আমার বাংলাদেশ পার্টি-এবিপি প্রধান এ এফ এম সোলায়মান চৌধুরীর কারণেই শেষ হয়ে যায় ফেনীর বহুল আলোচিত জয়নাল হাজারীর বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক ক্যারিয়ার। সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ফেনীর মাস্টার পাড়ায় জয়নাল হাজারীর বাসভবনে যে যৌথ অভিযান পরিচালিত হয় তাতে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাবেক এই সচিব। তখন তিনি ফেনীর জেলা প্রশাসক (ডিসি)।
পুরো ফেনী শহরে বৈদ্যুতিক আলো নিভিয়ে দিয়ে রীতিমতো কমান্ডো স্টাইলে জয়নাল হাজারীর বাড়িতে অভিযানের পুরো পরিকল্পনার অন্যতম ‘মাস্টার মাইন্ড’ ছিলেন জামায়াতের সাবেক এই মজলিশে শুরার সদস্য।
ফেনীর ওই ঘটনা জেলা প্রশাসক যেভাবে গণমাধ্যমের সামনে তুলে ধরে এবং জয়নাল হাজারীর বাড়িতে যেসব মালামাল উদ্ধার দেখানো হয় বা পুরো প্রশাসনকে যেভাবে জয়নাল হাজারী এবং আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, তাও ছিল নজিরবিহীন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, ওই সময়ে এই ঘটনা সন্ত্রাস বিরোধী, গডফাদার বিরোধী বা এরকম মনে হলেও পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছে বিশেষ রাজনৈতিক মতাদর্শে সোলায়মান চৌধুরী বিশ্বাসী ছিলেন বলেই জয়নাল হাজারীকে জাতির সামনে অত্যন্ত নেতিবাচকভাবে উপস্থাপন করে আসলে পুরো আওয়ামী লীগকেই বিতর্কিত করা ছিল তার উদ্দেশ্য। অথচ তিনি আওয়ামী লীগ আমলেই ফেনীর জেলা প্রশাসক হয়েছিলেন। এর আগে আওয়ামী লীগ সরকারই তাকে কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন।
ওই অভিযানের সময় জয়নাল হাজারী ভাগ্যগুণে পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, তিনি তার রাজনৈতিক কর্মী এবং শুভাকাঙ্ক্ষিদের সহযোগিতায় ভারতের ত্রিপুরায় গিয়ে অবস্থান নেন।
ফলে ২০০১ সালের নির্বাচনে জয়নাল হাজারী অংশ নিতে পারেননি। ওই ঘটনা এমনভাবে প্রচার করা হয়, তাতে তার যে সব রাজনৈতিক সহকর্মী, সহযোদ্ধা ফেনীতে ছিলেন তাদেরকেও প্রশাসন কোণঠাসা করে ফেলে। পরে জয়নাল হাজীরার বিরুদ্ধে একাধিক মামলাও হয়। বিএনপি জামায়াত জোর ক্ষমতা আসে। জয়নাল হাজারীর স্বাভাবিক রাজনৈতিক জীবনে ফেরার পথও রুদ্ধ হয়ে যায়। মুক্তিযোদ্ধা এই নেতার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারই ধ্বংস হয়ে যায়।
আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ফেনীতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওই অভিযানে জেলা প্রশাসক হয়ে কীভাবে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন তা নিয়েও বিতর্ক ছিল। ওই সময় আওয়ামী লীগও বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিল। ওই প্রশ্ন যে যথার্থ ছিল এখন তা স্পষ্ট হয়েছে।
ফেনীতে জয়নাল হাজারী বিরোধী অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়ার পর পরই সোলায়মান চৌধুরী নিজেকে আওয়ামীবিরোধী হিসেবেও উপস্থাপন করতে সক্ষম হন। পরবর্তীকালে বিএনপি-জামায়াত সরকারের কাছেই যুগ্মসচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে দেশের শীর্ষস্থানীয় সেক্টর করপোরেশন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান নিযুক্ত হন। পরে বাংলাদেশ জুট মিলস করপোরেশনের (বিজেএমসি) চেয়ারম্যানও করা হয় তাকে। অবিভক্ত ঢাকার সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, অতঃপর পাট ও বস্ত্র সচিব, তৎকালীন সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সচিব করে তাকে পুরস্কৃত করা হয়।
জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবউল আলম হানিফ বলেন, ‘ডিসি সোলায়মান ছাত্রজীবনে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিল। পরে সে জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়। সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়ার আগ পর্যন্ত জামায়াতের রাজনীতি করতো।’ তিনি অভিযোগ করে বলেন, সোলায়মান চৌধুরী যতদিন চাকরি করেছে নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে সব সময় স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিকে সুবিধা দিয়েছে। এর অংশ হিসেবে আওয়ামী লীগকে বিতর্কিত করার জন্য ফেনীর ঘটনা ঘটিয়েছে।’
সোলায়মান চৌধুরী এখনো বসে নেই উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের এই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, ‘ এখন সে জামায়াতের বি-টিমের নেতৃত্ব দিচ্ছে।এরা কখনোই বাংলাদেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে বিশ্বাস করে না। পাকিস্তান প্রীতি লালন করে।’