ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ডে ইসরায়েলের বর্বর হামলা চলছেই। শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) ভোর থেকে ভূখণ্ডটিতে ইসরায়েলি হামলায় প্রাণ গেছে ১৭ জনের। নিহতদের মধ্যে দুই শিশুও রয়েছে।
এদিকে গাজার তথাকথিত একটি ‘সেফ জোনে’ ইসরায়েলের বিমান হামলায় আরও ৫ শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের শিশু নিরাপত্তা ও অধিকার বিষয়ক সংস্থা ইউনিসেফ। শুক্রবার এই তথ্য জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী সাম্প্রতিক কয়েক ঘণ্টা ধরে উত্তর ও মধ্য গাজায় তাদের আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। ফিলিস্তিনের কুদস নিউজ নেটওয়ার্ক এবং প্যালেস্টাইন ইনফরমেশন সেন্টারের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার ভোর থেকে হওয়া ওই হামলায় মোট ১৭ জন নিহত হয়েছেন।
সর্বশেষ এই হামলাগুলোর মধ্যে নুসেইরাত ক্যাম্পের মিশমিশ পরিবারের বাড়িতেও একটি হামলা হয়েছে এবং সেখানে দুটি শিশু নিহত হয়েছে। এছাড়া মধ্য গাজার দেইর আল-বালাহের পশ্চিমে সালমান পরিবারের বাড়িতে একটি হামলা হয়েছে, যাতে কমপক্ষে চারজন নিহত হয়েছেন।
এদিকে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার ‘সেফ জোনে’ পাঁচ শিশু নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইউনিসেফ। জাতিসংঘের এই সংস্থাটির তথ্য অনুসারে, তথাকথিত ‘মানবিক অঞ্চলের’ মধ্যে বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদের একটি তাঁবুতে ইসরায়েলি বিমান হামলায় ওই পাঁচ শিশু নিহত এবং অন্যরা আহত হয়েছে।
আল জাজিরা বলছে, দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসের নিকটবর্তী উপকূলীয় এলাকা আল-মাওয়াসিতে এই হামলার ঘটনা ঘটে, এতে তিন ছেলে ও দুই মেয়ে নিহত হয়। সকলের বয়স সাত থেকে ১৩ বছরের মধ্যে বলে ইউনিসেফ জানিয়েছে।
জাতিসংঘের এই সংস্থাটি বলেছে, “বোমা, ঠান্ডা, রোগ এবং ক্ষুধা থেকে শিশুদের রক্ষা করার মতো জায়গা নেই। এটা (হামলা) এখনই বন্ধ করতে হবে।”
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। ইসরায়েলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। হামাসের সেই আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরায়েল গাজায় ৪৫ হাজারেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে, যাদের বেশিরভাগই নারী ও শিশু।
ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকা জুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনও ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরায়েল অবরুদ্ধ এই ভূখণ্ডে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে।
ইসরায়েল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে। গত বছর আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গাজায় যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধের জন্য ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু এবং সাবেক প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্টের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে।