বুধবার দুপুরে ধানমন্ডিতে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর আয়োজিত এক বর্ধিত সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
১৫ আগস্ট পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনার কথা তুলে ধরে নানক বলেন: সে সময় আমরা প্রতিবাদের ডাক পাইনি। আমরা প্রতিরোধের ডাক পাইনি। আমরা যুদ্ধের ঘোষণা পাইনি। একটি নেতার অভাবে। সেদিন নেতৃত্বের মধ্যে ভীরুতা, কাপুরুষতা, দোদল্যুমানতা এবং আপোষকামীতার কারণে লাখ লাখ আওয়ামী লীগ যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকার্মীরা হতাশার সাগরে নিমজ্জিত হয়েছে, আহাজারি করেছে।
‘কিন্তু সেই আওয়ামী লীগ, সেই মুজিব আদর্শের কর্মীরা প্রমাণ করে দিল এক-এগারোর সময়।এই নগর আওয়ামী লীগ প্রতিবাদ করেছিলেন, প্রতিরোধ করেছিলেন।’
তিনি আরও বলেন: নেত্রীকে গ্রেফতারের সাথে সাথে আপনারা হুঙ্কার দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছেন। তাই সেই শক্তি এক-এগারোর অপশক্তি; তারা শেখ হাসিনাকে কারারুদ্ধ করে রাখতে পারেনি। মহানগর নেতাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে বলেন, সংগঠনের কোন বিকল্প নেই।
নানক বলেন: মনে রাখতে হবে, ৭৫’র ১৫ আগস্ট যারা ঘটিয়েছিল, একাত্তরে যারা পরাজিত হয়েছিল, আন্তর্জাতিক সাম্রাজ্যবাদ, পাকিস্তানী গোষ্ঠী; তারা চুপ করে বসে নেই। কারণ একাত্তরে যে রাজাকার, আলবদর, আলশামস পরাজিত হয়েছিল তারা চুপ করে বসে ছিল না। আমরা তাদের সেই ষড়যন্ত্রের জালকে ছিন্নভিন্ন করে দিতে পারিনি। সেদিন আমাদের দলের ভিতরে আত্মকলহ ছিল। সেদিন ছিল ভাইয়ের রাজনীতি। আর সেই আত্মকলহ থাকার কারণে আমাদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সেই ক্ষতির ছোবলে জাতিকে অনেক ক্ষতিপূরণ দিতে হয়েছে।
আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এ সদস্য বলেন: দুঃসাহসিক নেত্রী শেখ হাসিনা; অনেকে সন্দেহ ছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা যাবে না? যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হলে, পৃথিবীর অনেক দেশের নাম বলা হতো, তারা নাকি উল্টে-পাল্টিয়ে দেবে? কিন্তু শেখ হাসিনা এমন এক নেত্রী তিনি জনগণের ভিত্তির উপর রাজনীতি করেন।
যোগ করেন: তাই যারা বলেন, নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে আজকে রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠানো যায়নি। তারা আহাম্মকের স্বর্গে বাস করছেন। মির্জা ফখরুল সাহেব; আওয়ামী লীগ সরকার, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার নতজানু পররাষ্ট্রনীতি মানে না বলেই শেখ হাসিনা আজ শুধু বাংলাদেশের নেতা নয়, বিশ্বনেতায় পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে শেখ হাসিনা এখন মধ্যমণিতে পরিণত হয়েছে।
জাহাঙ্গীর কবির নানক মির্জা ফখরুল ইসলামের উদ্দেশে আরও বলেন: আতঙ্কিত হবার কারণ নেই। মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা ১০ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিয়েছে। মানবতার নেত্রী এই ১০ লাখকে সেদিন যদি আশ্রয় না দিতেন তাহলে নাফ নদীতে মানুষগুলির আত্মাহুতি দেয়ার মতো অবস্থা হয়েছিল। সেদিন বিশ্ব মানবতার নেত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে বিশ্ব মানবতার ইতিহাসে এক দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ইনশাল্লাহ, শেখ হাসিনার চৌকষ ও বিচক্ষণ পররাষ্ট্রনীতির কারণে এই রোহিঙ্গারাও ফেরত যাবে। কোন রাজনীতি করার সুযোগ আপনাদের দেয়া হবে না।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন: আমাদের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব রয়েছে, ৭৫’র হত্যাকাণ্ডের সাথে খলনায়ক জিয়াউর রহমানসহ যারাই জড়িত আছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করার জন্য অবিলম্বে একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং কমিশন গঠন করে সকল তথ্য উদঘাটন করে জাতিকে জানানো।
ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তরের সভাপতি শেখ বজলুর রহমানের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, সাংগঠনিক সম্পাদক এসএম কামাল হোসেন, মির্জা আজম, দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। সভা পরিচালনা করেন ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি এসএম মান্নান কচি।