পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলার বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের খারিজা বেতাগী এলাকায় সেতুর অভাবে চরম দুর্ভোগে ১১টি গ্রামের বাসিন্দা সহ স্কুলে যেতে হয় ছোট্ট খেয়া নৌকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এলাকার জমিন মৃধা বাজার এলাকার সেতুটি ৩ বছর অগে ভেঙে পড়ায় এই দুর্ভোগ চরমে পৌছে গেছে। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় ইউনিয়নটি দুই ভাগে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে।
২০১৬ সালের ১৪ ডিসেম্বর বালুবোঝাই একটি কার্গোর ধাক্কায় সেতুর মাঝখানের অংশ ভেঙে গেলে চার শিশুসহ পাঁচজন নদীতে পড়ে যায়। চারজন সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও নুরসাত জাহান (৫) নামের একটি শিশু নিখোঁজ থাকে। পাঁচ দিন পর নুরসাতের মরদেহ ভেসে ওঠে। বালুবোঝাই কার্গোটিও ঘটনাস্থলে ডুবে রয়েছে। এখনো সেতুটি মেরামত কিংবা নতুন করে নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। এলাকাবাসীদের সাথে আলাপ করে জানা যায় পরিত্যক্ত লোহার সেতু সরিয়ে এনে যেনতেন করে সেতুটি স্থ্াপন করে ব্যাপক আর্থিক অনিয়ম করেছেন সংশ্লিষ্টরা। যার কারনে সামান্য বালু বাহী কার্গোর ধাক্কায় ভেঙ্গে পরেছে সেতুটি।
ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয় সূত্র জানায়, বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে সুতাবড়িয়া শাখানদী। নদীর পূর্ব পারে মর্দনা, জাফরাবাদ, খারিজা বেতাগীর একাংশ ও তাফালবাড়িয়ার একাংশ। পশ্চিম পারে রামবল্লভ, দাবাড়ি, চিংগরিয়া, চন্দ্রাবাজ এবং খারিজা বেতাগী ও তাফালবাড়িয়ার একাংশ। এই ১১ গ্রামের বাসিন্দাদের সহজ যোগাযোগ সংযোগ ছিল জমির মৃধা বাজার এলাকার খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সেতুটি।
সংশ্লিষ্ট অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ঠাকুরের হাটসংলগ্ন পরিত্যক্ত লোহার সেতুটি সরিয়ে এনে বেতাগী সানকিপুর ইউনিয়নের জমির মৃধা বাজার এলাকায় স্থাপন করা হয়েছিল। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে এই সেতু স্থাপন করতে ব্যয় হয় ১০ লাখ টাকা। লোহার বিমের ওপর আরসিসি কংক্রিট ঢালাই প্লেট বসানো ১৫০ ফুট লম্বার এই সেতুর মাঝখানে প্রায় ২৫ ফুট অংশ ভেঙে নদীতে পড়ে গেছে।
সরেজমিনে জানা যায়, স্কুল চলাকালীন সময়ে ছোট্ট ডিঙি নৌকায় শিক্ষার্থীরা নদী পার হয়। তারা নদীর পূর্ব পারের বাসিন্দা ও পশ্চিম পারের খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রী। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোঃ রফিক হোসেন বলেন, নদীর পশ্চিম পারে খারিজা বেতাগী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৩২০ জন শিক্ষার্থী ও খারিজা বেতাগী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ২১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের মধ্যে অন্তত ১৫০ শিক্ষার্থী নদীর পূর্ব পারের বাসিন্দা। সেতুটি ভেঙে যাওয়ায় শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির হার কমে গেছে। এখন শিক্ষার্থী সহ অসুস্থদের ছোট্ট খেয়ানৌকায় পারাপার হচ্ছে। এতে সব সময় আতঙ্কের মধ্যে থাকতে হয় শিক্ষার্থী ও লোকজনকে।
বেতাগি সানকিপুর ইউপির চেয়ারম্যান মোঃ মহিবুল আলম বলেন, সেতুটি ভাঙার পর ইউনিয়নটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। নতুন একটি সেতুর জন্য এলজিইডি কার্যালয়ে বারবার অনুরোধ জানানো হলেও উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে না।
এলজিইডি উপজেলা প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, এখন আর সেখানে লোহার সেতু নির্মাণ সঠিক হবে না। এ ছাড়া সেতুর স্থানে নদীভাঙন, তাই স্থান পরিবর্তন করে আরসিসি সেতু নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। দ্রুতই ব্রীজের নির্মাণকাজ শুরু হবে।