মঙ্গলবার ২৬ নভেম্বর ২০২৪ ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১

শিরোনাম: স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   স্কুলে ভর্তির আবেদন শুরু আজ   ফিল্ম সিটি থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে ‘বঙ্গবন্ধুর’ নাম   সিলেটের সাবেক সংসদ সদস্য ইয়াহিয়া গ্রেপ্তার   অনন্য অসাধারণ শেখ হাসিনা আমাদের গর্ব   নরসিংদীতে ‘থার্টি ফার্স্ট’ উপলক্ষে চাঁদা না দেয়ায় ব্যবসায়ীকে কোপালো সন্ত্রাসীরা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
ডাক্তার ভীত নয়, সুদিন আসছে, যুদ্ধে জয় ছিনিয়ে আনতেই হবে
ফারহানা নীলা
প্রকাশ: শুক্রবার, ১ মে, ২০২০, ১২:৪৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

টেস্ট, টেস্ট আর টেস্ট... কথাটার গুরুত্ব আমরা বুঝতে শুরু করেছি। ২৯ টা ল্যাবের পিসিআর মেশিনে টেস্ট হচ্ছে সরকারি, বেসরকারি মিলিয়ে। আজ নিপসমে শুরু হলো। এভারকেয়ার হাসপাতালের রিপোর্ট এসেছে। ল্যাব এইড, ইবনে সিনা আর টিএমএসএস অনুমতির অপেক্ষায় আছে। আশা করছি অতি শিগগিরই অনুমতি পেয়ে যাবে।বেসরকারি হাসপাতালে টেস্ট করতে খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৫০০ টাকা। কিন্তু সরকারিভাবে কোনো খরচ নেওয়া হচ্ছে না।বেসরকারি হাসপাতাল শুধু মাত্র ভর্তি রোগীর টেস্ট করবে।

যত টেষ্ট তত কেস.... সনাক্তকরণ প্রক্রিয়ার গতি আসবে। টেস্ট হলে আমরা রোগীকে আইসোলেশন করলে করোনা পরাভূত হবে। মানব দেহ না পেলে করোনা এমনিতেই মারা যাবে।

টেস্ট করে যদি পজিটিভ হয়েই যান, ভয়ের কিছু নেই। বাড়ীতেই আইসোলেশনে থাকুন। নিজেকে আলাদা করে ফেলুন সবার থেকে। অন্তত চৌদ্দ দিন কাটান একাএকা। তারপর আবার টেস্ট... নেগেটিভ এলে আপনি মুক্ত। দুবার টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসাটা বাঞ্ছনীয়। সেটা সাতদিন এবং দশ দিন পর। আবার একবারে চৌদ্দ দিন পরেও হতে পারে। তবে অনেক সময় ন্যাসাল সোয়াবে অনেকদিন পর্যন্ত ভাইরাসের আরএনএ থাকতে পারে। কেউ বলে ত্রিশ দিন। আবার কেউ বলে সাঁইত্রিশ দিন। যেটাই হোক আপনি সুস্থ হবার পরও আরে ২/৩ সপ্তাহ মাস্ক ব্যবহার করুন। সাবধানের মার নেই।

আপনি যে ঘরে ছিলেন, সেই ঘর এখন জীবাণু মুক্ত করুন। কাঁথা, বালিশের কভার, চাদর গরম পানিতে সাবান দিয়ে ভিজিয়ে রাখুন। অন্তত আধাঘন্টা পর ধুয়ে ফেলুন। বেশী হলেও ক্ষতি নেই। তোষক, বালিশ রোদে দিন। ঘরের সব কিছু ব্লিচিং পাউডার পানিতে গুলিয়ে অন্ততপক্ষে পনেরো মিনিট রাখুন। দরজা, জানালা খুলে দিন। তারপর মুছে ফেলুন। বাথরুমের মেঝে থেকে শুরু করে কলের নব... সব এভাবে পরিষ্কার করুন।

মনে রাখবেন এটা ছোঁয়াচে, খুব ছোঁয়াচে কিন্তু অস্পৃশ্য নয়। তারপর হাত ভাল করে ধুয়ে নিন। চমৎকার একটা গোসল করুন।

যদি নিজেকে সন্দেহ হয়, তবে কোয়ারেন্টিনে থাকুন চৌদ্দ দিন। যদি কোনো উপসর্গ না দেখা দেয় তবে চৌদ্দ দিন পর আপনি মুক্ত। বাড়ির সবাইকে সচেতন করুন। নিজের ঘর থেকে ভিডিও কলে কথা বলুন পরিবারের সবার সাথে। সামনাসামনি অন্তত ছয় ফুট দূরত্ব বজায় রাখুন। বাড়ির সবাইকে মাস্ক পরতে বলুন। বিশেষ করে যিনি আপনার সংস্পর্শে আসবেন বিভিন্ন সময়। যেমন খাবার দেবার সময়। ওষুধ পত্র, নিজের প্রয়োজনীয় সব নিজের ঘরেই রাখুন।

