বিশ্বব্যাপী করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাবের কারণে লকডাউনসহ জনজীবনে যে দুর্বিষহ অবস্থা বিরাজ করছে, এই দুর্যোগময় মুহূর্তে বাংলাদেশের নিরন্ন, দুস্থ ও নিম্ন্ন আয়ের মানুষের মধ্যে দলীয় ত্রাণ বিতরণের হিসাব জানতে চেয়ে স্থানীয় নেতাদের চিঠি দিয়েছে বিএনপি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত চিঠি বিএনপির সংসদ সদস্য, গত সংসদ নির্বাচনের প্রার্থী, জেলা কমিটির সভাপতি বা আহ্বায়কদের কাছে পাঠানো হয়েছে। চিঠি পাঠানোর বিষয়টি ভোরের পাতাকে নিশ্চিত করেছেন রুহুল কবির রিজভী নিজেই।
দলীয় সূত্র জানায়, গত ২৪ এপ্রিল থেকে এই চিঠি বিতরণ শুরু হয়। ‘করোনা মহামারির বর্তমান সঙ্কটকালে ত্রাণ তৎপরতার বিবরণ প্রসঙ্গে’ শিরোনামে ওই চিঠিতে বলা হয়, ‘আপনি আপনার এলাকার দায়িত্বশীল নেতা হিসেবে চলমান সঙ্কট মোকাবিলায় কী কী উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, অনুগ্রহ করে সেই বিষয়ে একটি প্রতিবেদন এই চিঠি পাওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে প্রেরণ করার জন্য অনুরোধ করা যাচ্ছে।’
চিঠি প্রাপ্তির কথা জানিয়ে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভােকেট আব্দুস সালাম আজাদ বলেন, আমার এলাকায় আমি অন্তত সহস্রাধিক পরিবারে খাদ্য সহায়তা করেছি। আগামীতে এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। করোনা মোকাবিলায় আমরা মানুষের পাশে আছি।
ঢাকা জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক এমপি ডাঃ দেওয়ান মোঃ সালাউদ্দিন বাবু ভোরের পাতাকে বলেন, করোনা ভাইরাসের কারনে সৃষ্ট পরিস্থিতি মোকাবেলায় জেলার সকল বিভিন্ন ওয়ার্ডের কর্মহীন অসহায়, দুস্থ ও দরিদ্র ১০ হাজার পরিবারের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ কার্যক্রম চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে জেলা বিএনপি আরো প্রস্তিুতি নিচ্ছে বলেও জানান তিনি।
চিঠি প্রাপ্তির কথা জানিয়ে গাজীপুর বিএনপির সভাপতি ফজলুল হক মিলন এ বিষয়ে ভোরের পাতাকে বলেন, দলীয় সকল নেতাকর্মীকে যার যার সাধ্য মতো কর্মহীন মানুষগুলোর পাশে দাঁড়ানোর নির্দেশ দিয়েছি। আমার জেলায় ইতোপূর্বে প্রায় ১৪ হাজার করোনায় কর্মহীন,অসহায় মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে।
কিশোরগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরিফুল ইসলাম ভোরের পাতাকে বলেন, কিশোরগঞ্জ জেলায় বিএনপির পক্ষ থেকে অন্তত ২০ হাজার পরিবারকে সহায়তা করা হয়েছে। যাতে আনুমানিক খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ থেকে ৮০ লাখ টাকা। খাদ্য সামগ্রী, মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া জেলা-উপজেলার সাংবাদিকদের মধ্যে পিপিই বিতরণ করা হয়েছে। পরবর্তীতে আরও বিতরণ করা হবে। সময় মতো দলকে পূর্ণাঙ্গ হিসাব জানানো হবে। কুমিল্লা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. আব্দুল আউয়াল খান বলেন, এক যুগ ধরে আমাদের নেতাকর্মীরা নির্যাতিত হচ্ছেন। পাবলিকলি সেভাবে আমরা ত্রাণ বিতরণ করতে পারিনি। আমাদের নেতাকর্মী যারা আছেন তাদের সাধ্য মতো সহযোগিতা করে যাচ্ছি।
