়নি। তাই আমরা সেই টাকা থেকেই গাড়ি কিনে ফেলেছি।

মন্ত্রনালয়কে অবগত না করে গাড়ি কেনা হল কিভাবে জানতে চাইলে তিনি আরো বলেন, ‘এটা আমাদের ভুল হয়েছে। তবে কিছু দিনের মধ্যেই অনুমোদন নিয়ে নিব।’ 

এদিকে গত ২ জুন ২০২০ তারিখে বিআইডব্লিউটিএ ১৮.১১.০০০০-১৯/১৯৩৩ স্মারক এ নৌপ্রোটকলের অধিনে দুটি জীপগাড়ি ক্রয়ের ছাড়পত্রের জন্য মন্ত্রনালয়ে চিঠি প্রেরণ করলে জবাবে ২৬ জুলাই ২০২০ অর্থাৎ ৫৪ দিন পরে নৌ-পরিবহন মন্ত্রনালয় টিএ শাখার উপসচিব আনোয়ারুল ইসলাম ১৮.০০-৩০/১ নং স্মারকে বিআইডব্লিউটিয়ের সরঞ্জামাদি ক্রয়ের তালিকায় গাড়ির শূন্য পদ আছে কি না জানতে চান। তখন উপপরিচালক সিরাজুল ইসলাম স্বাক্ষর করে তার অধিনস্ত উপসহকারী প্রকৌশলী (যানবাহন)কে মার্ক করেন। কিন্তু নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় থেকে ছাড়পত্র বা অনুমোদন আসার আগেই অর্থাৎ ২৩ থেকে ৩০ জুন মাত্র ৬ দিনের মধ্যে জিপ গাড়ি দুটি কেনার সময় সরকার নির্ধারিত  ওপেন টেন্ডার মেথড ‘ওটিএম’ পদ্ধতি অনুসরন করা হয়নি।  এক্ষেত্রে তিনি ডিরেক্ট প্রকিউরম্যান্ট মেথড ‘ডিপিএম’ পদ্ধতিতে তা ক্রয় করেন। তবে সরকারী ক্রয় নীতির পরিপন্থি হওয়ায় এখনো এই গাড়ি দুটির অনুমোদন মন্ত্রনালয় কর্তৃক গৃহীত হয়নি।   

আবার, গত ২২ জুন ২০২০ বিআইডব্লিউটিয়ের রাজস্বখাত থেকে একটি স্টাফ বাস ক্রয়ের ছাড়পত্রের জন্য মন্ত্রনালয়কে চিঠি দিয়ে ‘ডিপিএম’ পদ্ধতিতে ৩০ আসন বিশিষ্ট একটি মিনি এসিবাস ৭৯ লাখ টাকায় মাত্র ৪ দিন সময়ের মধ্যে ক্রয় করে ৩০ জুন ২০২০ এর মধ্যে বিল পরিশোধ করেন। যা গাড়ী ক্রয়ের যাবতীয় প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত তার অধিনস্ত যানবাহন শাখার কম্পিউটারে সংরক্ষিত তথ্য ও সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রমান পাওয়া যাবে।

এদিকে, নৌপরিবহন মন্ত্রনালয় থেকে ২৬ জুলাই ২০২০ প্রেরিত চিঠিতে বলা আছে অর্থ মন্ত্রনালয় কর্তৃক ৮ জুলাই ২০২০ তারিখে জারিকৃত পরিপত্রে আগামী ৩১ ডিসেম্বর ২০২০ পর্যন্ত সকল সরকারী, আধা সরকারী, স্বায়ত্বশাষিত ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের পরিচালন ও উন্নয়ন ব্যয়ের আওতায় সকল প্রকার নতুন/প্রতিস্থাপন হিসেবে যানবাহন ক্রয় সম্পূর্নরূপে নিষেধ রয়েছে। তারপরেও ২০১৯-২০ অর্থবছরের একেবারে শেষ সপ্তাহে এসে কিভাবে সরকারের ২ কোটি টাকা খরচ করে  এই কর্মকর্তা কিভাবে ৩টি গাড়ি ক্রয় করলেন তা নিয়ে দেখা দিয়েছে নানান প্রশ্ন। যেমন বিআইডব্লিউটিয়ের বোর্ড মিটিংয়ের সিদ্ধান্ত গাড়ি কেনার প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা, এটা আবার মন্ত্রনালয়কে জানিয়ে সেখান থেকে ছাড়পত্র গ্রহন করা, টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা, সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান থেকে কোটেশন অনুসারে গাড়ি বুঝিয়া নেয়া এবং বিল পরিশোধ করা, হিসাবপত্র সংরক্ষণ করা  ইত্যাদি। 

তবে এসব অভিযোগের বিষয়ে নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী ভোরের পাতাকে বলেন, ‘যদি এই রকম কোন অভিযোগ সত্যতা পাওয়া যায় তাহলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’ 

এই বিষয়ে নৌ পরিবহন মন্ত্রনালয়ের সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ্ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের কাছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষ ‘বিআইডব্লিউটিএ’ থেকে গাড়ি কেনার জন্য অনুমোদন চেয়ে একটি চিঠি দিয়েছিলেন কিন্তু আমরা কোন অনুমোদন দিই নি। এখন তারা যদি আমাদের না জানিয়েই গাড়ি কিনে ফেলেন তাহলে এখন সকল দায়দায়িত্ব তারা বহন করবেন।’

এই বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ সচিব মুহাম্মদ আবু জাফর হাওলাদার সঙ্গে তার অফিসে কক্ষে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। একাধিকবার মুঠোফোন খুদেবার্তা পাঠালে তারও কোন ফিরতি জবাব পাওয়া যায়নি।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]