করোনার প্রকোপের মধ্যে সবাই যখন দিশেহারা তখন নতুন রাজনৈতিক দল নিয়ে সামনে আসলো জামায়াতের সাবেক নেতারা। জামায়াত থেকে বেরিয়ে আসা ও বহিষ্কৃতদের সমন্বয়ে রাজনৈতিক উদ্যোগ ‘জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ’ নামে সংগঠনটি নতুন রাজনৈতিক দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে।
শনিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর বিজয়নগর এলাকায় সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’ বা এবি পার্টি হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘটেছে সংগঠনটির।
‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার’- স্বাধীনতার ঘোষণাপত্রের এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে দলটির নাম ঘোষণা দেয়া হয়। জামায়াতের কেন্দ্রীয় শুরা সদস্য ও সাবেক সচিব এএফএম সোলায়মান চৌধুরী আহ্বায়ক এবং জামায়াত থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রশিবিরের সাবেক সভাপতি মজিবুর রহমান মঞ্জুকে সদস্যসচিব উল্লেখ করে ২২২ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির নাম ঘোষণা করা হয়।
‘মহান মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কোর্ধ্ব জাতীয় অর্জন’ আখ্যা দিয়ে মঞ্জু বলেন, ‘ধর্ম ও স্বাধীনতাকে সকল বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে একটি কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কাজ করে যাবে এবি পার্টি।’
তিনি বলেন, ‘মতবাদ, মতাদর্শ যার যার, রাষ্ট্র আমাদের সবার। মতবাদ ও মতাদর্শের উর্ধ্বে উঠে অধিকার আদায়ের রাজনীতি করবে এবি পার্টি।’
সংগঠনের আত্মপ্রকাশ অনুষ্ঠানে সদস্যসচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু বলেন, ‘সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার-এই তিন মূলনীতির ভিত্তিতে জনআকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ পুনর্গঠনে নতুন রাজনৈতিক দল ‘আমার বাংলাদেশ পার্টি’র (এবি পার্টি) আত্মপ্রকাশ। তিনি বলেন, অকার্যকর রাষ্ট্রের পুনর্গঠনের জন্যই দরকার নতুন রাজনীতি।
রাষ্ট্রের সর্বস্তরে প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো, শৃঙ্খলা ও ভারসাম্য ভেঙে পড়েছে দাবি করে এবি পার্টির সদস্যসচিব বলেন, ‘জাতীয় স্বার্থসুরক্ষা ও নিরাপত্তা, নাগরিক অধিকারের নিশ্চয়তা এবং সাংবিধানিক দায়-দায়িত্ব পালনের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে রাষ্ট্রের প্রতিটি অঙ্গ। একই সঙ্গে সামাজিক প্রতিষ্ঠান, নাগরিক উদ্যোগ, সংবাদমাধ্যম কেউই আর নির্বিঘ্নে নির্ভয়ে ক্ষমতাসীনদের অনিয়মের সমালোচনা, সত্য প্রকাশ ও জবাবদিহিতার দাবিতে সোচ্চার হতে পারছে না। যেকোনো অন্যায় ও অনিয়মের বিরুদ্ধে মানুষের প্রতিকার চাওয়া এবং পাওয়ার শেষ আশ্রয়স্থল বিচার বিভাগ। স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকে নিরঙ্কুশ করার উগ্র বাসনায় সংবিধান পরিবর্তন করে বিচার বিভাগকে নির্বাহী কর্তৃত্বের অধীনস্থ করার মরিয়া চেষ্টা আমরা দেখছি। শুধুমাত্র তাতে দ্বিমত পোষণ করায় অনেক অবিচার ও অনিয়মের সহযোগী হয়েও সাবেক প্রধান বিচারপতি অপমান-অপদস্থ হয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বিচারিক স্বাধীনতার ভিত্তিকে ক্ষতবিক্ষত করা হয়েছে। ক্ষমতার পৃথকীকরণসহ যা কিছু প্রাতিষ্ঠানিক সুরক্ষা তৈরি করা হয়েছিল, তার প্রায় সবগুলোই আজ অকার্যকর।’
মঞ্জু বলেন, ‘এই অচলায়তন ভাঙতে প্রয়োজন নতুন রাজনীতি। যে রাজনীতি জাতিকে স্বপ্ন দেখাবে, আশা দেখাবে, উদ্বুদ্ধ করবে নতুন চেতনায়। অন্যথায় অকার্যকর রাষ্ট্রটিই থেকে যাবে করোনা-উত্তর সময়ে। জন-আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ সেই লক্ষ্যেই ঘোষণা করছে সম্পূর্ণ নতুন ধারার এই রাজনৈতিক দল। আমাদের লক্ষ্য কেবল গাল-সর্বস্ব স্লোগান নয়। রাষ্ট্রের পুনর্গঠন আমাদের অন্যতম এজেন্ডা।’
তিনি বলেন, ‘সাম্প্রতিক করোনা-সংকট আমাদের নতুন করে বুঝিয়ে দিয়েছে যে, কতটা ব্যর্থ এই সরকার রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে। কতটা প্রয়োজন আজ নতুন করে এই রাষ্ট্রকে গড়বার, যেটাকে আমরা বলছি মুক্তিযুদ্ধের ঘোষণাপত্রের আলোকে দ্বিতীয় প্রজাতন্ত্র বিনির্মাণের লড়াই। আর সামনে আমাদের কথা ও কাজই প্রমাণ করবে আমরা কী চাই।’
অনুষ্ঠানে দলের সাত দফা কার্যক্রমের বিস্তারিত তুলে ধরেন মেজর (অব.) আবদুল ওহাব মিনার।
গত বছরের ২৭ এপ্রিল জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ-স্লোগানে নতুন রাজনৈতিক মঞ্চের ঘোষণা দিয়েছিলেন জামায়াতে ইসলামীর সংস্কারপন্থীরা। ওইদিন ‘স্বাধীন সত্তার বিকাশে অধিকার ও কল্যাণরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার রাজনীতি’ শিরোনামে ছয় পৃষ্ঠার ঘোষণাপত্র পাঠ করেন মঞ্চের সমন্বয়ক জামায়াতে ইসলামীর নেতা মজিবুর রহমান মঞ্জু।
ঘোষণাপত্রে বলা হয়, জাতীয় মুক্তি ও জন আকাঙ্ক্ষার নতুন বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে উজ্জীবিত একদল আশাবাদী মানুষের উদ্যোগ এটি। এর মাধ্যমে নিজেদের ভাবনা ও ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পরিকল্পনার কথা তুলে ধরা হবে।
সাংবাদিকদের করা প্রশ্নের জবাবে মজিবুর রহমান বলেন, জন আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ জনগণের আকাঙ্ক্ষার প্রতীক হিসেবে কাজ করবে। এটি একেবারেই প্রাথমিক প্ল্যাটফর্ম। খুব শিগগিরই বৃহৎ আকারে যাত্রা শুরু করবে।
এটি জামায়াতের বিকল্প কোনো দল কি না- জানতে চাইলে তিনি বলেন, না, এটি একেবারেই স্বতন্ত্র একটি দল হিসেবে আত্মপ্রকাশ করবে। আমরা সব দলের লোকদেরই এখানে আমন্ত্রণ জানাবো।