মহিউদ্দিন খান আলমগীর বলেন, আগস্ট মাস আমাদের শোকের মাস। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু কথা বলতে চাই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট আমি বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে পড়াশুনা করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলাম। তখন ঘটনাটি শোনার পর আমি স্তব্ধ হয়ে পরেছিলাম। পরদিন আমি বাংলাদেশ সুহৃদ এ্যাডওয়ার্ড কেনেডির বাসায় গিয়েছিলাম কোনো আগাম বার্তা না দিয়েই। তখন তিনি রাতের ড্রেস পরে আমার সামনে এসে হাতে হাত ধরে বলেছিলেন, ‘তোমরা এটা কি করলে, কিভাবে করতে পারলে?’। এ প্রশ্নের জবাব আমি আজো দিতে পারি নাই। বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলো ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট। কিন্তু এই সংক্রান্ত মামলা দায়ের করতে চেয়েছি ২ অক্টোবর ১৯৯৬ সালে। এরপর ১৯৯৭ সালের ৩ নভেম্বর বিচার কাজ শুরু হয়। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচার হলেও শেখ মনি, আরজু মনি এবং আব্দুর রউফ সেরনিয়াবাতকে হত্যার বিচার আজো হয়নি। এমনকি ১৫ আগস্ট রাতে মোহাম্মদপুরে একজন রিকশাচালককেও হত্যা করা হয়েছিল। তার বিচারও করতে হবে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পিছনে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে যারা জড়িত ছিল, তাদেরও বিচার করতে হবে। এক্ষেত্রে একটা কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। বঙ্গবন্ধুর খুনিদের কিভাবে কারা রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা করেছিল, তারা কতটা সুবিধাভোগী হয়েছিল, তাদেরও বিচার করতে হবে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যাকারীদের মধ্যে কয়েকজনের ফাঁসি হয়েছে, তাদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এছাড়া ৪ জন খুনিকে বিদেশ থেকে ফিরিয়ে এনে ফাঁসি কার্যকর করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার সময় আমি শেখ হাসিনার সঙ্গে অস্থায়ী মঞ্চে। তখন গ্রেনেড হামলা থেকে রক্ষা করার জন্য ঢাকার সাবেক মেয়র হানিফ সবচে বেশি অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিলেন মানব ঢাল তৈরি করতে। সেদিন আমরা নিজেদের জীবনের কথা ভাবিনি। আমি তরুণ প্রজন্মের কাছে আহ্বান করতে চাই, যদি আবার কখনো শেখ হাসিনার ওপর এমন আঘাত আসে। তাহলে তার নেতাকর্মীরা একইভাবে শেখ হাসিনাকে রক্ষা করবে বলে বিশ্বাস করি। আরো একটি বিষয় আমি উল্লেখ করতে চাই, ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলার বিচার নিন্ম আদালতে সম্পন্ন হয়েছে। এই মামলার বিচারকাজে বাঁধা দিয়েছিল বিএনপি-জামায়াত সরকার। কিন্তু উচ্চ আদালতে এই মামলার বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ করে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এটা শুধু আমাদের দাবি নয়। এটা বাংলাদেশের সকল গণতন্ত্রকামী মানুষের দাবি। আমি শেষ যে বিষয়টি উল্লেখ করতে চাই, সেদিন রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতায় গ্রেনেড হামলা চালানো হয়েছিল। তারেক রহমানেরও এ মামলায় লঘু বিচার হয়েছে। প্রধান ষড়যন্ত্রকারী হিসাবে তারও মৃত্যুদণ্ড দেয়ার দাবি জানাচ্ছি। কিন্তু সেদিন রাষ্ট্র পরিচালনার কাজে যারা জড়িত থেকেও দায়িত্ব পালন করেনি প্রশাসনের বিভিন্ন দায়িত্বে থেকে, তাদেরও বিচারের আওতায় আনতে হবে। সর্বশেষ আমি বলতে চাই, বাংলাদেশ গণতন্ত্রের দেশ। এদেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, এদেশের প্রকৃত মালিক জনগণ। জনগণের কোনো ক্ষতি হোক এমন কিছু করার সুযোগ নেই। সংবিধানের ১৩৩ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী বলতে চাই, মানুষের অধিকার রক্ষা করার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা কর্মচারীদের অবশ্যই দায়িত্বশীল হতে হবে। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশে তিনি যে অনুশাসন দিয়ে গেছেন, তার সত্যিকারের অনুসারী হিসাবে আমাদের কাজ করতে হবে।