বিশ্বব্যাংক কর্মকর্তার মায়ের মৃত্যু, ইউনাইটেড হাসপাতালের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি
প্রকাশ: বৃহস্পতিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০২০, ৯:৪৩ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বিশ্ব ব্যাংকের স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা বিষয়ক কর্মকর্তা হিসেবে কম্বোডিয়ায় দায়িত্বরত ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার রাজধানীর ইউনাইটেড হাসাপাতালে তার মায়ের চিকিৎসায় অবহেলার কারণে মৃতু্যর অভিযোগ এনে হাসপাতালটির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি লেখা পাঠিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (৩০ এপ্রিল) ইংরেজি দৈনিক নিউ এইজে এ খবর প্রকাশিত হয়।
ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার চিঠিতে বলেন, ‘আমার মায়ের মৃত্যুর পর জীবনে প্রথমবারের মতো আপনার কাছে চিঠি লিখছি এবং আমার মায়ের জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছি।’
চিঠিতে তিনি জানান, তার মা মাহমুদা খানম (৭৫) ৫ এপ্রিল প্রচণ্ড সর্দি-কাশিতে অসুস্থ হয়ে পড়েন।
পরে ১১ এপ্রিল তাকে হাসপাতালে ভর্তির জন্য নেওয়া হলে দু’টি বেসরকারি হাসপাতাল তাকে ভর্তি না করিয়ে ফেরত পাঠায়। পরে তাকে উত্তরার রিজেন্ট হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়।
কিন্তু মাহমুদা খানমের শ্বাস-প্রশ্বাসে কৃত্রিম সহায়কের প্রয়োজন থাকায় ১২ এপ্রিল কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল নেগেটিভ আসার পর তাকে সেখান থেকে ইউনাইটেড হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
কিন্তু ১৩ এপ্রিল অপর নমুনা পরীক্ষায় মাহমুদা খানমের কোভিড-১৯ পজেটিভ এলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে সরিয়ে নেওয়ার জন্য স্বজনদের চাপ দিতে থাকে।
দুপুর ২টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মাহমুদা খানমকে ভেন্টিলেশন খুলে নিলে তাকে কুয়েত মৈত্রী ফ্রেন্ডশিপ হাসপাতালে স্থানাস্তর করা হয়। সেখানে ২৩ এপ্রিল তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
চিঠিতে জিয়াউদ্দিন আরো বলেন, ইউনাইটেড হাসপাতাল যেভাবে লাইফ সাপোর্টে থাকা একজন রোগীকে বলপ্রয়োগে সরিয়ে নিতে বাধ্য করেছে তা নজিরবিহীন, অনৈতিক ও বেআইনি।
এদিকে ইউনাইটেড হাসপাতালের কমিনিকেশন অ্যান্ড বিজনেস ডেভলপমেন্ট ডিরেক্টর ডা. শাগুফা আনোয়ার দাবি করেন, পরিবারে সঙ্গে আলোচনা করেই হাসপাতাল থেকে মাহমুদা খানমকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীকে নির্দিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা করানোর জন্য জাতীয় গাইডলাইন আমরা মেনে চলি যাতে অন্য সাধারণ রোগীরা এতে সংক্রমিত না হন। কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য আমাদের হাসপাতাল নির্ধারিত নয়।’
তবে, কম্বোডিয়াতে অবস্থানরত ড. জিয়াউদ্দিন হায়দার সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন, লাইফ সাপোর্টে থাকা একজন রোগীকে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ছাড়া অন্য হাসপাতালে পাঠিয়ে দেওয়া কিছুতেই গ্রহণযোগ্য নয়। এটি একটি হত্যাকান্ড। ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নীতিহীন, আইনবহির্ভূত ও কঠোর সিদ্ধান্তের কারণে আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। আমাদের পরিবারে আমরা তিন ভাইসহ পাঁচজন ডাক্তার। একটি হাসপাতালের এমন অবহেলার কারণে আমাদের মায়ের মৃত্যু কোনোভাবেই আমরা মেনে নিতে পারছি না। আম্মার মৃত্যু নিয়ে দেশি-বিদেশি সিনিয়র ডাক্তার, মানবাধিকার সংগঠনের নেতা এবং আইনজীবীদের সঙ্গে আমি কথা বলেছি। তারাও স্বীকার করেছেন, এটা একটা হত্যাকাণ্ড।