সাতক্ষীরায় যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে হিন্দু বাড়িতে সন্ত্রাসী হামলার প্রতিবাদে ঝাঁড়ু মিছিল, সড়ক অবরোধ
প্রকাশ: শুক্রবার, ৩১ জুলাই, ২০২০, ১০:২৪ এএম | অনলাইন সংস্করণ
বিরোধপূর্ণ জমি দখল করতে যেয়ে যুবলীগ নেতার নেতৃত্বে সন্ত্রাসীরা কয়েকটি হিন্দু বাড়িতে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। বাধা দেওয়ায় এক নারীসহ চারজনকে পিটিয়ে জখম করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে সাতক্ষীরা শহরতলীর বাঁকাল খেয়াঘাট জেলেপাড়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটে। আহতদের সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর যুবলীগ নেতার সন্ত্রাসী বাহিনীর হামলার প্রতিবাদ ও দোষীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ঝাঁটা মিছিল নিয়ে সাতক্ষীরা- কালিগঞ্জ সড়ক অবরোধ কওে জেলেপাড়ার হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী, পুরুষ ও শিশুরা।
বাঁকাল খেয়াঘাট এলাকার মণীন্দ্রনাথ বর বলেন, তাদের গ্রামের পুলিন মাখালের তিন ছেলের মধ্যে পরিজিৎ মাখাল ও তাপস মাখাল ভারতে চলে যায়। পুলিন মাখাল তার অংশের সকল জমি বিক্রি করার পর আশ্রয়হীন হয়ে পড়া ছেলে পরিতোষ মাখাল বাজুয়ারডাঙি শ্বশুরবাড়ি চলে যেতে চাইলে কাকা সুব্রত মাখাল তার একটি ঘরে পরিতোষকে থাকতে দেয়। ২০০৭ সালে পুলিন মাখাল মারা যান।
তিনি আরো জানান, পুলিন মাখালের কোন জমি না থাকার পরও তার কাছ থেকে ১৫ শতক জমি কেনার জন্য কোন চুক্তিপত্র ছাড়াই পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছেন মর্মে সম্প্রতি কাটিয়ার মুজিবর পেশকার দাবি করে আসছিলেন। পরিতোষ ও ভারতে বসবাসকারি তাপসকে বিবাদী করে আদালত থেকে মুজিবর ডিক্রী পেয়েছেন মর্মে স্থানীয়ভাবে প্রচার দেন। একপর্যায়ে মার্চের শেষের দিকে পরিতোষকে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা যুবলীগ নেতার দিয়ে জীবন নাশের হুমকি দিয়ে বিতাড়িত করে রাতের আঁধারে তার ঘর দখলে নেয় মুজিবর রহমান। পরিতোষের কাকা সুব্রত মাখাল এর ঘর মুজিবর দখল করে নেওয়ায় স্থানীয়ভাবে ও আইনজীবী সমিতিতে কয়েকবার বসাবসি করা হয়। মুজিবরের পক্ষে অবস্থান নেন জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নান। দেড় মাস আগে আইনজীবী সমিতিতে বসাবসিতে অ্যাড. তারক চন্দ্র মিত্র, অ্যাড গোলাম মোস্তফা সুব্রত মাখালের পক্ষে ও অ্যাড. শেলু ও অ্যাড. খোকন মুজিবরের পক্ষে অবস্থান করেন। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন অ্যাড. শহীদুল্লাহ। যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নানের উপস্থিত থাকার কথা খাকলেও তিনি ছিলেন না। শালিসের রায় মুজিবরের বিপক্ষে যায়। এরপরও আব্দুল মান্নান পরবর্তীতে বলেন যে ঈদের পর বিষয়টি তিনি নিষ্পত্তি করবেন।
পৌর ৬নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নারায়ন চন্দ্র মণ্ডল বলেন, বৃহষ্পতিবার বাড়িতে বাড়িতে সন্ধ্যা প্রদীপ দেওয়ার পরপরই যুবলীগ নেতা মান্নানের নেতৃত্বে কয়েকটি মোটর সাইকেলে এস ৩০/৪০ জন হাতে একই সাইজের লাঠি নিয়ে তাদের পাড়ার অহল্যা মাখাল, সহাদেব মাখাল, বলরাম মাখাল, ও নিরঞ্জন মাখালের বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর চালায়। বাধা দেওয়ায় অহল্যা, বলরাম, সহাদেব ও নিরঞ্জনকে পিটিয়ে জখম করা হয়। এ সময় লুটপাট করা হয় ঘরের মালামাল। স্থানীয়রা খবর পেয়ে ছুঁটে এলে হামলাকারিরা চলে যায়। আহত চারজনকে উদ্ধার করে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। মুজিবরের পক্ষ হয়ে যুবলীগ নেতার এ ধরণের হামলার প্রতিবাদে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের নারী , পুরুষ ও শিশু সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেকে ঝাঁটা মিছিল করে সাতক্ষীরা- কালিগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে। এতে রাস্তার দু’পাশে কয়েক’শ গাড়ি দাঁড়িয়ে পড়ে। রাস্তা অবরোধকারীরা বারবার যুবলীগ থেকে বহি®কৃত যুবলীগ নেতা আব্দুল মান্নানকে অবিলম্বে গ্রেপ্তারের দাবি জানান। খবর পেয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আসাদুজ্জামানসহ পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে এসে দোষীদের গ্রেপ্তারের ব্যাপারে আশ্বাস দিলে অবরোধ তুলে নেওয়া হয়।
এ ব্যাপাওে মুজিবর রহমান বলেন, তিনি আদালত থেকে ডিক্রী পেয়ে জমি দাবি করায় পুলিন মাখালের ছেলে পরিতোষ স্বেচ্ছায় ঘর ছেড়ে দিয়ে তাকে দখলে দিয়ে গেছে। এখন সুব্রত মাখাল ওই জমি তার বলে দাবি করছে।
জানতে চাইলে জেলা যুবলীগের আহবায়ক আব্দুল মান্নান সাংবাদিকদের বলেন, তিনি এখন আর কোন প্রকার হামলার সঙ্গে থাকেন না। নামাজ কালামের মধ্য দিয়ে দিন কাটান। নিরপেক্ষ হিসেবে কেউ বলে সেখানে থাকেন। হামলার বাকাল খেয়াঘাট এলাকায় হামলার বিষয়ে তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ আসাদুজ্জামান হামলা ও ভুঙচুরের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, মুজিবরকে পরিতোষের ব্যবহৃত ঘর থেকে স্বপরিবারে বের করে দিয়ে তালা লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে। মীমাংসা না হওয়া পর্যন্ত কোন পক্ষই ওই ঘরে উঠতে পারবে না। তবে যারা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা মামলা দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।