ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, ‘আপন ভাই হলেও দোসরদের বিষয়ে কোনও ছাড় নেই। আমার আত্মীয়স্বজন আছে, যারা দোসরদের (ফ্যাসিবাদ) সঙ্গে ছিল, তাদের আমি বাসায়ও প্রবেশ করতে দিই না।’
তিনি বলেন, ‘ব্যবসা প্রতিষ্ঠান টিকিয়ে রাখতে ফ্যাসিবাদের দোসরদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নিতে হবে। ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানগুলোকে আমরা দলীয়করণ করার বিপক্ষে। তারেক রহমানের নির্দেশ, আমরা কোনও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানকে দলীয়করণ করতে চাই না। বাংলাদেশটা ধ্বংস হয়ে গেছে দলীয়করণের কারণে। প্রত্যেকটি জায়গায় দলীয়করণ করতে করতে দেশ আজ এ জায়গায় এসে দাঁড়িয়েছে।’
বুধবার (১ জানুয়ারি) দুপুরে চট্টগ্রাম নগরীর মেহেদীবাগের নিজ বাসভবনে চট্টগ্রাম বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের উদ্যোগে সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ীদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
আমির খসরু বলেন, ‘যখন আমি মন্ত্রী ছিলাম তখন কে কোথাকার, কোন চেম্বারের, কোন অ্যাসোসিয়েশনে কে হবে, সেসব মাথা ঘামায়নি। কারণ এটা একেবারে উচিত না। আপনাদের নেতা আপনাদেরই নির্ধারণ করতে হবে। কে নেতৃত্ব দেবে সেই সিদ্ধান্ত আপনাদের। সেখানে আমাদের কোনও সিদ্ধান্ত নেই। আমরা (বিএনপি) চাইও না।’
তিনি বলেন, ‘পরিবর্তিত পরিস্থিতি দিয়ে সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, এ সুযোগ যদি আমরা দেশকে পরিবর্তন করার জন্য এবার ব্যবহার করতে না পারি, তাহলে সবাই ডুবে যাবো। রাজনীতিবিদরা, দেশের জনগণ, ব্যবসায়ীরা ডুববে, সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশনও কাজ করতে পারবে না। তাই এ সুযোগটা নিতে হলে সবার মধ্যে সততা, স্বচ্ছতা, নতুন ভাবনা ও নতুন চিন্তায় আমাদের সামনের দিকে এগোতে হবে।’
বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘দেশটা যেভাবে দলীয়করণ এবং লুটপাটের মাধ্যমে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে। সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন কিন্তু তার বাইরের কেউ না। শুধু যে চট্টগ্রাম সিঅ্যান্ডএফ অ্যাসোসিয়েশন ধ্বংস হয়েছে তা নয়, দেশে প্রত্যেকটি প্রতিষ্ঠানই এভাবে ধ্বংস হয়ে গেছে। তাই রাজনৈতিক দল হিসেবে আমাদের দায়িত্ব হচ্ছে এ প্রতিষ্ঠানগুলোকে মুক্ত করে সবার জন্য একটি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করে দেওয়া। দল হিসেবে এ দায়িত্বটা পালন করছি। কে নেতৃত্বে যাবে, কোন দল যাবে, এসবের মধ্যে আমরা (বিএনপি) নেই। আপনারা আমাদের সহযোগিতা করুন, আমরা আপনাদের সহযোগিতা করবো যাতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে পারি।’
মাঝামাঝি অবস্থানে কোনও লাভ হবে না জানিয়ে আমির খসরু বলেন, ‘এখানে মাঝামাঝি কোনও অবস্থান নেই। মাঝামাঝি গেলে আপনাদের কোনও লাভ হবে না। দোসরদের বিরুদ্ধে যারা শক্ত অবস্থান নিয়েছে, তারা সফল হয়েছে। আর যারা নিতে পারেনি, চেষ্টা করেছে, আবার ভাবছে সম্পর্কের কথা, এখানে এসবের কিন্তু কোনও জায়গা নেই।’
আমির খসরু বলেন, ‘যারা এত বছর লুটপাট করেছে, এদের ফিরে আসার কোনও অধিকার নেই। আর ফিরে আসার দরকারও নেই, এদের তো হাজার হাজার কোটি টাকা হয়ে গেছে। তাদের আর ব্যবসা করার দরকার নেই। এদের এখন জেলে দেওয়া দরকার শুধু। তাদের যারা হাজার কোটি টাকার মানুষ হয়েছে, তারা কেউ নিয়মের মাধ্যমে হয়নি। অনিয়মের মাধ্যমেই হয়েছে, তাই এদের জবাবদিহির আওতায় আসতে হবে। নির্বাচন করা তো দূরের কথা, তাদের তো দেশের মানুষের সামনে, আইনের সামনে জবাবদিহি করতে হবে। প্রথমে জবাবদিহি তারপর নির্বাচনের ব্যাপার। সেটা অনেক পরের কথা। শেখ হাসিনার মতো বিভিন্ন অ্যাসোসিয়েশনের যারা পালিয়ে গেছেন, তারাও মেসেজ-কলের মাধ্যমে নির্দেশ দেন। যারা এসব নির্দেশ গ্রহণ করে তাদেরও জেলে দেওয়া দরকার।’
বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের আহ্বায়ক এস এম সাইফুল আলমের সভাপতিত্বে ও ফোরামের পরিচালক সিঅ্যান্ডএফ ব্যবসায়ী রোকন উদ্দিন মাহমুদের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেন বিজিএমইএ’র সাবেক সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এস এম ফজলুল হক, চট্টগ্রাম মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহ, সদস্য সচিব নাজিমুর রহমান, বঞ্চিত ব্যবসায়ী ফোরামের সদস্য সচিব শহিদুল ইসলাম চৌধুরী।