অক্টোবরে বিশ্বকাপ বাছাই পর্ব দিয়ে বাংলাদেশে আবারও শুরু হচ্ছে ফুটবল। এসময় বাংলাদেশ তিনটি হোম ম্যাচ খেলবে এবং একটি দেশের বাইরে। করোনা সংকট কাটিয়ে অক্টোবরে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে আবারও খেলায় ফিরতে যাওয়া বাংলাদেশ ফুটবল দলের মূল বিষয় হচ্ছে ফিটনেস, ট্রেনিং সেশন নিয়ে কিভাবে আগানো যায়।
বুধবার (২৯ জুলাই) দৈনিক ভোরের পাতার নিয়মিত আয়োজন ভোরের পাতা সংলাপে এসব কথা বলেন আলোচকরা। আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক হেড কোচ সাইফুল বারী টিটো, বাংলাদেশ ফুটবল দলের মিডফিল্ডার মামুনুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক জাহিদ হাসান এমিলি এবং দ্য ডেইলি স্টারের সিনিয়র রিপোর্টার আনিসুর রহমান। দৈনিক ভোরের পাতা সম্পাদক ও প্রকাশক ড. কাজী এরতেজা হাসানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় অনুষ্ঠানের সঞ্চালনা করেন আহমেদ রাকীব।
সাইফুল বারী টিটো বলেন, করোনাকালীন সমস্যা শুধু বাংলাদেশের টিমের জন্য নয় বিশ্বের সব দলেরই রয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো প্লেয়ারদের বাসায় থাকা ও প্রাকটিসের সুবিধার অভাব উপর নির্ভর করে। আমি জানি যে জেমি ডে খেলোয়াড়দের অবশ্যই একটা গাইডলাইন দিয়েছে। বিশেষ করে আমাদের জাতীয় দলে এখন সিনিয়র প্লেয়ার, জুনিয়র প্লেয়ারদের একটা ভালো কম্বিনেশন আছে। সবাই নিজেকে ফিট রাখার জন্য করোনাকালীন সময়ে বাসায় বসে গুছিয়ে নিয়েছে। শুরুর দিকে একটু সমস্যা হবেই কারণ প্রথমত, প্লেয়ারদের ঢাকার পরে তাদেরকে টেস্ট করানো হবে যে কারা করোনা পজিটিভ আছে কারা নেগেটিভ। আশা করি সবাই নেগেটিভ থাকবে ইনশাআল্লাহ। এই টেস্টটা প্রতি সপ্তাহে দু’একবার করানো হলে ভালো হবে প্লেয়ারদের জন্য। নতুন যেখানে ক্যাম্প করা হচ্ছে সেখানে প্রতিদিন ফুটবল ক্যাম্প সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন লোক যাওয়া-আসা করবে। সবাইকে করোনা নিয়মকানুন মেনে চলা প্রথমদিকে একটু কষ্ট হবে। প্লেয়ারদেরকে অবশ্যই ফ্রেন্ডলি ডিস্টেন্স মেনে চলতে হবে। আমি শুনেছি ট্রেনিংয়ে ৬ জন-৬জন করে আলাদা আলাদা করে ট্রেনিং সেশন করানো হবে যা অত্যন্ত কার্যকর হবে বলে আমি আশা করি। ক্যাম্প চলাকালীন সময়ে প্রত্যেক প্লেয়ারদেরকে অনেকগুলো ব্যাপার নিয়ে একটি ওয়েল প্লান মাফিক আগাতে হবে। এখন যে অফ সিজন চলতেছে এটা বেশ বড়। আমাদের যখন ফুটবল লীগ হতো না তখনো এতো লম্বা অফ সিজন থাকতো না এখন যেমন আছে। এক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের একটু সমস্যা পোহাতে হবে। প্লেয়ারদের যে ফিজিক্যাল ফিটনেস, মাস্কিউলার ফিটনেস, ম্যানটাল ফিটনেস আছে, এই তিন জায়গাতে কোচদের একটু বেশি জোর দিতে হবে। এইসব চ্যালেঞ্জের মধ্যে ক্যাম্প শুরু করাটাই সব থেকে চ্যালেঞ্জিং হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের কোচ জেমি ডে যদি হ্যাপি থাকে তাহলে সবঠিক। কারণ সে দুইবছর ধরে এই টিমটাকে ট্রেনিং করাচ্ছে, তার নিজস্ব একটি স্টাইল রয়েছে, প্লেয়ারদের সম্পর্কে তার একটি ধারণা রয়েছে। যার কারণে সে জনি ও ফারহাদকে এই ক্যাম্পে ডেকেছে। নতুন মুখ নিয়েছে দলে। অনেকদিন ধরে আমি বর্তমান টিম টাকে দেখছি। এই টিমটা সিনিয়র ও জুনিয়রদের নিয়ে একটা ভালো কম্বিনেসন হয়েছে। এই টিমের মধ্যে আমার একটা ভালো দিক যেটা লেগেছে, ‘নেভার ছে ডাই, শেষ হুইসেল বাজার আগ পর্যন্ত তারা ফাইট করে যাবে, এইরকম একটা মেন্টালিটি তাদের মধ্যে আছে। এখানে আমদের কিছু দূর্দান্ত গতির উইংগার আছে যা খুবই ভালো দিক আমাদের জন্য। আমাদের আসল দূর্বলতা হচ্ছে, বিরোধী টিম যখন ডিফেন্সিভ মুডে খেলে, তখন কিন্তু আমরা সুবিধা করতে পারিনা। এই বিষয়ে আমাদের একটু খেয়াল রাখতে হবে।
মামুনুল ইসলাম বলেন, আমাদের যে ফিজিক্যাল ফিটনেস সমস্যা হলেও আমাদের কোচ অলরেডি সোশ্যাল গ্রুপে আমাদেরকে ট্রেনিং সেশন, একমাসের খাবার তালিকা ও অন্যান্য বিষয়গুলো সে দিয়ে রেখেছে। আমাদের ফিটনেস ধরা রাখা নিয়ে করোনাকালীন প্রথম তিন মাস আমাদের জন্য প্রচুর ডিফিকাল্ট ছিল। হায়ার লেভেলে ফুটবল খেলতে হলে আপনাকে অবশ্যই স্প্রিড ট্রেনিং, ইন্ডরেন্স ট্রেনিং, বল ছাড়া যেসব ট্রেনিং আছে এইগুলো করতে হবে। কিন্তু আমরা যখন বাসায় ছিলাম তখন শুধু ফিটনেস ট্রেনিংয়ে আমরা জোর দিয়েছিলাম। যারা পার্সোনাল ক্লাবে যুক্ত ছিল তারাই ওইসব ট্রেনিংগুলো রেগুলার করতে পেরেছে। ইন্টারন্যাশনাল লেভেলে ফিটনেস ধরে রাখার জন্য প্রথম তিন মাস আমাদের জন্য অনেক কঠিন ছিল। এই তিন মাস আমরা টোটালি ফুটবলের বাইরেই ছিলাম। রমজান ঈদের পর থেকে আমি পার্সোনালি মাঠের ট্রেনিং, ক্লাবের জিম থেকে শুরু করে সবই করেছিলাম কিন্তু টিম ট্রেনিংয়ের বিকল্প কিছুই না। ফিজিক্যাল ফিটনেস, ম্যানটাল ফিটনেস এই সবগুলো একমাত্র টিম ট্রেনিংয়েই সম্ভব হয়। আমরা যদি আরও আগে থেকে এই ট্রেনিংগুলো টিম হিসেবে করতে পারতাম তাহলে আরও এগিয়ে যেতে পারতাম। আমরা যদি সারাদিন দৌড়ায় তা কোন কাজেই আসবেনা যতক্ষণ না পর্যন্ত আমরা মাঠে ফিরছি। আমরা কোচ থেকে যে ইনফরমেশনগুলো পেয়েছি তা যে যার অবস্থান থেকে ১০০% করার চেষ্টা করেছি। আমরা যখন ক্যাম্পে ট্রেনিংয়ে নামবো তখন আমদের রিকোভারি যদি তাড়াতাড়ি হয়ত তাহলে আমরা রিকোভারি ইম্প্রুভ করতে পারবো। আর যদি না হয় তাহলে আমরা পিছিয়ে থাকবো অন্যদের থেকে।
তিনি আরও বলেন, আমি লাস্ট তিন মাস ধরে কিন্তু মাঠের ট্রেনিংয়ের মধ্যেই আছি কারণ যেহেতু আমি ন্যাশনাল টিমে আছি সেহেতু আমাকে অবশ্যই নিজেকে ওইভাবে তৈরি করতে হবে। ঢাকায় থাকাকালীন আমি যখন আবহানি মাঠে ট্রেনিং করি তখন ধানমন্ডি ক্লাবের অনেক প্লেয়াররা আমার সাথে ট্রেনিং করে। এখন আমি চিটাগাং আছি। এখানে আমি মেয়রের কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে স্টেডিয়ামে ট্রেনিং করার অনুমতি নিয়েছি। লাস্ট তিন মাস আমার যে গ্যাপটা গিয়েছে তা আমাকে এই মাঠের ট্রেনিংয়েই পূরণ করতে হবে। এই সময়ে আমরা যদি ট্রেনিং না করি তাহলে আমাদের ফিটনেস লেভেল একবারেই নিচে নেমে আসবে।
জাহিদ হাসান এমিলি বলেন, আমাদের জন্য এখন সব থেকে বড় চ্যালেঞ্জ হচ্ছে মানসিক প্রস্তুতি। কোচ, কোচিং স্টাফ, প্লেয়ারদেরকে ম্যানটালি মোটিভেট হয়ে একটা প্লান করে এগুতে হবে। নেক্সট যে তিনটা খেলা রয়েছে তার মধ্যে তিনটা হোমে আর একটা দেশের বাহিরে। যেহেতু দুই মাস আগে থেকে আমরা ক্যাম্প স্টার্ট করেছি আমার কাছ এমনে হচ্ছে না ফিটনেস ততটা প্রবলেম হবে। কিন্তু আমরা অনেক দিন খেলার বাইরে তাই ইন্টারন্যাশনালভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে আমাদেরকে। ইন্টারন্যাশনাল ম্যাচ খেলার জন্য যে ফিটনেস দরকার সেটা যত তাড়াতাড়ি এডপ্ট করতে পারে তার দিকে কোচের বিশেষ নজর দিতে হবে। এই ফিটনেস নিয়ে কাজ করার পর আসবে রিকোভারি লেভেল এর বিষয়। এইদিক গুলো কোচ অবশ্যই প্লান মাফিক করবে আমি আশা করি। আমার একটা উপদেশ থাকবে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন, বাংলাদেশ ফুটবল টিম, কোচিং স্টাফদের প্রতি যে, আমরা নেক্সট ৪টা ম্যাচের মধ্যে ৩টা হোমে খেলবো। হোমে আমরা সব সময় ভালো খেলে আসছি। এক্ষেত্রে কেনো আমরা হোম এডভান্টেজ নিয়ে এশিয়ান কাপে খেলাটা হাতছাড়া করবো। এশিয়ান কাপে যেহেতু আমাদের একটা সম্ভাবনা আছে তাহলে কেন সে সুযোগটা আমরা হাতছাড়া করবো। এক্ষেত্রে আমি কোচকে এই বিষয়টাই বিশেষ নজর দিতে বলবো।
আনিসুর রহমান বলেন, করোনার সময় আমাদের মাইন্ড সেটআপ টা কেমন আছে সেটা মূল বিষয়। হোমে এডভান্টেজে খেলার সুযোগ থাকলেও প্লেয়াররা যদি মনে ভয় রাখে যে সে ইনফেক্টেড হতে পারে তাহলে কিন্তু প্রোপারলি ট্রেনিংয়ে মনোনিবেশ করা নিয়ে এটা একটা প্লেয়ারের জন্য অনেক দূরহ বিষয় হয়ে দাঁড়াবে। যে দিন থেকে ফিফা ম্যাচগুলোর তারিখ ঘোষণা করেছে, সেদিন থেকেই আমাদের কোচ থেকে কিছু প্রোগ্রামের লিস্ট দিয়ে দিয়েছে প্লেয়ারদেরকে। সেই প্রোগ্রামগুলো খেলোয়াড়রা মেনে চলছে। আমি মামুনের সাথে একমত যে ঘরে বসে ট্রেনিং করা আর মাঠে বসে ট্রেনিং করা একদমই আলাদা বিষয়। অনেকেই আছে গ্রামে চলে গিয়েছে। তারা নিজ বাসায় ট্রেনিং নিচ্ছে, কিন্তু জিম ট্রেনিংটা তারা করতে পারছে না। জিমের সেসব ইন্সট্রুমেন্ট তাদের কাছে নেই। আগস্টের ৭ তারিখ থেকে যে ক্যাম্প শুরু হবে এবং আইসোলেশন ক্যাম্পে যে টানা ১৪ দিন ট্রেনিং সেশন হবে যেখানে ৬ জন করে প্লেয়ার আলাদাভাবে ট্রেনিং করবে এবং ২২ তারিখ থেকে ফরেন স্টাফরা এটা টেকওভার করবে। সে হিসেবে বাংলাদেশের ফুটবল কোচ জেমি ডে ছয় সপ্তাহ সময় পাবে। সে ছয় সপ্তাহে নির্ভর করবে যে আমরা কতটুকু রিকোভারি করতে পারলাম।