প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০, ৬:৪৫ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
প্রতারণার নানা কৌশল অবলম্বন করেছেন সাহেদ করিম ওরফে মো. সাহেদ ওরফে শহীদ। তার প্রতারণার শিকার হয়েছেন অসংখ্য মানুষ। বাদ যায়নি শাশুড়িও। শাশুড়ির ব্যাংক হিসাব থেকেও প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সাহেদ। এদিকে প্রতারণার জাল বিস্তার করে ব্যাংক থেকেও ঋণ নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন তিনি।
নিজের ব্যক্তিগত বিভিন্ন তথ্য গোপন করেই সিলেটের মেয়ে সাদিয়া আরাবি রিম্মির সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন সাহেদ। একপর্যায়ে তাকে বিয়ে করেন তিনি। রিম্মির মা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। বাবা অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা। কয়েক বছর আগেই তিনি মারা যান। রিম্মিকে বিয়ে করার পর শাশুড়ির বিশ্বস্ততা অর্জন করেন তিনি। একপর্যায়ে শাশুড়ির ব্যাংক হিসাব থেকেও প্রতারণা করে কোটি টাকা হাতিয়ে নেন সাহেদ।
সিলেট নগরীর দক্ষিণ সুরমায় শাহেদের শ্বশুরবাড়ি। সূত্রমতে শাহেদের শাশুড়ি ঢাকার বনানীতে থাকতেন। স্বামীর মৃত্যুর পর একপর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। শাহেদ রিম্মিকে বিয়ে করার পর শাশুড়ির কাজকর্মে সহযোগিতা করতেন। দলীয় প্রভাব ও নিজের বিভিন্ন পরিচয় দিয়ে সহজেই শাশুড়ির আস্থা অর্জন করেন। একপর্যায়ে শাশুড়ির ব্যাংক হিসাবে থাকা কোটি টাকার প্রতি লোভ জন্মে তার। নিজের ব্যবসার প্রয়োজনের কথা বলে এক সপ্তাহের জন্য টাকা ধার নেন শাহেদ। তারপর আর ফেরত দেননি ওই টাকা। এ নিয়ে শাশুড়ির সঙ্গে সম্পর্কের চরম অবনতি ঘটে।
সিঙ্গাপুরে হুন্ডি চোরাকারবারিদের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। সেই সূত্রে সিঙ্গাপুর সিটির ম্যারিনা বরিবার্ড এলাকায় ডিবিএস ব্যাংকে তার ৬ কোটি টাকার অনুসন্ধান পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ওই টাকা উদ্ধারের ব্যাপারে ইতিমধ্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) কাজ শুরু করেছে। পাশাপাশি সিআইডির মানিলন্ডারিং শাখাও কাজ শুরু করেছে। অবৈধভাবে উপার্জিত টাকার একটি অংশ তিনি সিঙ্গাপুরের ব্যাংকে পাঠিয়েছেন।
সূত্রমতে, সিঙ্গাপুরের ওই ব্যাংক হিসাবে টাকা রাখার বিষয়ে তাকে সহযোগিতা করেছে জাহিদ ও রজব নামে তার দুই বন্ধু। তারা দীর্ঘদিন যাবৎ সিঙ্গাপুরে রয়েছেন। ওই দুই বন্ধুর বিষয়ে তথ্য নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ইন্টারপোলের সাহায্য নেবে বলে জানা গেছে। বাংলাদেশের একাধিক ব্যাংকে টাকা রয়েছে শাহেদের। কিন্তু দেশের ব্যাংক হিসাবগুলোতে সন্দেহ করার মতো লেনদেনের তথ্য এখনো পায়নি গোয়েন্দারা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ধারণা, কৌশলে সব টাকা বিদেশে পাচার করেছেন শাহেদ। অধিকাংশ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠিয়েছেন। গাজীপুরের কালিয়াকৈর এলাকার বাসিন্দা হুন্ডি ব্যবসায়ী শরিফের সঙ্গে তার লেনদেনের প্রমাণ পেয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। ধারণা করা হচ্ছে, শরিফের সঙ্গে হুন্ডি ব্যবসায় সম্পৃক্ত শাহেদ। এছাড়াও ঢাকা, সিলেট ও চট্টগ্রাম এলাকা কেন্দ্রিক অবৈধ হুন্ডিচক্র গড়ে তুলেছিলেন শাহেদ। তার এই চক্রে সক্রিয়ভাবে ১০ জন মিলে কাজ করতো। তাছাড়াও উত্তরা এলাকার একটি প্রাইভেট ব্যাংকের এক কর্মকর্তা রয়েছেন গোয়েন্দাদের দৃষ্টিতে। তার সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা রয়েছে শাহেদের। রিজেন্ট হাসপাতালে শাহেদের সঙ্গে প্রায়ই সাক্ষাৎ করতেন বলে তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। সূত্র জানায়, মূলত আর্থিক নিরাপত্তার জন্যই বিদেশে টাকা পাচার করেছেন শাহেদ। তার ধারণা ছিল দেশে যেকোনো সময় অপকর্মের জন্য আটক হতে পারেন তিনি। জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও ক্যাসিনো অভিযানের সময় এই আতঙ্ক পেয়ে বসে তাকে।
উল্লেখ্য, গত মঙ্গলবার রিজেন্ট হাসপাতালে অভিযান চালায় র্যাবের ভ্রাম্যমাণ আদালত। এ সময় ভুয়া করোনা পরীক্ষার প্রমাণ পাওয়া যায় সেখানে। এ ঘটনায় ৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। ঘটনার পর থেকেই শাহেদ পলাতক। এ বিষয়ে র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম বিভাগের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ মানবজমিনকে জানান, তদন্ত চলছে। সেইসঙ্গে তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। শাহেদের অপকর্মে ইন্ধনদাতা ও প্রশ্রয়দানকারীদেরও আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানান তিনি।