শনিবার ৪ জানুয়ারি ২০২৫ ২০ পৌষ ১৪৩১

শিরোনাম: যেসব কারণে আয় বেড়েছে মোংলা বন্দরে   ২০২৪ সালে সড়কে নিহত ৮৫৪৩, আহত ১২৬০৮   গাজায় ইসরায়েলি হামলায় আরও ১৫০ ফিলিস্তিনি নিহত   হাসিনার ঘনিষ্ঠজনের কাছ থেকে ফ্ল্যাট উপহার নিয়েছিলেন টিউলিপ   এশিয়াতে চোখ রাঙাচ্ছে‘এইচএমপিভি’ভাইরাস   বিয়ে করলেন গায়ক-অভিনেতা তাহসান খান   ৮ ঘণ্টা বন্ধ থাকার পর আরিচা-কাজিরহাট নৌপথে ফেরি চলাচল স্বাভাবিক   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালনায় প্রশাসক নিয়োগে আইনি নোটিশ
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: বুধবার, ১ জানুয়ারি, ২০২৫, ৭:৫১ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

মাওলানা সাদ ও মাওলানা জুবায়ের গ্রুপের দ্বন্দ্বের মধ্যেই তাবলিগের কার্যক্রম সঠিকভাবে পরিচালনা করতে কাকরাইল মারকাজ মসজিদে সরকারি প্রশাসক নিয়োগের দাবিতে আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে। এতে গাজীপুরের টঙ্গীর বদলে কক্সবাজারে বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের দাবিও জানানো হয়।

আইনি নোটিশে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সচিব, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের ডিজি, রমনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বাংলাদেশ জাতীয় তাবলিগ মারকাজ মসজিদের খতিব ও শুরা সদস্য এবং ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভিকে বিবাদী করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রি ডাকযোগে এই আইনি নোটিশ পাঠানো হয়। বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অনুচ্ছেদ ৪১ এর বাস্তবায়নে এই নোটিশ পাঠান সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মো. মাহমুদুল হাসান।

ভারতে মাওলানা সাদ কান্ধলভির কাছে নোটিশটি পাঠানো হয়েছে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে।

আইনি নোটিশে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অনুচ্ছেদ ৪১ অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের ধর্ম প্রচারের অধিকার রয়েছে। এ ক্ষেত্রে, তাবলিগ ইসলাম ধর্ম প্রচারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম। তাবলিগের মৌলিক কাজ হলো মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষের কাছে ইসলাম ধর্মের বাণী পৌছে দেওয়া এবং মানুষকে ধর্মের প্রতি আহ্বান জানানো। যারা তাবলিগের কাজে জড়িত তারা তাদের নিজেদের অর্থ ও মূল্যবান সময় ব্যায় করে মানুষের কাছে ইসলাম ধর্মের বাণী পৌঁছে দিয়ে থাকেন। পৃথিবীতে আগমনকারী সব নবী ও রাসুলগণ মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্মের বাণী প্রচার করেছেন এবং মানুষকে ধর্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। উদাহারণ স্বরুপ হযরত ইব্রাহীম (আ), হযরত মুসা (আ), হযরত ঈসা বা যিশু খ্রিস্ট (আ), হয়রত মোহাম্মদ (স) মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ধর্মের বাণী প্রচার করেছেন এবং মানুষকে ধর্মের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। সুতরাং তাবলিগ কোনো নতুন বিষয় নয়। সব নবী-রাসুলগণ এভাবেই মানুষকে আহ্বানের মাধ্যমে ধর্ম প্রচার করেছেন। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন যাবৎ শান্তি ও সহমর্মিতার সঙ্গে তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালিত হয়ে আসছিলো। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তাবলিগের অনুসারীদের মধ্যে মাওলানা সাদ গ্রুপ ও মাওলানা জোবায়ের গ্রুপ নামে দুই গ্রুপের উদ্ভব হয়েছে। এই দুই গ্রুপ বাংলাদেশে তাবলিগের কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলা করছে এবং তাবলিগের কার্যক্রমের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করছে।

আইনি নোটিশে আরও বলা হয়েছে, তাবলিগে দুই গ্রুপের মধ্যে দ্বন্দ্ব সৃষ্টি হয়েছে মূলত ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভির কিছু বিতর্কিত “ফতোয়া”কে কেন্দ্র করে । অন্যদিকে বাংলাদেশের ধর্ম ভিত্তিক কিছু রাজনৈতিক দলের নেতারা তাবলিগের কার্যক্রমে অযাচিত হস্তক্ষেপ করেছেন। ফলশ্রুতিতে তাবলিগে মাওলানা সাদ গ্রুপ ও মাওলানা জোবায়ের গ্রুপ নামে দুই গ্রুপের উদ্ভব হয়েছে এবং তারা একে অপরের প্রতি ঘৃণা ছড়াচ্ছেন ও তাবলিগের কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করছেন।

