রোববার ২২ ডিসেম্বর ২০২৪ ৭ পৌষ ১৪৩১

শিরোনাম: পানামা খাল নিয়ে হুঁশিয়ারি দিলেন ট্রাম্প   ডিসেম্বরের ২১ দিনে ২৪ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স   সারজিসের আশ্বাসে সড়ক ছাড়লেন চিকিৎসকরা   রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ নিয়ে যা বললেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা   হাসান আরিফের মৃত্যুতে উপদেষ্টা পরিষদের শোক   গাজীপুরে কারখানায় আগুন, নিয়ন্ত্রণে ৭ ইউনিট   গাড়িচাপায় বুয়েট শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় ৩ আসামির রিমান্ড   
https://www.dailyvorerpata.com/ad/Inner Body.gif
সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের ব্যাংক হিসাবে ২১ কোটি টাকা
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: রোববার, ২২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১:৩৮ পিএম | অনলাইন সংস্করণ

আইন-বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সাবেক মন্ত্রী আনিসুল হকের ১৬টি ব্যাংক হিসাবের সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ওই হিসাবগুলোতে প্রায় ২১ কোটি টাকা জমা থাকার তথ্য মিলেছে। যা ইতোমধ্যে ফ্রিজ করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

আনিসুল হকের হিসাবগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংক বনানী শাখার ৬টি হিসাবে ফিক্সড ডিপোজিট হিসেবে ৫ কোটি টাকা এবং অন্য এক হিসাবে এসসি গোল্ডেন বেনিফিটস হিসেবে ৫০ লাখ ৮১ হাজার টাকার তথ্য পেয়েছে দুদক।

এ বিষয়ে ব্র্যাক ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, আনিসুল হকের গোল্ডেন ফিক্সড ডিপোজিট (হিসাব নং-১৫০৭৩০১৫২৮৮২৪০০৬) ১ কোটি টাকা, হিসাব নং-১৫০৭৩০১৫২৮৮২৪০০৫, হিসাব নং-১৫০৭৩০১৫২৮৮২৪০০৩ এবং হিসাব নং-১৫০৭৩০১৫২৮৮২৪০০৪ এর গোল্ডেন ফিক্স ডিপোজিট হিসাবে ১ কোটি টাকা করে মোট তিন কোটি টাকা জমা পাওয়া গেছে।

আর ব্র্যাক ব্যাংকের বানানী শাখায় হিসাব নং-১৫০৭৩০১৫২৮৮২৪০০১ এ এসবিএ এসিসি গোল্ডেন বেনিফিটস ৫০ লাখ ৮১ হাজার ৬৯৭ টাকা, হিসাব নং-১৫০৭৩০১৫২৮৮২৪০০১ এর ফিক্সড ডিপোজিট প্লাসে রয়েছে ৫০ লাখ টাকা ও হিসাব নং-১৫০৭৩০১৫২৮৮২৪০০২ এ ফিক্সড ডিপোজিট প্লাস ৫০ লাখ টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।

অন্যদিকে সিটিজেন ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের ৯ ব্যাংক হিসাবে মিলেছে ১৫ কোটি ১১ লাখ ৮৩ হাজার টাকা। ওই টাকা নিজ ও নিকট আত্মীয়দের নামে ব্যাংকে ডিপোজিট হিসেবে পাওয়া গেছে। ওই ব্যাংকগুলো সূত্রে জানা যায়, সিটিজেন ব্যাংকের গুলশান শাখার ৫টি ব্যাংক হিসাবে আশেকুছ সামাদ ও জেবুন্নেছা বেগম হকের নামের ৯ কোটি কোটি ৮৭ লাখ ৫২ হাজার ১১২ টাকার ফিক্সড ডিপোজিট পাওয়া গেছে। যারা সম্পর্কে তার ভাই-বোন বলে জানা গেছে। অন্যদিকে স্ট্যান্ডার্ড চাটার্ড ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় আনিসুল হকের তিনটি ব্যাংক হিসাবে যথাক্রমে ৪ কোটি ১৩ লাখ ১৩ হাজার, ২৬ লাখ ৮৬ হাজার ও ৮৪ লাখ ২৮ হাজার টাকার জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে তিনটি ব্যাংকে আনিসুল হক ও তার পরিবারের নামের প্রায় ২১ কোটি টাকার সন্ধান পাওয়া গেছে।

