জুলাই অভ্যুত্থানকে আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দিতে আগামী ৩১ ডিসেম্বর জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্র প্রদান করবে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। এতে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা নাহিদ ইসলাম ও আসিফ মাহমুদসহ ১৫৮ জন সমন্বয়ক শপথ গ্রহণ করবেন। অনুষ্ঠানে ফ্যাসিবাদবিরোধী সব রাজনৈতিক দলকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) রাজধানীর বাংলামোটরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনের নেতারা এসব কথা বলেন।
সংবাদ সম্মেলনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, ‘আগামী ৩১ ডিসেম্বর শহীদ মিনারে জুলাই বিপ্লবের ঘোষণাপত্রের মাধ্যমে মুজিববাদের কবর রচিত হবে। এ দিন দেশে মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। তারপর আওয়ামী লীগ দল হিসেবে অপ্রাসঙ্গিক হয়ে পড়বে বাংলাদেশে।’
হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘‘এই ঘোষণাপত্র পাঁচ অগাস্টেই হওয়া উচিত ছিল, না হওয়ার ফলে ফ্যাসিবাদের পক্ষের শক্তিগুলো ষড়যন্ত্র করেই যাচ্ছে। দুই হাজারের ঊর্ধ্বে শহীদ এবং ২০ হাজারের ঊর্ধ্বে আহতদের রক্তের ওপর দাঁড়িয়ে তারা এই আন্দোলনের 'লেজিটেমেসি'কে প্রশ্ন করেই যাচ্ছে। যে গণঅভ্যুত্থান হয়েছে তার মধ্য দিয়ে মানুষ মুজিববাদী সংবিধানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এই যে মানুষ মুজিববাদী সংবিধানের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে, তার একটি লিগ্যাল ডকুমেন্টেশন থাকা উচিত।’’
তিনি বলেন, ‘‘৩১ ডিসেম্বর ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে ২০২৪ এর গণঅভ্যুত্থান ঘিরে আমাদের যে গণ-আকাঙ্খা তৈরি হয়েছে, ১৯৭২ এর সংবিধানের বিপরীতে গিয়ে মানুষ যে রাস্তায় নেমে এসেছে, সেটির প্রাতিষ্ঠানিক, দালিলিক স্বীকৃতি ঘোষণা করার জন্য আমরা ৩১ ডিসেম্বর ছাত্রজনতার উপস্থিতিতে শহীদ মিনার থেকে আমাদের 'প্রোক্লেমেশন অব জুলাই রেভ্যুলেশন' ঘোষণা করব।’’
হাসনাত ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘আমাদের পরবর্তী বাংলাদেশের স্বপ্ন-আকাঙ্ক্ষা-অভিপ্রায় এবং ইশতেহার লিপিবদ্ধ থাকবে এই প্রোক্লেমেশনে। এটা কোনো দলের বা শ্রেণির প্রোক্লেমেশন না। ১৯৭২ এর যে সংবিধানের বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে, মুজিববাদী চেতনার বিরুদ্ধে মানুষ দাঁড়িয়েছে, আওয়ামী লীগের ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে যে মানুষ দাঁড়িয়েছে—আমরা চাই সেটির স্বীকৃতি দেওয়া হোক।’
হাসনাত বলেন, ‘আমরা চাই এই মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে, যেখান থেকে এক দফা ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই শহীদ মিনার থেকেই মুজিববাদী সংবিধানের কবর রচিত হবে। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে অপ্রাসঙ্গিক দল হয়ে পড়বে।’
এরই মধ্যে ঘোষণাপত্রের খসড়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলোকে পাঠানো হয়েছে। সবাইকে সঙ্গে নিয়ে ৩১ ডিসেম্বর ঘোষণাপত্র পাঠ করা হবে বলেও জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেন, ‘বিপ্লবের ঘোষণাপত্র আরও আগেই দেওয়া প্রয়োজন ছিল। তবে রাষ্ট্রকে এগিয়ে নিতে বিভিন্ন সেক্টর থেকে সহযোগিতা পাওয়া যায়নি।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিগত যেসব ব্যবস্থা মানুষ গ্রহণ করেনি এবং নতুন যেসব ব্যবস্থা চালু হবে, তার মধ্যে পার্থক্য হিসেবে এই ঘোষণাপত্র বাংলাদেশের একটি দলিল হয়ে থাকবে। যারা দেশ পরিচালনায় আসবেন, এই ঘোষণাপত্র তাদের জন্য একটি নির্দেশক হিসেবে থাকবে। এখানে বাংলাদেশের সব মানুষের আশা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। প্রয়োজনে সামনে এটি আরো সংশোধন, পরিবর্তন ও পরিমার্জন হতে পারে।’
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক আব্দুল হান্নান মাসউদ, মিডিয়া সেল সম্পাদক জাহিদ আহসান প্রমুখ।