নোটিশে বলা হয়, ইসলাম ধর্মে “ফতোয়া” খুব সিরিয়াস কোনো বিষয় নয়। মূলত ধর্মীয়জ্ঞানে যোগ্যতা সম্পন্ন কোনো ব্যক্তি কর্তৃক ধর্মীয় কোনো বিষয় সম্পর্কে মতামতকে ফতোয়া বলা হয়। বিষয়টা আমাদের আইন অঙ্গনে “নজীর” (Precedents) এর মতো। সারাবিশ্বের হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টগুলো আইনের বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মতামত দেন যাকে “নজীর” বা Precedent বলে। শুধুমাত্র খুনের মামলার ওপর বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের সবমিলিয়ে এক লক্ষের ওপর নজীর (Precedents) রয়েছে। এত নজীর থাকা সত্ত্বেও বিচার ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যায়নি বরং উন্নত হয়েছে। কারণ আইনবিদরা এসব নজীরগুলোকে (Precedents) সম্মানের চোখে সাথে দেখে থাকেন। পক্ষান্তরে কোনো ধর্মীয় বিশেষজ্ঞের “ফতোয়া” কারো কারো কাছে গ্রহণযোগ্য বা পছন্দ নাও হতে পারে। তাই বলে ফতোয়াকে কেন্দ্র করে মারামারি করা ও বিশৃঙ্খলা করা কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।

আইনি নোটিশে বলা হয়, বাংলাদেশের বিভিন্ন ধর্ম ভিত্তিক রাজনৈতিক দলের নেতারা সম্পূর্ণ অযাচিতভাবে তাবলিগের কার্যক্রমে হস্তক্ষেপ করেছেন এবং তাবলিগের মধ্যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিতে অবদান রাখছেন। এসব রাজনৈতিক নেতাদের সাথে তাবলিগের কোনো সম্পর্ক নেই। তাবলিগের কার্যক্রমে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা নিয়মিত মসজিদ কেন্দ্রীক “গাশত” করে থাকেন । এই “গাশত” এর অর্থ হলো বাড়ি বাড়ি গিয়ে মানুষকে ধর্মের প্রতি আহ্বান জানানো। এছাড়া তারা মাসে ৩ থেকে ৭ দিন তাবলিগে সময় দেন। তারা বছরে ৪০ দিন বা এক চিল্লা অথবা ১২০ দিন বা তিন চিল্লা সময় তাবলিগে দিয়ে থাকেন। বর্তমানে যে সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা তাবলিগের কার্যক্রমে অযাচিত হস্তক্ষেপ করছেন তাদের সাথে তাবলিগের কোনো সম্পর্ক নেই। তারা হলো অনুপ্রবেশকারী এবং তারা তাবলীগের কার্যক্রমে বিশৃঙ্খলতা সৃষ্টি করছেন।

‘বাংলাদেশের আলেম সমাজের মধ্যে সহনশীলতার (Endurance) অভাব রয়েছে। এই সহনশীলতার পেছনে সামাজিক কারণ রয়েছে। বাংলাদেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বাবা মায়েরা যখন তাদের চরম অবাধ্য ও দুষ্টু প্রকৃতির সন্তানদের কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন না, তখন তাদেরকে মাদ্রাসায় পাঠান। পরবর্তীতে তারা আলেম হলেও তাদের চরিত্রে উগ্রতা থাকে এবং সহনশীলতার অভাব পরিলক্ষিত হয়। ফলশ্রুতিতে, বাংলাদেশের অধিকাংশ আলেমদের মধ্যে সহনশীলতার ব্যাপক অভাব দেখা যায়। এসব কারণে মাওলানা সাদ ও মাওলানা জোবায়ের গ্রুপের সদস্যরা একে অপরের সঙ্গে মারামারি করছেন এবং খুনাখুনি করেছেন।’

আইনজীবী তার নোটিশে আরও বলেন, তাবলিগের কার্যক্রম যেহেতু ধর্ম প্রচারের সাথে সম্পৃক্ত এবং সরাসরি সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অনুচ্ছেদ ৪১ এর সাথে সংযুক্ত, তাই সরকারকে এই বিষয়ে সরাসরি হস্তক্ষেপ করতে হবে। বর্তমানে এই সংঘাতময় পরিস্থিতিতে সরকারকে অবশ্যই তাবলিগের শুরার (কমিটির) ওপর “প্রশাসক” নিয়োগ করতে হবে এবং তাবলিগের সমস্যা পুরোপুরি সমাধান না হ‌ওয়া পর্যন্ত সরকারের প্রশাসকের মাধ্যমে বাংলাদেশের তাবলিগের কার্যক্রম পরিচালিত করতে হবে।

এছাড়া নোটিশে আরও দাবি করা হয়েছে, বাংলাদেশে অবশ্যই তাবলিগের একটি বিশ্ব ইজতেমা করতে হবে। বিশ্ব ইজতেমার স্থান টঙ্গীর নোংরা ও অস্বাস্থ্যকর স্থান থেকে পরিবর্তন করে কক্সবাজারে আয়োজন করতে হবে। এছাড়া বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে সারা বিশ্ব থেকে ২০ থেকে ৩০ লাখ বিদেশি মেহমানদের আসা নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে বিদেশে বাংলাদেশের দূতাবাস গুলোকে সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। এভাবে বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে বিপুল সংখ্যক বিদেশি ধর্মীয় পর্যটক বাংলাদেশে এলে এক দিকে বাংলাদেশ বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে এবং সারাবিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি বৃদ্ধি পাবে।

নোটিশ পাওয়ার সাত দিনের মধ্যে বাংলাদেশের সংবিধানের মৌলিক অধিকারের অনুচ্ছেদ ৪১ বাস্তবায়নে কাকরাইল মার্কাজ মসজিদে তাবলিগের শুরা কমিটির ওপর সরকারি প্রশাসক নিয়োগ করা এবং কক্সবাজারে বিপুল সংখ্যক বিদেশি মেহমান (ধর্মীয় পর্যটক) নিশ্চিত করে বিশ্ব ইজতেমার আয়োজন করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে। অন্যথায় এই বিষয়ে ব্যাবস্থা নিতে মহামান্য হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করা হবে বলে নোটিশে জানানো হয়।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]