বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তার মায়ের মৃত্যুর ব্যাখ্যা চেয়ে ইউনাইটেড হাসপাতালকে লিগ্যাল নোটিশ
ইউনাইটেড হাসপাতাল লিমিটেডের কাছে হাসপাতালের চিকিৎসক এবং মেডিকেল কর্মীদের পেশাদার অসদাচরণ, অবহেলা ও দুর্ব্যবহারের কারণে বিশ্বব্যাংকের এক কর্মকর্তার মায়ের মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা চেয়ে বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্টের এক আইনজীবী আইনি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে কম্বোডিয়ায় দায়িত্বরত ড. জিয়াউদ্দিন হায়দারের পক্ষে আইনজীবী মোঃ গোলাম মোস্তফা (শাহীন) ইউনাইটেড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রহমান খান ও প্রধান কার্যনির্বাহী কর্মকর্তা এম ফয়জুর রহমানকে এই লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয় এবং আগামী ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে বিষয়টি ব্যাখ্যা করতে বলা হয়।
নোটিশে বলা হয়, ড. জিয়াউদ্দিন হায়দারের মা মাহমুদা খাতুনকে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ পত্র জমা দিয়ে ১২ এপ্রিল মধ্যরাতে ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
মাহমুদা খানমের অবস্থার অবনতি হওয়ায় এবং শ্বাস নিতে সমস্যা দেখা দেওয়ায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে নিবিড় পরিচর্যা ইউনিটে নিয়ে যায় এবং কৃত্রিম বায়ুচলাচল সুবিধার মাধ্যমে অক্সিজেন সহায়তা সরবরাহ করে। কার্যত, তিনি লাইফ সাপোর্টের অধীনে ছিলেন।
১৪ই এপ্রিল ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ড. জিয়াউদ্দিন হায়দারের ভাইদের জানায়, ১৩ এপ্রিল ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষ থেকে আইইডিসিআর এর করা দ্বিতীয় কোভিড-১৯ পরীক্ষাটি পজিটিভ হওয়াই তাকে ভেন্টিলেটর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে সরিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেয়। তখন মাহমুদা খানমের ছেলেরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে কোভিড-১৯ চিকিত্সা সুবিধা সহ অন্য হাসপাতালে স্থানান্তর করতে বলেছিলেন।
নোটিশটিতে আরও বলা হয়, মাহমুদা খানমের ছেলেরা ইউনাইটেড হাসপাতালের আকস্মিক এই সিদ্ধান্ত নিয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ভেন্টিলেটর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন না করে তাকে ছাড়িয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে যুক্তি দেন।
অপরদিকে, ২০শে এপ্রিলের তৃতীয় টেস্টে মাহমুদা খানমের করা কোভিড-১৯ রিপোর্ট ফের নেগেটিভ আসে। এমনকি, ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষ থেকে আইইডিসিআর এর দেওয়া ১৩ই এপ্রিলের দ্বিতীয় টেস্টটির ফটোকপি সার্টিফিকেটে তার জেন্ডার মহিলা'র বধলে সেখানে পুরুষ উল্লেখ করা হয়।
নোটিশে অভিযোগ করে আরও বলা হয়, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ১,৮১,৮৪৬ টাকার বিল পাওয়ার পরে অবিলম্বে মাহমুদা খানমের শারীরিক অবস্থার অবনতি থাকার পরও চিকিত্সা কর্মী এবং চিকিৎসকরা তার ছেলেদের অনুরোধ সত্ত্বেও হঠাৎ করে অক্সিজেন সহায়তা সহ ভেন্টিলেটর থেকে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে তাকে ছাড়পত্র দিয়ে দেয়। তার ছেলেরা হাসপাতালের কর্মীদের মোবাইল ভেন্টিলেশন এবং অক্সিজেন সহায়তায় সজ্জিত একটি অ্যাম্বুলেন্স তাকে অন্য হাসপাতালে স্থানান্তরিত করার জন্য অনুরোধ করেছিল।
নোটিশে অভিযোগ করা হয় যে, হাসপাতালের ডাক্তার এবং কর্মীরা এ জাতীয় গুরুতর রোগীর প্রতি ন্যূনতম কোন পেশাদার চিকিৎসার দায়িত্ব প্রদর্শন করেননি। ইউনাইটেড হাসপাতাল থেকে কুয়েত মৈত্রী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে যাওয়ার সময় কৃত্রিম বায়ুচলাচল সুবিধার অভাবে মাহমুদা খানম কোমায় চলে যান এবং এটিই তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ানোর অন্যতম কারণ ছিল। গভীর কোমা অবস্থায় হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মাহমুদা খানম ২৪ মার্চ মারা যান।
নোটিশে আরও বলা হয়, নির্ধারিত সময়ের মধ্যে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ ব্যাখ্যা করতে ব্যর্থ হলে তার ক্লায়েন্ট হাসপাতাল এবং এর কর্মীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন।