প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১৪ জুলাই, ২০২০, ৫:১০ পিএম আপডেট: ১৪.০৭.২০২০ ৫:১৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
ভুয়া করোনা টেস্ট রিপোর্ট তৈরির অভিযোগে গ্রেফতার হওয়া ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা কার্যালয়ে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। এর আগে সোমবার রাতে মামলাটি তেজগাঁও থানা থেকে তদন্তের জন্য ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) বিভাগে স্থানান্তর করা হয়েছে।
প্রশ্ন উঠেছে যে, জেকেজি হেলথ কেয়ারের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আরিফুল হক চৌধুরী গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও সাবরিনা কিভাবে এতদিন ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকলেন এবং সাবরিনাকে যে এখন গ্রেপ্তার করা হয়েছে তাতে আদৌ কি সাবরিনা দোষী প্রমাণিত হবেন? তাঁর বিচার হবে নাকি আইনের ফাঁকফোকরে তিনি বেড়িয়ে আসবেন? এই প্রশ্নগুলো এই কারণেই উঠেছে যে, সাবরিনার প্রভাব বলয় অনেক বড় এবং অনেক প্রভাবশালীদের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। এই কারণেই সাবরিনা এতদিন সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, সাবরিনার স্বামী আরিফুল হক চৌধুরী একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পরিচালনা করতেন এবং সাবরিনার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার পরেই এই প্রতিষ্ঠানটি ফুলেফেপে ওঠে। এই প্রতিষ্ঠানটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধিকাংশ ইভেন্ট প্রায় এককভাবে করেছিল। যদিও ঐ প্রতিষ্ঠানটির এই ধরণের ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট করার পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলোনা।
অনুসন্ধানে দেখা যায় যে, সাবরিনা এই সমস্ত কাজগুলো বাগিয়ে নেওয়ার জন্যে প্রভাবশালীদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হতেন, তাঁদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তেন। সাবরিনার বয়ফ্রেন্ডদের তালিকা বেশ দীর্ঘ। অনুসন্ধানে দেখা গেছে আরিফ সাবরিনাকে বিয়ে করেছিলেন মূলত তাঁর ওভাল গ্রুপের ব্যবসা প্রসারের জন্যে। কারণ সাবরিনার যে ধরণের যোগাযোগ ছিল তা ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট ব্যবসার জন্যে অত্যন্ত সহায়ক। এই হিসেবনিকেষ করেই আরিফ সাবরিনাকে বিয়ে করেন এবং সাবরিনার শর্ত ছিল যে এই এভেন্টগুলো থেকে যে আয় হবে তাঁর একটি বড় অংশ কমিশন হিসেবে পাবেন।জানা গেছে যে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে সাবরিনার তুমি-তুমি সম্পর্ক এবং তাঁরা সাবরিনাকে বিভিন্ন অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানাতেন এবং সাবরিনা তাঁদের সঙ্গে দেখা করতেন। এই সমস্ত ব্যক্তিরাই সাবরিনাকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্যে তদবির করতেন। যখন এই ওভাল গ্রুপের পক্ষ থেকে জেকেজি নামের একটি তথাকথিত স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান তৈরি করা হয়। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানকে করোনার নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে অনুমতি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে সাবরিনা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
এখন পর্যন্ত সাবরিনার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে একজন প্রভাবশালী চিকিৎসকের নাম উঠে এসেছে, যিনি স্বাচিপের নেতা এবং বাংলাদেশ মেডিকেল এ্যসোসিয়েশনের যুগ্ন মহাসচিব। তিনি বিএমএ-এর একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, এই উর্ধ্বতন কর্মকর্তা সাবরিনাকে শুধু পেশাগত জীবনে সহায়তা করেছেন। অর্থাৎ তাঁকে জাতীয় হৃদরোগ ইন্সটিটিউটে পোস্টিং পাইয়ে দিতে এবং অফিস না করে অন্য ব্যবসা-বাণিজ্য যেন দেখতে পারেন এবং সে ব্যাপারে কেউ যেন তাঁকে প্রশ্ন না করতে পারে সেসব ব্যাপারগুলো দেখাশোনা করতেন। কিন্তু একাধিক উর্ধ্বতন ব্যক্তির সঙ্গে সাবরিনার গোপন-প্রকাশ্য সম্পর্কের কথা জানা যায়। অনুসন্ধানে দেখা গেছে যে, সাবরিনা সরকারি চাকরি করলেও তিনি একাধিকবার ব্যক্তিগত কারণে বিদেশে গিয়েছেন। এই সমস্ত বিদেশ সফরগুলো প্রভাবশালীদের মনোরঞ্জনের জন্যে বলেই ধারণা করা হচ্ছে। কারণ সাবরিনা যখন যখন বিদেশ গিয়েছেন তখন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিও ঐ সময়ের আশেপাশে সময়ে বিদেশে গিয়েছেন। এছাড়া সাবরিনা আরিফের বাড়িতেও অনেক গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের যাওয়া-আসা ছিল বলে ধারণা করা হচ্ছে।
একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ যিনি পরিবার পরিকল্পনা সেক্টরে অনেক বড় বড় ব্যবসা করেন তাঁর সঙ্গেও সাবরিনার সখ্যতার খবর পাওয়া যায় এবং সাবরিনা ঐ আওয়ামী লীগ নেতার অফিসে যেতেন বলে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। এছাড়াও সরকারের বিভিন্ন মহলে তাঁর যোগাযোগ ছিল। এই কারণেই এই সময়ে আরিফ গ্রেপ্তার হওয়ার পরেও সাবরিনা গ্রেপ্তার হননি। এখন দেখার বিষয় যে, সাবরিনার এই প্রভাবশালী বয়ফ্রেন্ডরা তাঁকে কিভাবে বাঁচায় বা আদৌ বাঁচাতে পারে কিনা।