বৃহস্পতিবার ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪ ১০ পৌষ ১৪৩১

শিরোনাম: সদস্য পদ ফিরে পেলেন ৩ বিএনপি নেতা   ভারত থেকে ২৪৬৯০ টন চাল আসছে বৃহস্পতিবার   মেঘ-পাহাড়ের টানে বান্দরবানে পর্যটকের ভিড়   পত্রিকার সম্পাদকসহ ৪ সাংবাদিকের ওপর হামলার অভিযোগ   ফের পালালেন ময়মনসিংহের সাবেক এমপি!   দুদকের সাবেক কমিশনারের পাসপোর্ট বাতিল   হাসিনা-সালমান-জিয়াউলকে দায়মুক্তির চেষ্টা, কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
সুন্দরবন উপকূলে ধরা পড়ছে না পর্যাপ্ত মাছ, জেলেদের মধ্যে হতাশা-উৎকণ্ঠা
মাসুদ রানা, মোংলা
প্রকাশ: বুধবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:৪৭ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবনের দুবলার চর উপকূলে গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে শীত কালীন মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ মৌসুম। এ মৌসুম চলবে আগামী মার্চ মাস পর্যন্ত। এদিকে সাগর থেকে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ মৌসুম শুরুর প্রায় দু’মাস ধরে জেলেদের জালে পর্যাপ্ত মাছ ধরা পড়ছে না। সাগরে দেখা দিয়েছে মাছের আকাল। 

জেলেদের অনেকের ধারণা, বৈরী আবহাওয়ার কারণে সুন্দরবন উপক‚লে মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। মৎস্যজীবি ও জেলেরা এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত কাংখিত মাছ না পেয়ে হা হুতাশ ও গভীর উৎকন্ঠার মধ্যে দিন যাপন করছেন। সাগরে মাছের এ আকাল চলতে থাকলে চলতি মৌসুম শেষে জেলে মৎস্যজীবিরা তাদের পুঁজি নিয়ে ঘরে ফিরতে পারবে কিনা তা নিয়ে নানা সংশয় দেখা দিয়েছে। আর পর্যাপ্ত মাছ আহরণ না হলে বন বিভাগেরও তাদের টার্গেট রাজস্ব আয়ে বিরুপ প্রভাব পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে।

সুন্দরবনের দুবলার চরের বিভিন্ন জেলে ও মৎস্যজীবী ও বন বিভাগ সূত্র জানায়, প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বঙ্গোপসাগরের সুন্দরবন উপকুলের দুবলার চর এলাকায় গত নভেম্বর মাস থেকে শুরু হয়েছে ৫ মাস ব্যাপী সাগরে শীত কালীন মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি প্রক্রিয়াকরণ মৌসুম। এ সময় জেলে ও মৎস্যজীবিরা নৌকা ও ট্রলারে করে সাগর থেকে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ আহরণের পর তা সুন্দরবনের বিভিন্ন চরে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণ করে থাকে। এ সময় সুন্দরবন উপকুলের হাজার হাজার জেলে ও মৎস্যজীবিরা কোটি কোটি টাকা লগ্নি করে এখানে মাছ আহরণ ও শুঁটকি তৈরীতে জড়ো হন। সাগর থেকে মৎস্য আহরণ ও শুঁটকি তৈরীকে কেন্দ্র করে সুন্দরবনের পুরো উপকূল এলাকায় জেলে ও মৎস্যজীবিরা বিভিন্ন কর্মযজ্ঞে ব্যাপক ব্যস্ত সময় পার করে থাকেন। কিন্তু এবারের চিত্র কিছুটা ভিন্ন। জেলে ও মৎস্যজীবিদের মনে শান্তি নেই। বিরাজ করছে দারুণ হতাশা আর উৎকন্ঠা। সাগরে মাছ সংকটে বিপাকে পড়েছেন জেলে মৎস্যজীবিরা। গত প্রায় দু’মাসের  তিন ‘গোন’ (অমাবশ্যা ও পূর্ণিমার সময়কাল) সময় ধরে সাগরে জাল ফেলে তেমন কোন মাছ পাচ্ছেন না তারা। মাছ না পেয়ে জেলে মহাজনরা ব্যাপক আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সাম্প্রতিক সময় বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ঠ ঘূর্ণীঝড় “ফিনজাল” ও গত পূর্ণিমার গোণে সাগরে  লঘু চাপ ও বৃষ্টির কারণে সমুদ্র উত্তাল থাকাসহ সৃষ্ট সার্বিক পরিস্থিতির কারণে এ মৌসুমে এখন পর্যন্ত সাগরে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যাচ্ছে না বলে জেলে মৎস্যজীবিরা ধারণা করছেন।

দুবলার চরের আলোরকোলের রামপাল জেলে সমিতির সভাপতি মোতাসিম ফরাজী বলেন, গত দেড় মাসে ৩ গোন যাবৎ সাগরে জাল ফেলে কোন মাছ পাওয়া যাচ্ছেনা। ২/৩ ঘন্টা ট্রলার চালিয়ে সাগরের গভীরে গিয়েও জাল ফেলে মাছ পাওয়া যায়না । ট্রলারের তেল খরচের টাকাও উঠছেনা। গত ২৫/৩০ বছরের মধ্যে দুবলার শুঁটকি জেলেরা এমন মাছ সংকটে পড়েনি বলে তিনি জানান।

আলোর কোলের মৎস্য ব্যবসায়ী শুধাংস বিশ্বাস ও শেলার চরের মৎস্য ব্যবসায়ী সেকেন্দার আলী বলেন, দীর্ঘ ৩০/৩৫ বছর ধরে সাগরের এ মাছের ব্যবসার সাথে জড়িত রয়েছেন কিন্তু এ বছরের মতো এতো মাছ সংকট আর কখনও তিনি দেখেননি। তারা আরো জানান, এ অবস্থা চলতে থাকলে আমাদের পুঁজি ঊঠবে না। অনেকেই সুদে টাকা কর্জ আর মহাজনদের কাছ থেকে ধার দেনা করে মাছ আহরণে এসেছেন। এবার সাগরে পর্যাপ্ত মাছ না পেলে তারা সেই ধার দেনা ও সুদের টাকা কিভাবে শোধ করবেন তা নিয়ে বড় দুঃচিন্তায় রয়েছেন।

দুবলা ফিসারমেন গ্রুপের সভাপতি মোঃ কামাল উদ্দিন আহমেদ বলেন, গত তিন গোণে  সাগরে তেমন পর্যাপ্ত তেমন মাছ না পাওয়ায় জেলে ও মহাজনরা বিপুল অংকের আর্থিক ক্ষতির শিকার হয়েছেন। বর্তমানে মাছ না থাকায় সুন্দরবনের বিভিন্ন চরের মাছ শুঁকানোর চাতাল ও মাচা মাছের অভাবে খা খা করছে।

জেলে পল্লী দুবলা ফরেষ্ট টহল ফাঁড়ির ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ফরেষ্ট রেঞ্জার মোঃ খলিলুর রহমান ভোরের পাতাকে বলেন, সাগরের জেলেরা তেমন মাছ না পাওয়ায় বন বিভাগের এ মৌসুমে রাজস্ব ঘাটতির আশংকা রয়েছে। তিনি বলেন, পর পর তিনগোণে সমুদ্রে বৈরী আবহাওয়া বিরাজ করায় সাগরে পর্যাপ্ত মাছ পাচ্ছেন না বলে জেলেদের ধারনা। বর্তমানে মৌসুমী বায়ুর তোড়ে সমুদ্র উত্তাল রয়েছে। অন্যান্যবার এ সময়ে প্রায় দু’কোটি টাকার কাছাকাছি রাজস্ব আয় হলেও এবার মাছ সংকটে তা অর্ধেকে নেমে প্রায় ১ কোটি টাকার কাছাকাছি নেমে এসেছে।

পূর্ব সুন্দরবনের ডিএফও (বিভাগীয় কর্মকর্তা) কাজী নুরুল করিম জানান, সাগরে জেলেদের জালে মাছ ধরা পড়া সম্পুর্ণ প্রাকৃতিক বিষয়। এখানে বন বিভাগের কিছুই করার নেই। এ মৌসুমে জেলেরা পর্যাপ্ত মাছ না পাওয়ায় বন বিভাগের টার্গেট প্রায় ৮ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ে বিরুপ প্রভাব পড়ার আশংকা দেখা দিয়েছে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল জানান, সাম্প্রতিককালে সাগরে আবহাওয়ার যে পরিস্থিতি বিরাজ করছে তাতে জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়তে পারে তবে আগামিতে এ সংকট কেটে পর্যাপ্ত মাছ পাওয়া যেতে পারে বলে তিনি মনে করেন। এ ছাড়া বিস্তারিত জানতে সরেজমিনে মৎস্য অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা শিগগির সমুদ্র এলাকা পরিদর্শন করবেন বলে তিনি জানান।

অপরদিকে ময়মনসিংহ মৎস্য গবেষণা ইনষ্টিটিউটের সাবেক মৎস্য গবেষক ড. আনিসুর রহমান ভোরের পাতাকে বলেন, সাগরে জলবায়ু তারতম্যের কারণে সাময়িকভাবে মাছ ধরা নাও পড়তে পারে। আরো কিছুদিন না দেখে সঠিক মন্তব্য করা যাবে না।



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]