#বঙ্গবন্ধুর পলাতক খুনিদের ফিরিয়ে এনে আমাদের দায় শোধ করতে হবে: মহিউদ্দিন খান আলমগীর।
#জিয়া এবং খালেদা এদেশে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করেছে: কামরুল ইসলাম।
#বাংলাদেশকে রাজনৈতিক নেতৃত্বশূণ্য করার ষড়যন্ত্র করেছিল ওয়ান ইলেভেন সরকার: নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ।
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে লন্ডনে পলাতক তারেক রহমানের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড শাস্তি প্রাপ্য। এছাড়া বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডে কুশীলব হিসাবে জিয়াউর রহমানও জড়িত ছিলেন এটা আত্নস্বীকৃত খুনিদের জবানবন্দিতে প্রমাণিত হয়েছে। তাই কমিশন গঠন করে জিয়াউর রহমানেরও মরোণত্তোর বিচার হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন আলোচকরা।
বুধবার দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপে এ দাবি করেন আলোচকরা। আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর সদস্য, সংসদ সদস্য এবং সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহিউদ্দিন খান আলমগীর, সংসদ সদস্য এবং সাবেক আইন প্রতিমন্ত্রী এ্যাড. কামরুল ইসলাম এবং বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন।
মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, আগস্ট মাস আমাদের শোকের মাস। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পড়াশুনা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। তখন ঘটনাটি শোনার পর আমি স্তব্ধ হয়ে পরেছিলাম। পরদিন আমি বাংলাদেশ সুহৃদ এ্যাডওয়ার্ড কেনেডির বাসায় গিয়েছিলাম কোনো আগাম বার্তা না দিয়েই। তখন তিনি রাতের ড্রেস পরে আমার সামনে এসে হাতে হাত ধরে বলেছিলেন, ‘তোমরা এটা কি করলে, কিভাবে করতে পারলে?’। এ প্রশ্নের জবাব আমি আজো দিতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। কিন্তু এই সংক্রান্ত মামলা দায়ের করতে চেয়েছি ২ অক্টোবর ১৯৯৬ সালে। এরপর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর বিচার কাজ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার হলেও শেখ মনি, আরজু মনি এবং আব্দুর রউফ সেরনিয়াবাতকে হত্যার বিচার আজো হয়নি। এমনকি ১৫ আগস্ট রাতে মোহাম্মদপুরে একজন রিকশাচালককেও হত্যা করা হয়েছিল। তার বিচারও করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পিছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল, তাদেরও বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে একটা কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কিভাবে কারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল, তারা কতটা সুবিধাভোগী হয়েছিল, তাদেরও বিচার করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারীদের মধ্যে কয়েকজনের ফাঁসি হয়েছে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এছাড়া ৪ জন খুনিকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় আমি শেখ হাসিনার সঙ্গে অস্থায়ী মঞ্চে। তখন গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফ সবচে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন মানব ঢাল তৈরি করতে। সেদিন আমরা নিজেদের জীবনের কথা ভাবিনি। আমি তরুণ প্রজন্মের কাছে আহ্বান করতে চাই, যদি আবার কখনো শেখ হাসিনার ওপর এমন আঘাত আসে। তাহলে তার নেতাকর্মীরা একইভাবে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করবে বলে বিশ্বাস করি। আরো একটি বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার নিন্ম আদালতে সম্পন্ন হয়েছে। এই মামলার বিচারকাজে বাঁধা দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। কিন্তু উচ্চ আদালতে এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়। এটা বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষের দাবি। আমি শেষ যে বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই, সেদিন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তারেক রহমানেরও এ মামলায় লঘু বিচার হয়েছে। প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে তারও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু সেদিন রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে যারা জড়িত থেকেও দায়িত্ব পালন করেনি প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বে থেকে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। সর্বশেষ আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের দেশ। এদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এদেশের প্রকৃত মালিক জনগণ। জনগণের কোনো ক্ষতি হোক এমন কিছু করার সুযোগ নেই। সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বলতে চাই, মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে তিনি যে অনুশাসন দিয়ে গেছেন, তার সত্যিকারের অনুসারী হিসাবে আমাদের কাজ করতে হবে।
