#মুসলমান না হয়েও ইউরোপের মানুষরা ইসলামের ভালোদিক গ্রহণ করেছে: রুহুল আমীন মাদানী।
#ঈদের আগের রাতে শপিংয়ে না মেতে আল্লাহর ইবাদতে মগ্ন থাকতে হবে: মুহাম্মদ সাইফুল কাবির।
#স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানির পশু জবাই করে গরিবদের মেহমানদারি করতে হবে: শাহ মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ।
ঈদের আগের রাত আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নৈকট্য লাভের রাত। এই রাতের ফজিলত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের সমাজে ঈদের আগের রাতে শপিং আর আতসবাজিতে মেতে থাকে। কিন্তু এই রাতে আল্লাহর কাছে নিজের ভুলের জন্য তওবা করেও শান্তি পাওয়া যায়। এছাড়া করোনা মহামারী সময়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কোরবানি করতে হবে।
শুক্রবার (৩১ জুলাই) ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপে এসব কথা বলেন আলোচকরা। আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি ও ময়মনসিংহ-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী, বঙ্গভবন জামে মসজিদের পেশ ইমাম ও খতিব মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুল কাবির এবং ভারতের দেওবন্দ দারুল উলুমের মসজিদের কাদীমের সাবেক সহকারী ইমাম মুফতি শাহ মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ। দৈনিক ভোরের পাতার সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানটির সঞ্চালক ছিলেন মিরাজ রহমান।
হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী বলেন, আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে আমরা অনেক কৃতজ্ঞ, তিনি আমাদের মুসলমান ধর্মের মানুষ করেছেন। পৃথিবীতে অনেক ধর্ম এসেছে, পাশাপাশি অনেক বড় বড় মানুষ এসেছেন যারা মানবতা প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করেছেন। কমিউনিস্টরাও চেয়েছিল মানবতা প্রতিষ্ঠার জন্য। অনেক বুদ্ধিজীবী যেমন নেলসন মেন্ডেলাও চেষ্টা করেছিলেন। আল্লাহ যখন দুনিয়া থেকে মানবতা বিদায় নিচ্ছিল, মানুষ পশুর চেয়েও অধম হয়ে পরেছিল। সেই আইয়ামে জাহেলিয়ার যুগে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মহানবী মুহাম্মদ (সাঃ)কে প্রেরণ করলেন। হুজুর (সাঃ) তার সারাজীবনে মানবতা প্রতিষ্ঠিত করেছেন। মানবতা মানেই হলো মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা করা। আল্লাহর নবীর জীবনের অনেক ঘটনা থেকেই মানবতার উদাহরণ পেয়ে থাকি। তিনি একবার বিচার করতে গিয়ে বলেছিলেন, আমার কন্যা ফাতেমা (রাঃ)ও যদি চুরি করতো, তাহলে তার হাত কেটে দিতাম। এটাই হচ্ছে ইনসাফ। এখন জোর যার মুল্লুক তার। আমাদের কাছে স্বর্ণের খনি আল কোরআন আছে। কিন্তু আমরা তা সঠিকভাবে ব্যবহার করি না। তাইতো আমাদের দেখে ইহুদিরা লজ্জা পায়। ইউরোপের অনেক দেশে খ্রিস্টান বা ইহুদিদের দেখেছি তারা ইসলাম গ্রহণ না করেও এই ধর্মের অনেক ভালো ভালো জিনিসগুলো গ্রহণ করেছে। আমাদের মাঝে আছে ভাঁওতাবাজি আর মিথ্যাচার। আমাদের সবকিছুতেই রাজনীতি ঢুকিয়ে ফেলি। ভোটের সময় আমাদের নেতারা গরিবের বাড়িতে যায়, কিন্তু পাস করে গেলে গরিবদের দেয়া ওয়াদা ভুলে যায়। আমি নিজ এলাকায় গরিবের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করি। আল্লাহ যেন এই তৌফিক আমাকে সারাজীবন দান করেন, সেটাই চাই।