ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্চারামপুরে আলোচিত শিফা আক্তার (১৪) এবং তার ভাই মেহেদী হাসান কামরুল (১০) হত্যার রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ।
ভগ্নিপতি কামাল হোসেনের দেয়া থাপ্পরের প্রতিশোধ নিতে নিহতদের মামা বাদল মিয়া তাদের দুজনকে গলাকেটে হত্যা করে খাটের নীচে লুকিয়ে রাখে। ঘাতক বাদল মিয়া কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খোদে দাউদপুর গ্রামের মরহুম আবদুর রবের ছেলে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ঘাতক বাদল মিয়াকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জাহিদ হোসাইনের আদালতে সোপর্দ করে পুলিশ। এসময় বাদল মিয়া ভাগ্নি ও ভাগ্নেকে হত্যার কথা স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী প্রদান করেন। আদালত বাদল মিয়াকে কারাগারে প্রেরণের নির্দেশ দেন।
এর আগে গত মঙ্গলবার মধ্যরাতে ঢাকার সবুজবাগ থানা এলাকা থেকে বাদল মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। এর আগে পুলিশের কাছেও ভাগ্নি-ভাগ্নেকে গলাকেটে খুন করার কথা স্বীকার করে বাদল মিয়া।
বৃহস্পতিবার আদালত সূত্রে এবং বুধবার রাতে জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার (ডিএসবি) প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ ঘটনায় নিহতদের বাবা কামাল হোসেন বুধবার রাতে বাদল মিয়াকে আসামি করে বাঞ্চারামপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।
জেলা পুলিশের বিশেষ শাখা (ডিএসবি) থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নিহতদের বাবা কামাল হোসেন গত ২৭ বছর ধরে সৌদি প্রবাসী ছিলেন। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে তিনি দেশে চলে আসেন। করোনা সংক্রমণের কারণে তিনি আর সৌদি যেতে পারেননি।
কামাল হোসেনের শ্যালক বাদল মিয়া বাহরাইন প্রবাসী ছিলেন। বাদল মিয়া বাহরাইনে থাকার সময় লড্রির দোকান দেয়ার জন্য ভগ্নিপতি কামাল হোসেনের কাছ থেকে বিভিন্ন সময় ১৩ লাখ টাকা ধার নেয়। ইতিমধ্যেই বাদল মিয়া তার ভগ্নিপতিকে তিন লাখ টাকা পরিশোধও করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে বাদল মিয়াও বাহরাইন থেকে দেশে চলে আসে। পরবর্তীতে করোনা সংক্রমণের জন্য তিনিও বাহরাইন যেতে পারেননি।
এদিকে বাদল মিয়া তার গ্রামে (কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার খোদে দাউদপুর) একটি গোষ্ঠীগত দাঙ্গার ঘটনায় মামলায় আসামি হয়। এ কারণে সম্প্রতি তার বড় বোন হাসিনা আক্তারের বাড়িতে (ভগ্নিপতি কামাল হোসেনের বাড়িতে) আশ্রয় নেন।
এদিকে পাওনা ১০ লাখ টাকার জন্য বাদল মিয়ার সাথে ভগ্নিপতি কামাল হোসেনের মনোমালিন্য চলছিল। এরই জেরে সপ্তাহখানেক আগে বাদলকে থাপ্পর মারেন কামাল হোসেন। এ ঘটনার প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন বাদল মিয়া। গত ২৪ আগস্ট দুপুর আড়াইটার দিকে কামাল হোসেনের ছেলে মেহেদী হাসান কামরুল মামা বাদল মিয়ার রুমে যায়। বাদল তখন রুমে উচ্চস্বরে গান বাজাচ্ছিলেন।
এক পর্যায়ে বাদল ভাগ্নে কামরুলে দুই হাত বেঁধে ফেলে ও পরে তার কাছে থাকা ছুরি দিয়ে গলাকেটে হত্যা করে। লাশ চাদর দিয়ে পেঁচিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে বাদল মিয়া। এদিকে মাগরিবের আযানের পরেও ছেলে কামরুল ঘরে না ফেরায় মা হাসিনা বেগম মেয়ে শিফা আক্তারকে ঘরে রেখে কামরুলকে খুঁজতে বের হন।
পরে শিফা আক্তার ঘর ঝাড়ু দেয়ার জন্য মামা বাদল মিয়ার রুমে ঢোকে। খাটের নিচে ছোট ভাই কামরুলের লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার শুরু করে। এ সময় শিফাকে জোরপূর্বক গোসলখানায় নিয়ে ছুরি দিয়ে একই কায়দায় কলা কেটে লাশ চাদর দিয়ে ঢেকে পাশের রুমের খাটের নিচে লুকিয়ে রাখে বাদল মিয়া।
এদিকে কামরুলকে না পেয়ে তার বাবা ও মা এলাকায় মাইকিং করিয়ে বাড়িতে এসে দেখেন শিফাও নেই। পরে শ্যালক বাদলকে সাথে নিয়ে শিফা ও কামরুলকে খুঁজতে বাঞ্ছারামপুর ফেরিঘাট এলাকায় যান কামাল। এক পর্যায়ে কামালকে কিছু বলেই বাদল মিয়া সেখান থেকে সিএনজি অটোরিকশা করে পালিয়ে যান।
এদিকে কামাল হোসেনের স্ত্রীসহ প্রতিবেশীরা বিভিন্ন স্থানে খুঁজাখুজির পর ঘরে খাটের নীচে কামরুল ও শিফা আক্তারের লাশ দেখতে পায়। এ ঘটনায় নিহতদের বাবা কামাল হোসেন বাদী হয়ে বুধবার রাতে বাদল মিয়ার বিরুদ্ধে বাঞ্চারামপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।
এ ব্যাপারে বাঞ্চারামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালাহউদ্দিন চৌধুরী বলেন, গ্রেপ্তারকৃত বাদল মিয়া আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করেছে। তাকে আদালত কারাগারে পাঠানো হয়েছে।