#বঙ্গবন্ধু আমার কাছে দার্শনিক, শিক্ষক ও মহান নেতা: জাহাঙ্গীর কবির নানক।
#মুজিববর্ষে ষাটের দশকে আওয়ামী লীগের আদর্শকে ফিরিয়ে আনতে হবে: মো. হারুনুর রশীদ।
#রাজনৈতিক ঐক্যমতের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা: ফাইয়াজুল হক রাজু।
করোনা মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত বিশ্বের অনেক উন্নত দেশের তুলনায় সফল। মুজিব শতবর্ষে আওয়ামী লীগের সরকার এবং দলের পক্ষে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। দেশের মানুষের পাশে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি বিরোধী দলের রাজনীতিবিদদেরও দাঁড়ানো প্রয়োজন বলে মনে করেন আলোচকরা।
বৃহস্পতিবার (৩০ জুলাই) দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপে এসব কথা আলোচকরা। আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, বিএনপির সংসদ সদস্য মো. হারুনুর রশীদ এবং তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ফাইয়াজুল হক রাজু। ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানের সঞ্চলনা করেন সাবেক তথ্য সচিব নাসির উদ্দিন।
জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু একটি পরাধীন জাতিকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছিলেন। ধর্মের ওপর ভিত্তি করে প্রতিষ্ঠিত পাকিস্তান রাষ্ট্রে অসাম্প্রদায়িক একটি রাজনৈতিক দল গঠনের মাধ্যমে তিনি মানুষের মণিকোঠায় জায়গা করে নিয়েছিলেন। ১৯৪৯ সাল থেকে ৭১ সাল পর্যন্ত জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য বারবার কারাবরণ করেছেন। আগরতলা মামলার সময় আমরা ছাত্র নেতারা স্লোগান দিতাম, তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার নেতা আমার নেতা, শেখ মুজিব শেখ মুজিব। চলো ক্যান্টনমেন্টে চলো, শেখ মুজিবকে আনতে চলো। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতিকে এক সুতোয় বেঁধেছিলেন। তিনি অধিকার আদায় করে নিয়েছিলেন, ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করার। ৭ মার্চ তিনি সবাইকে তুমি বলেই সম্বোধন করেছিলেন। স্বাধীনতার পর ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে বাংলাদেশের বিনির্মাণে কাজ শুরু করলেন। তারপর বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধুকে মেনে নিতে পারেনি একাত্তরের পরাজিত শক্তিরা। রাজাকার, আলবদর, আলশামস বাহিনীর সাথে আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কিছু লোকও বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত ছিল। পরাজিত শক্তিরা ভেবেছিল, মোশতাকদের সাথে নিতে পারলেই এটাকে পারিবারিক হত্যাকাণ্ড বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। কিন্তু এই বঙ্গবন্ধুর বাংলায় তার হত্যাকারীরা সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় বিদেশে চাকরি পেয়েছে। রাজাকার নিজামীদের গাড়িতে মন্ত্রীত্বেও পতাকা উড়েছে। বঙ্গবন্ধু কোনো সাধারণ মানুষ ছিলেন না। তিনি আমার কাছে দার্শনিক, শিক্ষক ও মহান নেতা। রাজনীতি যদি শুধু বিরোধিতা করা হয়, তাহলে আমি সেই রাজনীতি থেকে অবসর নিবো।
তিনি বিএনপির এমপি হারুনুর রশীদের উদ্দেশ্যে বলেন, বাংলাদেশকে আমেরিকা, ফ্রান্স ভাবলে চলবে না। লকডাউনের সময় আমাদের নেত্রী শেখ হাসিনা সবাইকে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমরা সেই নির্দেশ মেনে রাতের আঁধারে গিয়ে ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছি। আমাদের আওয়ামী লীগের ২০০ জন নেতা এই করোনার মাধ্যমে ত্রাণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে চলে গেছে। আমার নেত্রী বারবার বলেছেন, ‘নানক তুমি এত দৌঁড়াদৌড়ি করো না।’ কিন্তু আমি মানুষের পাশেই থাকছি। কিন্তু আমি বিএনিপর কোনো নেতাকে ত্রাণ নিয়ে যেতে দেখি নাই। আমি জেলায়, উপজেলায় কথা বলছি। আমি নেত্রীর পক্ষে মানুষের জন্য কাজ করছি।