কামরুল ইসলাম বলেন, আগস্ট মাস মাসেই ষড়যন্ত্রের মাস। দেখুন ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট ছিল পাকিস্তানের স্বাধীনতা দিবস। ঠিক এর পরের দিনই বঙ্গবন্ধুকে হত্যার দিন হিসাবে বেছে নিয়েছিল খুনিরা। আপনারা লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসএই’র প্রতক্ষ্য মদদে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছে। খুনি হিসাবে খন্দকার মোশতাক, কর্ণেল রশিদ, ফারুকদের নাম সামনে এসেছে। কিন্তু নেপথ্যে থেকে জিয়াউর রহমান এই হত্যাকাণ্ডের কলকাঠি নেড়েছিলেন সেটা আত্নস্বীকৃত খুনিদের সাক্ষাতকারে এবং জবানবন্দিতে প্রমাণিত হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সময়ই আগস্টের শেষ দিকে খন্দকার মোশতাক, মাহবুবুল হক চাষী এবং জিয়াউর রহমান পাকিস্তানের কনফেডারেশন করতে ষড়যন্ত্র চালিয়েছিল। ওই কারণে মোশতাককে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছিল এবং জিয়াকে সেক্টর কমান্ডর পদে কয়েকদিন কাজ করতে দেয়া হয়নি। এরপর জিয়া ক্ষমতা গ্রহণের পর মুক্তিযুুদ্ধের বিরোধী শক্তিকে এদেশে রাজনীতি করার সুযোগ দিয়েছে। এমনকি বাংলাদেশ বেতারকে রেডিও বাংলাদেশ করেছিল, জয় বাংলা স্লোগানের পরিবর্তে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ সৃষ্টি করেছিল। মূলত দেশটাকে পাকিস্তানি ভাবধারায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছিল জিয়াউর রহমান। তার স্ত্রী খালেদা জিয়াও একই কাজ করে গেছেন। এমনকি যুদ্ধাপরাধী নিজামীদের মন্ত্রী করে জাতীয় পতাকা তাদের গাড়িতে তুলে দিয়েছিল। এদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধ্বংস করতেই বিএনপি-জামায়াত কাজ করে গেছেন। এদেশে ৭২ এর সংবিধানের চার মূলনীতিকে ভুলণ্ঠিত করেছে খালেদা জিয়ার সরকার। এমনকি সেই ষড়যন্ত্রের ধারাবাহিকতায় ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট পৈশাচিক ঘটনা ঘটিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় এ হামলা চালানো হয়েছিল শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতৃত্বকে হত্যা করার জন্য। আওয়ামী লীগকে নেতৃত্বশূণ্য করার উদ্দেশ্য এমন জঘন্য কাজটি করেছিল। এই গ্রেনেড হামলার সাথেও নেপথ্যে থেকে যারা জড়িত তাদেরও বিচার করতে হবে। আমি একটা কথা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি শেখ হাসিনা কাছেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত থাকবে।
নাজমুল আহসান কলিমউল্লাহ বলেন, একাত্তরের যুদ্ধ চলাকালীন সময়ে তাহের উদ্দিন ঠাকুর এবং খন্দকার মোশতাকরা চেয়েছিল পাকিস্তানের সাথে একটা ঢিলেঢালা কনফেডারেশন ধরে রাখা। বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের দিন খন্দকার মোশতাক তাকে চুম্বন করেছিলেন। তারা একাত্তরে সফল না হয়ে পরবর্তীতে এই ষড়যন্ত্র অব্যাহত রাখে। নিজের আগামসী লেনের বাড়িতে খন্দকার মোশতাক কয়েকধাপে খুনিদের সাথে বৈঠক করেছেন। তার সঙ্গে আন্তর্জাতিক সম্পদ্রায়ের কিছু অংশ নিবিড়ভাবে জড়িত ছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর সৌদি আরব এবং গণচীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছিল। এখানেও একটা ইঙ্গিত বহন করে। এছাড়া ১৬ আগস্ট সকালে ভারতে মার্কিন রাষ্ট্রদূত ইন্দিরা গান্ধীর সাথে দেখা করেছিল। তখন ইন্দিরা গান্ধী স্তম্ভিত হয়ে পরেছিলেন। তখন বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারত যেন হস্তক্ষেপ না করে সে বিষয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর বাংলাদেশের একটি অংশ প্রতিরোধ যোদ্ধা হিসাবে ভারতে গিয়েছিল। সেখান থেকে ফিরে তারা জাতির পিতার হত্যার প্রতিশোধ নিতে যুদ্ধ করেছে। এরপর ৩ নভেম্বর জেলখানায় জাতীয় চার নেতাকে হত্যা, ৭ নভেম্বর অভ্যুত্থানের মাধ্যমে দেশের পট পরিবর্তন হয়েছিল। এরপর জিয়াউর রহমান ক্ষমতা নিলে পাকিস্তান ফেরতদের প্রশাসনে পদায়ন করা হয়েছিল। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সাথেও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র রয়েছে। বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়, মরুভূমিও নয়। বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়েরই অংশ। তাই এখনই আমাদের সকল ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে এগিয়ে যেতে হবে। দেখুন, ওয়ান ইলেভেনের সরকারের সময় রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহমেদ যা করেছিলেন, তা মোটেও জাতির কাম্য ছিল না। সংবিধানের দ্বাদশ সংশোধনীর মাধ্যমে সব দিক না মেনে একই সঙ্গে তিনি রাষ্ট্রপ্রধান এবং সরকার প্রধান হয়েছিলেন। তার হাত ধরেই ওয়ান ইলেভেনের কুশীলবরা সক্রিয় হয়েছিল। আমাদের দেশেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব শূণ্য করার অপচেষ্টাও চালিয়েছিল। এরপর আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাকেও গ্রেপ্তার করার মাধ্যমে দেশকে নেতৃত্বশূণ্য করার ষড়যন্ত্র হয়েছিল। ওয়ান ইলেভেনের সরকারের দুঃশাসন শেষে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।