আজ তিনজন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন। তাঁরা কর্তব্যরত ছিলেন। এই কষ্ট সইবার শক্তি তাঁদের পরিবার ধারণ করুক। আমরা শোকাহত। নারায়ণগঞ্জ জেলায় কর্তব্যরত সতেরো জন র‍্যাব সদস্য আক্রান্ত। তাঁদের আশু রোগমুক্তি কামনা করছি।

ডাক্তার, নার্স,স্বাস্থ্য কর্মী, পরিচ্ছন্নতা কর্মী, সাংবাদিক.... একের পর এক আক্রান্ত হচ্ছেন। আমরা ভীত। আমরা আতংকিত। যদিও আতংক ছড়ানো উচিৎ নয়! তবুও বলছি প্লিজ ভয় পান। ভয় না পেলে সচেতনতা আসবে না আপনাদের।

আশার কথা আরো আছে। আজ ২০০০ ডাক্তারের নিয়োগ হয়েছে। তাঁরা সবাই কোভিড যোদ্ধা হবেন। এটাও লক্ষণীয় তাঁরা কেউ ভয় পাননি। বরং তাঁরা যুদ্ধ করতে প্রস্তুতি নিয়েই যোগদান করবেন আশা করি। ডাক্তার কখনো ভীত নয়। কখনো পালানোর উপায় খোঁজে না। তবে সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চায়। পর্যাপ্ত পরিমাণে সুরক্ষা সামগ্রী চায়। নিজেকে আক্রান্ত করে রোগীর ক্ষতি করতে চায় না।

এটাও ঠিক ডাক্তার প্রণোদনার জন্য কাজ করে না। একইভাবে নিজেকে ছাড়িয়ে যায় নিজেই প্রয়োজনে। আমি বিশ্বাস করি শুধু মাত্র সুরক্ষার আশ্বাস পেলেই তাঁরা ঝাঁপিয়ে পড়েন সম্মুখ সমরে।

আজ এন্টিবডি টেস্ট বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার জন্য নেওয়া হয়েছে। গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র যে কিট নিয়ে কথা বলছেন, সেটার বৈজ্ঞানিকভাবে যাচাই করা প্রয়োজন। যদি সেটা বিবেচিত হয়, তবে আমরা আক্রান্ত আর আক্রান্ত হননি.... ভাগ করে ফেলতে পারবো। যাদের এন্টিবডি তৈরী হয়ে গেছে, তাঁদের কাজে ফিরিয়ে আনতে পারবো। অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে পারবো বলে আশা রাখি।

কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপির জন্যও এন্টিবডি টেস্ট করে ডোনার বেছে নিতে পারবো। দিল্লিতে প্রায় ৪০০ জন তাবলিগ জামাতের লোক কোভিড আক্রান্ত হয়ে সুস্থ হবার পর কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপির জন্য রক্ত দান করেছেন। আমাদের দেশেও আমরা আশাবাদী হতে পারি।

যারা মারাত্মক আক্রান্ত হবেন, ভেন্টিলেটরে আছেন, আইসিইউতে আছেন.... তাঁদের জন্য কনভালেসেন্ট প্লাজমা থেরাপি একটা চিকিৎসার উপায় হতেই পারে।আমাদের প্রটোকল তৈরী হয়ে গেছে। ওষুধ প্রশাসনের কাছে খুব জলদি জমা দেওয়া হবে। আশা করছি এই চিকিৎসা শুরু হবে। তবে এন্টিবডি টাইটার দেখার জন্য এলাইজা টেস্ট করতে হবে। এন্টিবডি টাইটার ১ঃ১৬০ থাকতে হবে। আইজিজি এন্টিবডি টাইটার দেখাটা এখন আমাদের চ্যালেঞ্জ। তবে সীমাবদ্ধ গণ্ডী পেরিয়েই আমরা আশার বীজ বুনে চলি।

অল্প খরচে,কম সময়ে, কম ঝুঁকিতে... দেশের সব খানেই এই টেস্ট করা যাবে। এইজন্য আলাদা কোনো বিশেষায়িত ল্যাবরেটরী দরকার হবে না। পিসিআর ল্যাব তৈরীতে যে বিশাল খরচ, সেটাও আমরা কমাতে পারবো। এন্টিজেন টেস্ট তো থাকছেই চিকিৎসার জন্য। এন্টিজেন টেস্ট এখন পর্যন্ত একমাত্র টেস্ট চিকিৎসার জন্য।

এসব শুনে আবার বিন্দাস ঘোরাঘুরি শুরু করেন না প্লিজ। মে মাসের মাঝামাঝি আমরা বুঝতে পারবো কোন অবস্থা আমাদের! যেহেতু মুড়ির টিনে মুড়ি রেখে ঘুটাঘুটি হয়ে গেছে,তাই আমরা কেউই আর সন্দেহের ঊর্ধ্বে নই। একজন কোভিড পজিটিভ থেকে অনেক জন আক্রান্ত হতে পারেন। আবার অনেকে কোনো উপসর্গ ছাড়াই আক্রান্ত করতে পারেন অনেককে। আপাতত তিনি একদম সুস্থ, কিন্তু করোনা নিয়ে ঘুরছেন। এক্কেবারে এটম বোম তিনি। তিনি অসুস্থ নন, বিধায় টেস্ট করেননি। করার প্রয়োজন হয়নি। আমাদের সীমাবদ্ধ গণ্ডী। অনেক সীমাবদ্ধতা নিয়েই আমাদের জীবন। তাই একমাত্র উপায় প্রতিরোধ।

