রবিবার দুপুরে তাকে তেজগাঁও বিভাগের ডিসির কক্ষে প্রায় ঘণ্টা দুয়েক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। তবে এসময় ডা. সাবরিনা সবকিছু অস্বীকার করেন। পুলিশের কোনও প্রশ্নের উত্তর সঠিকভাবে দেননি তিনি।
ডিসি হারুন অর রশীদ বলেন, ‘ডা. সাবরিনা চৌধুরীকে আমরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। এছাড়াও কিছু তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি। আমাদের মনে হয়েছে জেকেজির এই প্রতারণার সঙ্গে তিনি জড়িত। তাছাড়া তিনি অনেক প্রশ্নের সদুত্তর দিতে পারেননি, তাই আমরা তাকে গ্রেফতার করেছি। অধিকতর তথ্য জানার জন্য সোমবার সকালে তাকে আদালতে পাঠিয়ে চারদিনের রিমান্ড চাওয়া হবে।’
জেকেজি পাবলিক হেলথ গ্রুপটির কর্মকর্তাদের গ্রেফতারের পটভূমি উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘জেকেজি গ্রুপের নার্স তানজিনা পাটোয়ারি ও তার স্বামী হুমায়ুন কবীর হিমুকে আমরা প্রথমে গ্রেফতার করি। গ্রেফতারের আদালতে স্বীকারোক্তিতে তারা জানান, তানজিনা দিনে নার্স হিসেবে ঢাকার বিভিন্ন এলাকার বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ফেরার সময় রাস্তায় ফেলে দিতো। তার স্বামী হুমায়ুন কবীর হিমু গ্রাফিক্স ডিজাইনার হওয়ায় কম্পিউটারে রিপোর্ট তৈরি করে রোগীদের নাম ঠিকানায় রিপোর্ট পাঠিয়ে দিতো। তারা করোনা টেস্ট করার নাম করে দেশের নাগরিকদের কাছে পাঁচ হাজার টাকা এবং বিদেশিদের কাছ থেকে ১০০ ডলার করে নিতো। আমরা এই ভয়াবহ তথ্য জানতে পেরে তাদের আরও জিজ্ঞাসাবাদ করি। তারা আমাদের জানায় এর সঙ্গে জেকেজি গ্রুপ জড়িত। এরপর আমরা ওই গ্রুপে যাই। সেখানে গিয়ে আমরা জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরীসহ চারজনকে গ্রেফতার করি। তাদের কাছ থেকেও আমরা করোনা টেস্টের নকল রিপোর্ট উদ্ধার করি।’
এছাড়াও পুলিশ ওই অফিস থেকে অনুমোদিত করোনা কিট উদ্ধার করে। গ্রেফতারকৃত ছয়জনকে পুলিশ ফের জিজ্ঞাসাবাদ করে। জেকেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান কে তা তাদের কাছে জানতে চায় পুলিশ। তারা ছয়জনই গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে ডা. সাবরিনা চৌধুরীর নাম বলেন।
হারুন অর রশীদ বলেন, তিনি (ডা. সাবরিনা) একজন সরকারি চিকিৎসক। তার কাছে আমি জানতে চেয়েছি, তিনি জেকেজি গ্রুপের চেয়ারম্যান কিনা? তিনি অস্বীকার করেছেন। চেয়ারম্যান না হলে তিতুমীর কলেজে ঘটে যাওয়া একটি বিষয়ে প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান ও মুখপাত্র হিসেবে গণমাধ্যমে কথা বলেছেন কেন এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবরিনা জানান, তার স্বামী (আরিফুল হক চৌধুরী) তাকে কথা বলতে বলছেন। সাবরিনাকে আরও বিভিন্ন প্রশ্ন করা হলে, তিনি কোনও সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি বলেও জানান হারুন অর রশীদ।
হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা আগামীকাল তাকে আদালতে হাজির করে রিমান্ড চাইবো। আমরা তাকে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদ করবো। এর সঙ্গে যদি আরও কেউ জড়িত থাকে তাহলে আমরা তাকেও গ্রেফতার করবো। আপাতত আমরা তাকে একটি মামলায় গ্রেফতার দেখিয়েছি। রিমান্ডে আনার পরে যদি আরেও কোনও অপরাধের সঙ্গে তার সম্পৃক্ততা পাই তাহলে সেক্ষেত্রে অন্যান্য ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
ডিসি হারুন বলেন, একজন সরকারি চিকিৎসক হিসেবে অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের তিনি চেয়ারম্যান হতে পারেন না। আবার সেটির মুখপাত্র হিসেবে বক্তব্যও দিতে পারে না। আমরা যখন তাদের প্রতিষ্ঠানের লোকজনকে গ্রেফতার করলাম তখন আবার তাকে চেয়ারম্যান পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও সাবরিনা চৌধুরী তার ফেসবুকে জেকেজির পক্ষেও স্ট্যাটাস দিয়েছেন। তিতুমীর কলেজের ঘটনায় যে বিবৃতি দিয়েছেন সেই ঘটনায়ও উনি ওনার দায় এড়াতে পারেন না। উনি এর কোনওটির সদুত্তর দিতে পারেননি।
জেকেজির লোকজন থানায় ঢুকে থানা ভাঙচুর করেছে, পুলিশকে আঘাত করেছে এই ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে একটি মামলা করেছে। জেকেজির প্রধান নির্বাহী আরিফুল হক চৌধুরী থানায় ঢুকে হাজতখানায় সিসি ক্যামেরা ভাঙচুর করেছেন এই ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। আরও দুটি মামলা আছে বলেও জানান হারুন অর রশীদ।