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে শীতকালে অনেক কোরআন হাদিসের আলোচনা হয়। সেখানে গতানুগতিক আলোচনা হয়। ঈদের আগের রাত সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) ঈদের আগের দুইরাতে যারা আল্লাহর ইবাদত করবে, তারা কেয়ামতের ময়দানে এই কারণে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করবেন। ঈদের দিনে পশু কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহ একটা বিষয় প্রকাশ পরিষ্কার করেছেন, লক্ষ লক্ষ পশু মানুষের জন্য উৎসর্গ করে। এখানেই কোরবানির রহস্য লুকায়িত। আমি যখন মদীনা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করি তখন সেখানে ১০৫ দেশের ছাত্র ছিল। তখন একজন চীনা ছাত্র আমার সাথে আলোচনায় বসে বলেছিল, ইসলাম কিভাবে মানবতার ধর্ম হয়; যখন মানুষ খুন করা হয়। তখন আমি তাকে উত্তর দিয়েছিলাম, ইসলাম কখনোই খুনকে সমর্থন করে না। আইনের মাধ্যমে যদি খুনের বদলা নেয়া হয়; তখন অনেক জীবন বেঁচে যাবে। আমি তাকে বলেছিলাম, আপনাদের চীনে তো হাজার হাজার লোক খুন হয়। কিন্তু সৌদি আরব, মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে খুনের বদলা খুন হয়, তাই সেখানে খুনের সংখ্যা কম।
মাওলানা মুহাম্মদ সাইফুল কাবির বলেন, ইসলাম একটি সম্পূর্ণ জীবন বিধান। ইসলামে ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্রতর অন্যায়ের বিচার আল্লাহ করবেন। ইসলাম হচ্ছে সেই ধর্ম অন্য ধর্মকে সম্মান করে, রাতের আঁধারে হামলা করা অনুমোদন করে না ইসলাম। আমাদেরকে মনে রাখতে হবে, মানবতা হচ্ছে এমন একটা জিনিস যেখানে সঠিক দিক নির্দেশনা দেয় মানবিক হওয়ার মাধ্যমে। ঈদুল ফিতরে আমরা ঈদগাহে যেতে পারি নাই। এবারও করোনার কারণে ঈদগাহে যেতে পারছি না। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে মসজিদে নামাজ আদায় করবো। এই করোনার সময় গরিব দুঃস্থদের পাশে থাকতে হবে আমাদের সকলের। তাহলেই ঈদ পরিপূর্ণ হবে। আর সব সময় আল্লার শ্রেষ্ঠত্বের জয়গান গাইতে হবে।
তিনি আরো বলেন, ঈদের সময় আমাদের যে মূল্যবোধ রয়েছে, সেখান থেকে আমরা দূরে চলে গেছি। ঈদের আগের রাত অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ রাত। আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য, কাছাকাছি যাওয়ার সবচে তাৎপর্যপূর্ণ রাত হচ্ছে ঈদের আগের রাত। এই রাতকে চাঁন রাত বলে আতশবাজি আর শপিং করে অন্য দিকে নিয়ে গেছেন অনেকে। কিন্তু এই ঈদের আগের রাত হচ্ছে আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের জন্য, তওবা করার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রজনী। এই রাতে আমরা যথাযথভাবে, প্রাণ উজাড় করে আল্লাহর কাছে কিছু চাওয়া পাওয়া কবুলের সুযোগ পাওয়া যায়। এই রাতে আনন্দে না মেতে থেকে ইবাদত বন্দেগী করলেই ভালো।
শাহ মুহাম্মদ ফয়জুল্লাহ বলেন, কোরবানি মানেই হচ্ছে ত্যাগ। রাসুল (সাঃ) কোরবানির সময় সকল কর্মকাণ্ড নিয়ে সকল নির্দেশ দিয়ে গেছেন। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন ইব্রাহিম (আঃ) তার পুত্রকে কোরবানি করার মাধ্যমে পরীক্ষা করিয়েছিলেন। ইব্রাহিম (আঃ) বলেছিলেন, আমার চোখ বন্ধ করে নিতে হবে। কিন্তু তার ছেলে বলেছিলেন, চোখ খুলেই যেন তাকে কোরবানি দেয়া হয়। তখন আসমানি হুকুমে একটা পশু এসেছিল কোরবানির জন্য।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি ভোরের পাতার অনলাইন ভার্সনকে সরকারিভাবে নিবন্ধন দেয়ার জন্য। এই কোরবানির ঈদে আমাদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কোরবানি দিতে হবে। এখানে কোনও আবেগের জায়গা নেই। ঈদের নামাজের আগে অবশ্যই কোরবানির মতো পবিত্র ইবাদতের মাধ্যমে যেন আল্লাহর মেহমানদারি সুযোগটা পরিপূর্ণ করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগ দূরত্ব বজায় রাখার পাশাপাশি গরিব দুঃখী, বনবাসী মানুষের পাশে থাকতে হবে। আল্লাহ এই মেহমানদারির সুযোগ দিয়েছেন। আল্লাহ পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করেন। তাই এই দেশমাতৃকার সন্তান হিসাবে আমরা নিজেই সচেতন থেকে বর্জ্য দূর করবো।
অনুষ্ঠানের শেষে হাফেজ রুহুল আমীন মাদানী দেশ, জাতির সমৃদ্ধির কল্যাণ কামনায় বিশেষ মোনাজাত পরিচালনা করেন।