এ বিষয়ে দুদকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, শত শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ ও পাচারের অভিযোগ থাকলেও দুদক দালিলিক প্রমাণ ছাড়া আইনি পদক্ষেপ নিতে পারে না। আমাদের তথ্য ও সংগ্রহ এবং যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। যা অংশ হিসাবে তিন ব্যাংকে প্রায় ২১ কোটি টাকা জমা থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে এবং ফ্রিজ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। ওই টাকা তার আয়ের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ বলেই আপাতত মনে হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদন হাতে পেলে বিস্তারিত বলা যাবে।

এ বিষয়ে দুদকের উপপরিচালক (জনসংযোগ) মো. আকতারুল ইসলাম বলেন, অনুসন্ধান চলমান রয়েছে। বর্তমানে নথিপত্র সংগ্রহ ও যাচাই-বাছাইয়ের কাজ চলমান রয়েছে। দুদকের অনুসন্ধান টিম প্রতিবেদন দাখিল করলে আইন অনুযায়ী কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

আনিসুল হক ও তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে গত ৭ অক্টোবর থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। যার মধ্যে সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে শত কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। এছাড়া অপর এক সহযোগী ফারহানা ফেরদৌস নামে অপর এক নারীর বিরুদ্ধে আসা পৃথক আর একটি অভিযোগও আমলে নিয়ে অনুসন্ধান করছে দুদকের অনুসন্ধান টিম।

অভিযোগে যা বলা হয়েছে

অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এবং অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও ক্ষমতার অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ সংক্রান্ত। অভিযোগ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি আনিসুল হক মন্ত্রী থাকাকালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে প্রচুর পরিমাণ অবৈধ সম্পদ অর্জন করেছেন। নিজ নামে কসবা, ত্রিশাল এবং পূর্বাচলে ৬.৮০ একর জমি ক্রয়, সিটিজেন ব্যাংক, এক্সিম বাংলাদেশে শেয়ারের পরিমাণ ৪০.১০ কোটি; সঞ্চয়পত্র, বিভিন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা এবং অন্যান্য বিনিয়োগ ২৩ কোটি ২৬ লাখ ৭৯ হাজার ৮৮৪ টাকা, ৪টি গাড়ি ও ১টি মোটরসাইকেল রয়েছে।

এছাড়া অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিমের নামে-বেনামে দেশে-বিদেশে অঢেল সম্পদ রয়েছে। তৌফিকা করিম সিটিজেন চার্টার ব্যাংকের চেয়ারম্যান ছিল বিধায় তার মাধ্যমে আনিসুল হক কানাডাসহ বিভিন্ন দেশে কোটি কোটি টাকা পাচার করতেন। তিনি নিম্ন আদালতের অধিকাংশ কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে জনপ্রতি ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ঘুষ গ্রহণ করতেন। তার সব দুর্নীতির সঙ্গে তৌফিকা করিমের সংশ্লিষ্টতা ছিল বলে গোপনীয় তথ্যানুসন্ধানকালে সোর্স মূলে জানা যায়।

আনিসুল হক, অ্যাডভোকেট তৌফিকা করিম ও তার অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের নামে-বেনামে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদের মালিক হয়েছেন মর্মে জানা যায়। এছাড়া বিদেশে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার করেছেন বলে গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে দুদকের হাতে।

অন্যদিকে ফারহানা ফেরদৌস নামে একজন আনিসুল হকে নিকটজন হিসেবে পরিচিত। যার বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও কোটি কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ রয়েছে। তার বিরুদ্ধে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও হাসপাতাল, ঢাকায় আফতাব নগরে এবং রামপুরায় বনশ্রীতে ৪টি প্লট ও ফ্ল্যাট থাকার অভিযোগ রয়েছে।

হলফনামা ও কর নথি সূত্রে যা জানা যায়

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় মন্ত্রী আনিসুল হক তার হলফনামায় উল্লেখ করেছেন, তার কাছে নগদ আছে ১০ কোটি ৯২ লাখ ৯৪ হাজার ১৯৯ টাকা, যা ১০ বছর আগের তুলনায় ২১৮ গুণ বেশি। পাশাপাশি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমা করা অর্থের পরিমাণও ১০ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ২ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৭ টাকা।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ (কসবা-আখাউড়া) আসনের কসবা উপজেলা শাখা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। হলফনামায় আনিসুল হকের অস্থাবর সম্পদের মধ্যে বন্ড, ঋণপত্র, স্টক এক্সচেঞ্জে তালিকাভুক্ত ও তালিকাভুক্ত নয় এমন কোম্পানির শেয়ার হিসেবে তিনি সিটিজেন ব্যাংক ও এক্সিম বাংলাদেশের শেয়ার মূল্য উল্লেখ করেছেন ৪০ কোটি ১০ লাখ টাকা। অথচ দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের হলফনামায় তার নিজ নামে কোনো শেয়ার নেই উল্লেখ করেছিলেন। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার জমাকৃত অর্থের পরিমাণ ৬ কোটি ৫৪ লাখ ৬০ হাজার ৭৮৭ টাকা। পাঁচ বছর আগে যা ছিল ৪ কোটি ৫৮ লাখ ৬২ হাজার ৯৯২ টাকা এবং ১০ বছর আগে ছিল ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা।

হলফনামায় পোস্টাল, সেভিংস সার্টিফিকেটসহ বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়পত্র বা স্থায়ী আমানতে তার বিনিয়োগ রয়েছে ৫ কোটি ৭৯ লাখ ২৪ হাজার ৮৯৮ টাকা। নিজ নামে চারটি গাড়ি ও একটি মোটরসাইকেল রয়েছে, যার মূল্য ৫ কোটি ৪৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। হলফনামায় ২০ ভরি স্বর্ণ, একটি টেলিভিশন, ৫০ হাজার টাকা মূল্যের খাট, চেয়ার ও ড্রেসিং টেবিল এবং ৭.৬৫ বোরের একটি পিস্তলের কথা উল্লেখ রয়েছে।

আয়ের উৎস হিসেবে কৃষি খাত (মৎস্য) থেকে আয় দেখিয়েছেন ৪৩ লাখ টাকা। আর আয়ের বড় অংশ আসে ব্যাংক ও এফডিআর-এর সুদ এবং কৃষি ও মৎস্য খাত থেকে। এই দুটি খাত থেকে তার বাৎসরিক আয় হয় ৮৬ লাখ ৪৫ হাজার ৩৪৮ টাকা। অন্যদিকে আনিসুল হকের স্থাবর সম্পদের মধ্যে নিজ নামে ৮ বিঘা কৃষি জমি, ১ একর সাড়ে ২২ শতাংশ অকৃষি জমি, রাজধানীর পূর্বাচলে প্লট, বনানীতে একটি বাড়ি ও দুটি ফ্ল্যাটের ঘোষণা রয়েছে হলফনামা ও আয়কর রিটার্নে। সূত্র: ঢাকা পোস্ট



« পূর্ববর্তী সংবাদপরবর্তী সংবাদ »







  সর্বশেষ সংবাদ  
  সর্বাধিক পঠিত  
http://www.dailyvorerpata.com/ad/Vorer-pata-23-12-23.gif
http://dailyvorerpata.com/ad/af.jpg
http://www.dailyvorerpata.com/ad/bb.jpg
এই ক্যাটেগরির আরো সংবাদ


সম্পাদক ও প্রকাশক: ড. কাজী এরতেজা হাসান
সর্বস্বত্ব স্বত্বাধিকার সংরক্ষিত
সাউথ ওয়েস্টার্ন মিডিয়া গ্রুপ


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম


©ডেইলি ভোরের পাতা ডটকম

বার্তা ও বাণিজ্যিক কার্যালয় : ৯৩ কাজী নজরুল ইসলাম এভিনিউ, কারওয়ান বাজার, ঢাকা-১২১৫।
ফোন:৮৮-০২-৪১০১০০৮৭, ৪১০১০০৮৬, বিজ্ঞাপন বিভাগ: ৪১০১০০৮৪, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৪১০১০০৮৫
অনলাইন ইমেইল: [email protected] বার্তা ইমেইল:[email protected] বিজ্ঞাপন ইমেইল:[email protected]