আমি আইসিইউ, ভেন্টিলেটর, সেন্ট্রাল অক্সিজেন সরবরাহ নিয়ে কিছুই বলছি না। কারণ এসব মাত্র পাঁচ শতাংশের লাগতে পারে। এগুলো যেন না লাগে তার চেষ্টা করাটাই হবে স্মার্টনেস।

ঘরে থাকুন, ঘরে থাকুন, ঘরে থাকুন। বাইরে মৃত্যু, বাইরে করোনা,বাইরে অনিরাপদ জীবন। নিজেকে নিরাপদ রাখুন। বিশ্বাস করুন এই দুর্যোগ কেটে যাবে একদিন। সেদিনের জন্য জমিয়ে রাখুন নিজেকে পরিবারকে।

সুদিনের হাতছানি আসছে.... চোখ মেলুন। দেখতে পাচ্ছেন? সুদিনের অপেক্ষায় আমরা না হয় আরো কিছু দিন বন্দী থাকি জীবনের জন্য, বেঁচে থাকার জন্য। বিশ্বাস করুন এইসব মানতে আর জানতে খুব বেশি লেখাপড়ার দরকার নেই। জ্ঞানী হবার দরকার নেই। শুধু দরকার সচেতনতা আর বিচক্ষণতা।

বারবার সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে নিন। সামাজিক এবং শারীরিক দূরত্ব বজায় রেখে চলুন। কিন্তু মোটেই মানসিক দূরত্ব বাড়াবেন না। আরো ঘন হোন, আরো গাঢ় হোন মনের কাছাকাছি।

আপনার আশেপাশে ক্ষুধা কাতর মানুষের আর্তনাদ। আপনার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন তাদের দিকে। ধুঁকে মরছে মানুষ। কাঁদছে জীবন। রাস্তায় বের হলে দশ, পনেরো জনের হাত এগিয়ে আসে। আপনার নিকট আত্মীয় স্বজনরা কেমন আছেন? খোঁজ নিন। আপনার প্রতিবেশী কেমন আছেন? খোঁজ নিন। আপনার গ্রামের মানুষগুলো কেমন আছে? খোঁজ নিন।

ডাক্তারদের জন্য কোনো একটা ভবনের ছাদে চিকিৎসার ব্যবস্থ হচ্ছে জানলাম। ডাক্তার আলাদা কোনো এলিয়েন নয়। তাঁরা জনগনের খুব কাছাকাছি থেকে জীবন পাড়ি দেয়। নাড়ী টিপেই তাঁরা রোগ আর রোগীর সাথে জীবনের সময়গুলো কাটায়। তাঁদের জন্য হাসপাতালে চিকিৎসাই যথেষ্ট। তাঁরা সহমর্মিতা চায়। চায় আন্তরিকতা।

করোনা পরীক্ষায় ফলাফল কখনো ভুল হচ্ছে। নমুনা সংগ্রহ সঠিকভাবে না করলে আমরা তো সফল হতে পারবো না। যার যার কাজ তাকেই করতে হবে। টেকনোলজিস্ট এই কাজের জন্য নির্ধারিত জনবল।

ওয়ালটন দেশীয় প্রযুক্তিতে ভেন্টিলেটর তৈরি করছে। আমাদের যুব সমাজের এই উদ্ভাবনী সৃষ্টির কাছে আমরা নতজানু।

টেস্ট করার পর রিপোর্টের জন্য মানুষের আহাজারি আর আতংক। এই আতংকিত সময় আর দীর্ঘায়িত না হোক। আমরা তাড়াতাড়ি রিপোর্ট পাবার নিশ্চয়তা চাই। যারা ভুক্তভোগী, তারাই কেবল জানেন এই সময়টা কতটা দীর্ঘ?

মানসিক স্বাস্থ্যের দিকে খেয়াল দেই আমরা। মানসিক সুস্থতা আর শক্তি এখন খুব জরুরী। নিজেদের চাঙ্গা রাখতে আমাদেরই চেষ্টা করতে হবে। কোনোভাবেই ভেঙে যাওয়া যাবে না। এই বেঁচে থাকার যুদ্ধে আমাদের জয় ছিনিয়ে আনতেই হবে। তবে আমরা এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসার কথা জানি না। সম্পূর্ণ নতুন ভাইরাসের সাথে যুদ্ধটা জারী থাকুক।

লেথক: সহযোগী অধ্যাপক ও বিভাগীয় প্রধান, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, জাতীয় ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
https://www.dailyvorerpata.com/ad/BHousing_Investment_Press_6colX6in20200324140555 (1).jpg
https://www.dailyvorerpata.com/ad/last (2).gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/431205536-ezgif.com-optimize.gif
https://www.dailyvorerpata.com/ad/agrani.gif
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]