এবিষয়ে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির আহবায়ক বলেন, বর্তমানে করোনা ভাইরাস সারা বিশ্বের এক আতঙ্ক বিরাজ করছে। এ ভাইরাসে বাংলাদেশেও মৃত্যু ও আক্রান্ত দিন দিন বেড়েই চলেছে। ফলে খাদ্য সংকটে পড়েছে নিন্ম ও মধ্য আয়ের মানুষেরা। এজন্য তারেক রহমানের নির্দেশে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপি পক্ষ থেকে আমরা যতটুকু পেরেছি হতদরিদ্র ও অসহায়দের পাশে দাড়ানোর চেষ্টা করেছি। সমাজের পিছিয়ে থাকা জনগোষ্টির সাহায্যের জন্য বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহবান জানান তিনি।
ঝিনাইদহ জেলা বিএনপির সদস্য সচিব এ্যাড. এম এ মজিদ ভোরের পাতাকে বলেন, ঝিনাইদহ শহরের বিসিক শিল্পী নগরী এলাকা, ঝিনাইদহ সদর থানা ও হরিনাকুন্ডু উপজেলার বিভিন্ন স্পটে ৫ হাজার মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, ঘরবন্দি কোন মানুষ খাবারের কষ্ট করলে তাকে জানাতে অনুরোধ করা হয়েছে। তিনি খাদ্যহীন মানুষের ঘরে খাবার পৌছে দিতে বদ্ধপরিকার।
বিএনপির ফরিদপুর বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মো. সেলিমুজ্জামান সেলিম ভোরের পাতাকে বলেন, হ্যাঁ, আমি চিঠি পেয়েছি। বিশ্বব্যাপী এই প্রাণঘাতী করোনা মহামারিতে আমি গোপালগঞ্জ জেলায় অন্তত চার শতাধিক পরিবারকে সহায়তা করেছি। এটাকে ত্রাণ বলা যাবে না। কারণ, আমি আমার নেতাকর্মীদের সহযোগিতা করছি। পরবর্তীতে আরও সহায়তা করা হবে।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক এ টি এম আকরাম হোসেন তালিম চিঠি প্রাপ্তির কথা জানিয়ে ভোরের পাতাকে বলেন, জেলার সকল ইউনিয়ন ও ওয়ার্ডে ইতোপূর্বে ১০ হাজারেরও বেশি অসহায় পরিবারকে খাদ্য সামগ্রী বিতরণ করেছি। তিনি বলেন, দেশের এই দুর্দিনে আমরা সবাই যদি নিজ নিজ এলাকার অসহায় মানুষের দায়িত্ব নেই তাহলে এই দুর্যোগ মোকাবেলা করা অনেক সহজ হবে। মানুষ মানুষের জন্য এটাই হোক আমাদের অঙ্গীকার।
বাগেরহাট জেলা বিএনপির সদস্য কাজী খায়রুজ্জামান শিপন ভোরের পাতাকে বলেন, বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে প্রাণঘাতী করোনা প্রতিরোধে আমার নির্বাচনী এলাকা মোড়েলগঞ্জ-শরণখোলার প্রত্যেক ওয়ার্ডে ওয়ার্ডে অসচ্ছল, করোনায় কর্মহীন শ্রমজীবি, দুস্থ্য পরিবারের মাঝে ইতোপূর্বে প্রায় ৮ হাজার পরিবারকে ত্রাণ বিতরণ করেছি। এই খাদ্য সহায়তা স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের নেতৃবৃন্দ বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে পৌঁছে দিচ্ছে। যতদিন করোনা প্রভাব থাকবে ততদিন এ খাদ্য সহায়তা অব্যহত থাকবে বলেও তিনি জানান।
উল্লেখ্য সম্প্রতি সাংবাদিকদের কাছে দলটির সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী দাবি করে বলেন, তাদের দলের নেতা-কর্মীরা সামর্থ্য অনুযায়ী সারা দেশে ইতোপূর্বে ১০ লাখ মানুষের মধ্যে ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করেছেন।