‘প্রবাসীদের অধিকার, আমাদের অঙ্গীকার, বৈষম্য হীন বাংলাদেশ, আমাদের সবার’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস ও জাতীয় প্রবাসী দিবস-২০২৪ উদযাপন করেছে বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া।
দিবসটি উপলক্ষে গতকাল বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) প্রবাসীদের অবদানের স্বীকৃতি এবং দেশের উন্নয়ন কার্যক্রমে তাদের অধিকতর সম্পৃক্ত করার লক্ষ্যে কুয়ালালামপুরের জি টাওয়ার এর সুসজ্জিত হলরুমে দিনব্যাপী আলোচনা সভা, প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শন, প্রবাসী বাংলাদেশিদের সম্মাননা প্রদান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র্যাফেল ড্রর আয়োজন করা হয়।
উপস্থিত পাঁচ শতাধিক অতিথির মধ্যে দুইশ' এর অধিক বাংলাদেশের পতাকার লাল-সবুজ রং সম্বলিত টিশার্ট পরিহিত প্রবাসী বাংলাদেশি কর্মীর উপস্থিতি অনুষ্ঠানে এক অন্য মাত্রা যুক্ত করে। অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ার অভিবাসন সংক্রান্ত বিভিন্ন দপ্তরের প্রতিনিধি, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার স্থানীয় প্রতিনিধি, ইন্দোনেশিয়া, নেপালসহ বিভিন্ন দূতাবাসের প্রতিনিধি, প্রবাসী বাংলাদেশী বিভিন্ন পেশাজীবী, শ্রমিক, বাংলাদেশ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দ এবং তাদের মালয়েশিয়ান বংশোদ্ভূত সহধর্মিণী, বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, প্রবাসী সাংবাদিক, বাংলাদেশ হাইকমিশনের কর্মকর্তা- কর্মচারীসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোঃ শামীম আহসান । মূল আলোচনায় বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আই ও এম), মালয়েশিয়ার চিফ অফ মিশন হেবা আব্দেল লতিফ, হাইকমিশনের কাউন্সিলের ( শ্রম) সৈয়দ শরিফুল ইসলাম, মালয়েশিয়ায় সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশনের এর ফরেন ওয়ার্কার্স ডিভিশন এর প্রধান হারিরি বিন হারুন, মালয়েশিয়ায় কর্মী নিয়োগকারীদের প্রতিনিধি দাতো ফু ইয়াং হুই, অগ্রণী রেমিট্যান্স হাউসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতান আহমেদ, মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতা প্রকৌশলী বাদলুর রহমান খান, সাইফুল্লাহ মনসুর এবং ইউনিক সেলাতান এসডিএন বিএসডির কোম্পানির কর্মী মেহেদী হাসান। এছাড়া, এনবিএল মানি ট্রান্সফার, মালয়েশিয়ার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আলী হায়দার মর্তুজা ও সিটি ব্যাংক রেমিট্যান্স হাউসের প্রধান নির্বাহী সাইদুর রহমান ফারাজী উপস্থিত ছিলেন ।
অনুষ্ঠানে এ দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি , প্রধান উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র উপদেষ্টা এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান উপদেষ্টার বাণী পাঠ করা হয়। এরপর বিশেষ প্রামাণ্যচিত্র এবং প্রবাসীদের কল্যাণে হাইকমিশনের কার্যক্রমের উপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্রও প্রদর্শন করা হয়।
আলোচনায় আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আই ও এম), মালয়েশিয়ার চিফ অফ মিশন হেবা আব্দেল লতিফ মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশী কর্মীদের ভূয়সী প্রশংসা করেন। কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে আই, ও, এম বাংলাদেশ হাইকমিশন এবং মালয়েশিয়ার সরকারের সাথে নিবিড়ভাবে কাজ করছে বলে জানান তিনি।
মালয়েশিয়ার সোশ্যাল সিকিউরিটি অর্গানাইজেশন এর ফরেন ওয়ার্কার্স ডিভিশন এর প্রধান হারিরি বিন হারুন বলেন, বাংলাদেশী কর্মীরা মালয়েশিয়ার অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। তিনি আরো উল্লেখ করেন যে, কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে হাইকমিশনের সাথে একাত্মভাবে কাজ করছে মালয়েশিয়া ফরেন ওয়ার্কার্স ডিভিশন।
হাইকমিশনার তার বক্তব্যের শুরুতে '৭১ এর মহান মুক্তিযুদ্ধ এবং '২৪ এর জুলাই -আগস্ট অভ্যুত্থানের সকল শহীদদের স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা জানান এবং বীর যোদ্ধাদের অবদান কৃতজ্ঞচিত্তে স্মরণ করেন। তিনি এ দিবস উপলক্ষে উপস্থিত প্রবাসী বাংলাদেশি এবং আগত বিদেশি অতিথিদের আন্তরিক শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন।