মো. হারুনুর রশীদ বলেন, ষাটের দশকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের আইনশাসন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আন্দোলন করেছেন। তার এই অবদান অস্বীকার করার কোনো সুযোগ নেই। কিন্তু বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশকে যেভাবে দেখতে চেয়েছিলেন, আজকের বাংলাদেশ কি সেই অবস্থায় রয়েছে। দেশের আর্থিক অবস্থা কেমন আছে তা নিয়ে আমাদের ভাবতে হবে। আজকে ১২ বছর ধরে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায়। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতের এই অব্যবস্থাপনার দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না। এখনো দেশের ৪৪টি জেলায় করোনা পরীক্ষার করার সুযোগ নেই। কই স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে তো পদত্যাগ করতে দেখি নাই। তারা কিভাবে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও সচিব চেয়ারে থাকে? সরকার এবারের বাজেটেও ৮৫ হাজার কোটি টাকার ব্যাংক ঋণ করেছে। কয়েক বছর পর এটা আরো বাড়তে পারে। বঙ্গবন্ধুর শতবর্ষে আমরা যদি দৃশ্যমান দেখতে পারতাম বাংলাদেশের এই দুর্গতি, দুরবস্থা থেকে বের হয়ে আসতে পারতো। এই ১২ বছরে দুর্নীতি দমনে কোনো দৃশ্যমান উন্নতি নেই। বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মাত্র ২ কোটি টাকার আর্থিক অনিয়ম যেখানে কোনো টাকা তছরুপ করা হয়নি, তাকে আড়াই বছর জেলখানায় রাখা হলো। এর মূল উদ্দেশ্যই ছিল খালেদা জিয়া এবং বিএনপিকে নির্বাচন থেকে বাইরে রাখা। আজকে দেশের এই অবস্থায় দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য জাতীয় সংলাপ করতে হবে। বিএনপি বারবার এটা দাবি করছে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের জাতীয় ঐক্যমতে পৌঁছাতে হবে। দেশে কোনো রাজনীতিই নেই। সারাদেশে একটা অঘোষিত কারফিউ চলছে। বিরোধী দলগুলোকে নিশ্চিত করে দেয়ার চেষ্টাও করা হচ্ছে। মুজিব বর্ষে আওয়ামী লীগকে প্রতিজ্ঞা করতে হবে, ষাটের দশকে যে আদর্শ নিয়ে আওয়ামী লীগ রাজনীতি করতো, সেই আদর্শকে ফিরিয়ে আনতে হবে।
ফাইয়াজুল হক রাজু বলেন, বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছিল। এটা চরমতম সত্য। বঙ্গবন্ধু আজীবন স্বপ্ন দেখেছেন বাঙালি জাতিকে মুক্তি দিতে। ১৯৩৭ সালে বঙ্গবন্ধু এই বয়সে কতটা স্বাধীনচেতা ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়ে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেরে বাংলা একে ফজলুল হককে নিজেদের দাবি আদায়ে পথে এসে দাঁড়িয়েছিলেন। খুব কম বয়সেই তার দৃঢ়চেতা মনোভাব গড়ে উঠেছিল। এরপর ধাপে ধাপে তিনি বাংলাদেশকে স্বাধীনতা এনে দিয়েছেন। আমরা যারা যে যেই আদর্শেই বিশ্বাসী হই না কেন, যারা ১৯৭০ সালে, একাত্তর সালে বঙ্গবন্ধুকে বঙ্গবন্ধু বলতে পারতাম, তাহলে ২০২০ সালে এসে কেউ কেউ যদি তাকে শেখ মুজিব বলে সম্বোধন করেন, এটা আমাদের কষ্ট দেয়। জাতি হিসাবে এটা আমাদের জন্য লজ্জার। মহাত্মা গান্ধী, স্টালিন, লেলিনকে ওই দেশের নয় সবাই সম্মান করেন। এ বিষয়ে আমাদের ঐক্যমতে আসতে হবে। করোনায় হয়তো আমাদের প্রস্তুতি ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের অনেক দেশের তুলনায় ভালো আছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিকভাবে বিএনপিকে কোথাও দেখনি না, করোনার সময় কোনো কাজ করতে। এমনকি তাদের দলের চিকিৎসকদেরও দেখছি না। রাজনৈতিকভাবে তর্ক করা যেতেই পারে। কিন্তু সরকারের সমালোচনা করার পাশাপাশি অবশ্যই ভালো কাজকে সাধুবাদ জানাতে ভুলে গেছে বিএনপি। এই সময় মানুষকে বিভ্রান্ত না করে জনগণের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান। এই সরকারের আমলেই সাহেদকে ধরা হয়েছে। আওয়ামী লীগ দীর্ঘ সময় ক্ষমতায় থাকায় দলে কিছু ফাঁক ফোঁকড় হয়েছে। এটা অস্বীকার করার সুযোগ নেই। সাহেদ কোনো আওয়ামী লীগের ডাকসাইটে নেতা ছিল না। আমরা চোরকে চোর, সাধুকে সাধু বলছি। খালেদা জিয়াকেও এই সরকারই মুক্তি দিয়েছে। কিন্তু এই বিষয়ে বিএনপির পক্ষ থেকে কোনো সাধুবাদ জানানো হয়নি। সারা পৃথিবীতে যে অর্থনীতির ওপর বিরূপ প্রভাব শুরু করেছে। কিন্তু আমাদের দেশে রেমিটেন্সের পাশাপাশি গ্রামীণ অর্থনীতিও চাঙা রয়েছে। বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে ঐক্যমতের ওপর সবচে বড় দাগ কেটে গেছে ২১ শে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ঘটনায়। এটি রাজনৈতিক ঐক্যমতের ওপর ব্রাশফায়ার চালানো হয়েছে। এই ঘটনার বিচার না হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক ঐক্যমতের কোনো সুযোগ আসবে বলে আমি মনে করি না। আমি মনে করি, এদেশের রাজনৈতিক ঐক্যমতের পথ রুদ্ধ করে দিয়েছে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা।