পৃথিবীতে যে রাজনৈতিক শক্তি বা দল সে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে নূন্যতম ভূমিকা পালন করে, সেই দল বা শক্তির সামনে কঠিন সময় আসতে পারে। কিন্তু সেই রাজনৈতিক দলটি কঠিন সময় পার করে আবারো ঘুরে দাঁড়াতে পারে। কখনো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি বিলীন হয় না। কিন্তু যে শক্তি বা দল কোনও দেশের স্বাধীনতা অর্জনের সময় বিরোধিতা করে, সেই দলের কোনো আদর্শ থাকে না। তাই সেটি বিলীনও হয়ে যায়। বাংলাদেশের সুমহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিরোধিতাকারী রাজনৈতিক শক্তির নাম বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী। দলটি ইতিমধ্যেই নিবন্ধন হারিয়ে রাজনৈতিক মাঠ থেকে ছিটকে পরেছে। তাই সুকৌশলে আবারো ষড়যন্ত্রের ঝাল বুনতেই মাঠে নেমেছে।
সারা পৃথিবী যখন করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় ব্যস্ত, তখনই জামায়াত থেকে সুকৌশলে বের হয়ে এসে নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে সামনে আসলো দলটির সাবেক নেতারা। জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা ও বহিষ্কৃতদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক উদ্যোগ ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ বা এবি পার্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে সংগঠনটির।
‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’- স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে দলটির নাম ঘোষণা দেয়া হয়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী আহ্বায়ক এবং জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে সদস্যসচিব উল্লেখ করে ২২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।
এখানে উল্লেখ করা ভালো যে, সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী আহ্বায়ক জামায়াতের সাবেক কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য। তিনি বিএনপি সরকারের আমলে নানাভাবে পদোন্নতি ভাগিয়ে নিয়েছিলেন শুধুমাত্র জামায়াতের পরীক্ষিত লোক হিসাবে। এছাড়া জামায়াতের ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্র শিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে খুব সুকৌশলে বহিষ্কার করেছিল দলটি। কেননা, জামায়াত নিষিদ্ধ হলে বিকল্প দল গঠনের জন্য নিজেদের পরীক্ষিত সৈনিকদের দিয়েই কাজ চালানোর জন্যই এই বহিষ্কার করা হয়েছিল। এক্ষেত্রে নিবন্ধন হারানোর পরও জামায়াত নতুন করে রাজনৈতিক চাল চেলেই আমার বাংলাদেশ পার্টি নামে যে রাজনৈতিক দলটির আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কোর্ধ্ব জাতীয় অর্জন আখ্যা দিয়ে মজিবুর রহমান মঞ্জু শনিবার সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘ধর্ম ও স্বাধীনতাকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবে এবি পার্টি। কিন্তু সারাজীবনই বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বিরোধীতাকারী এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় প্রত্যক্ষ বিরোধীতাকারী দলের একজন শীর্ষ সাবেক নেতা তার আদর্শকে ভুলে যেতে পারেন না। তাই তিনি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে শুরুতেই মিথ্যাচার করেছেন।
মূলত, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সুযোগ্য কন্যা, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ আজ বিশ্বের বুকে উন্নয়নের রোল মডেল। এই উন্নয়নের ধারাকে ব্যাহত করতে নতুন করে ষড়যন্ত্রের জাল বুনতেই অত্যন্ত সুকৌশলে করোনা সংকটকালীন সময়ে জামায়াত পুরনো বোতলে নতুন মদ ঢালার মতোই আমার বাংলাদেশ পার্টির আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছে।
নতুন এই রাজনৈতিক দলটির আদর্শ নিয়ে যতই শ্রুতিমধুর কথা বলা হোক না কেন, আদতে দলটির আশা আকাঙ্ক্ষাই হচ্ছে বর্তমান সরকারের বিরোধিতা করে দেশকে অকার্যকর ও ব্যর্থ রাষ্ট্র হিসাবে বিশ্বের কাছে তুলে ধরা। জঙ্গিবাদ থেকে শুরু করে মানবতা বিরোধী অপরাধে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে বর্তমান সরকার নতুন প্রজন্মের কাছে অধিক গ্রহণযোগ্য হওয়ায় এবং জামায়াত সরাসরি রাজনীতিতে বিতাড়িত হয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্যই এই কথিত রাজনৈতিক দল নিয়ে মাঠে নেমেছে।
আমাদের সমাজে বিশেষ করে প্রশাসনের কতিপয় কর্মকর্তা এখনো তাদের বক্তব্যের শেষে জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু বলেন না। তারাও মনেপ্রাণে জামায়াতপন্থী। তারা মুখে মুখে অনেক কথা বললেও, এখনো স্বপ্ন দেখেন একদিন এদেশে জামায়াতে ইসলামীর সরকার ক্ষমতায় আসবে। কিন্তু বাংলাদেশে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক সন্তানরা যতদিন বেঁচে আছেন, তা কোনো দিনই সম্ভব হবে না। জামায়াত বিএনপির মতো বিষধর সাপের ন্যায় রাজনৈতিক শক্তির সাথে কোনো আপোষ হতে পারে না। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার কন্যা শেখ হাসিনার সৈনিকরা জামায়াতের সকল ষড়যন্ত্রের ঝাল ছিন্নভিন্ন করে দিবে। এই বাংলাদেশে আর কোনোদিন জামায়াতের মতো রাজনৈতিক শক্তির উত্থান ঘটবে দিবে না বঙ্গবন্ধুর আদর্শিক সন্তানরা। বুকের শেষ বিন্দু দিয়ে হলেও জামায়াতের বিরুদ্ধে লড়াই করে যাবো বলে আমি দৃঢ়ভাবে প্রতিজ্ঞা বহুআগেই করেছি। অনেক ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করেই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ার জন্য শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে প্রতিনিয়তই কাজ করে যাচ্ছি। এদেশের প্রশাসনে এখনো জামায়াত বিএনপির কিছু লোক আছে যারা মুখে মুখে বাংলাদেশ প্রেমী, কিন্তু অন্তরে পাকিস্তানের প্রতি প্রেম। বাংলাদেশ ব্যাংকের ইতিহাস গ্রন্থে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে অবমাননার দায়ে মহামান্য হাইকোর্টে রিট করেছিলাম। তারপর নানান হুমকি এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে আর্থিক ক্ষতির পরও লড়াই থেকে সরে আসেনি। আরেকটা কথা বলতেই হয়, হয়তো এখনই এদেশে জামায়াত শিবির মুক্ত করা যাবে না; কিন্তু জামায়াতমুক্ত সরকার গঠন করা খুবই সম্ভব।
দেশপ্রেমিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী থেকে শুরু করে গোয়েন্দা সংস্থার সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে বিনীত আবেদন এই যে, খোলসবন্দী জামায়াতের নতুন সংস্করণ এই রাজনৈতিক দলটি যেন দেশে নতুন করে কোনো নাশকতা চালাতে না পারে এবং ভিত গড়তে না পারে সেদিকে খেয়াল রেখে তাদের সকল কর্মকাণ্ড ও গতিবিধি নজরদারিতে আনা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আমলে অর্জিত সুনামগুলো যেন এই অপশক্তির রাজনৈতিক দলের হাতে ভূলুণ্ঠিত না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখা জরুরি বলে মনে করি। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শিক সন্তান হিসাবে জামায়াতের মতো বিষধর রাজনৈতিক শক্তির বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে। জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।