শামীম আহসান বলেন, নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার গুরুত্বপূর্ণ খাতে পরিবর্তনমূলক সংস্কার আনার মাধ্যমে সুশাসন নিশ্চিত করে বাংলাদেশ পুনর্গঠনের জন্য দৃঢ় প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক হাইকমিশন আন্তরিকতার সাথে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, প্রবাসী বাংলাদেশীরা স্বাগতিক দেশ মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন।
তিনি জানান যে, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের অষ্টম বৃহৎ বিনিয়োগকারী দেশ যাদের মধ্যে বাণিজ্যের পরিমান প্রায় ৪ বিলিয়ন ডলার এবং দুই দেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক দিন দিন সুদৃঢ় হচ্ছে।
তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের শ্রমিকদের নিরাপদ কর্মপরিবেশ ও সুরক্ষা নিশ্চিতে কুয়ালালামপুরস্থ বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়ার সরকার এবং অভিবাসী সংক্রান্ত বিভিন্ন দপ্তর এর সাথে একযোগে কাজ করছে। হাইকমিশনার প্রবাসীদের ব্যাংকের মাধমে রেমিট্যান্স পাঠানোর আহবান জানিয়ে বলেন, বৈধ পথে টাকা পাঠানো হলে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।
আন্তর্জাতিক অভিবাসী দিবস এবং প্রবাসী দিবস উপলক্ষে মালয়েশিয়ায় বসবাসরত প্রবাসীদের বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে ১৮ জন সফল প্রবাসী, ৩টি প্রতিষ্ঠান এবং ৩ ক্যাটাগরিতে ৯ জন সেরা রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে হাইকমিশনের পক্ষ থেকে সম্মাননা ক্রেস্ট ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়।
শিক্ষা ও গবেষণা ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সাইদুর রহমান, সাবাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মোঃ লুৎফর রহমান, সাবাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. শফিকুজ্জাম সিদ্দিকি, ইউটিএস ইউনিভার্সিটির এসোসিয়েট প্রফেসর ড . আবু সালেহ আহমেদ, পেরদানা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. মো. নাজমুল হাসান মাজিজ, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর এ কে আহসানুল হক, সানওয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মাঈন উদ্দিন আহমেদ, ইউনিভার্সিটি মালয়েশিয়া সারাওয়াক এর এসোসিয়েট প্রফেসর ড. মো. রেজাউর রহমান। বিজনেস ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন, আলতাফ খান, মো. রুহুল আমীন সরকার, অলি ইসলাম, দাতো মিজান এবং মিসেস কোহিনূর। প্রফেশনাল ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত হলেন সেলিমুল হাসনাইন চৌধুরী। সাংস্কৃতিক ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত হলেন ড. মার্জিয়া জান্নাত মহুয়া এবং মিজ শামীমা। সোশ্যাল সার্ভিস ক্যাটাগরিতে নুসরাত শারমিন এবং বৃষ্টি খাতুন পুরস্কার পান। সংগঠন ক্যাটাগরিতে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ ফোরাম এসোসিয়েশন, ঢাকা ইউনিভার্সিটি এলামনাই এসোসিয়েশন এবং মুসলিম কমিউনিটি অফ বাংলাদেশ, পেনাং পুরস্কৃত হয়।
প্রফেশনাল ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত শীর্ষ রেমিটেন্স প্রেরণকারী হলেন আবু বকর সিদ্দিক, ড. মোহাম্মদ কুতুবুর রহমান এবং মিস জেসমীন খান, ব্যাবসায়িক ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্ত শীর্ষ রেমিটেন্স প্রেরণকারী হলেন মোহাম্মদ আল আমিন কাজী, মোঃ আক্তার হোসেন এবং মোঃ আমিনুর রহমান। সাধারণ কর্মী ক্যাটাগরিতে পুরস্কারপ্রাপ্তরা হলেন হূমায়ুন কবির, মোঃ শহিদুল ইসলাম এবং সোহেল।
অনুষ্ঠানে সম্মাননাপ্রাপ্ত প্রবাসী বাংলাদেশিগণ তাদের অনুভূতি ব্যক্ত করে বক্তব্য প্রদান করেন।আলোচনা অনুসঠান শেষে প্রবাসী বাংলাদেশী শিল্পীদের পরিবেশনায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। মালয়েশিয়ায় প্রবাসী বাংলাদেশি শিল্পীর বাংলায় এবং মালয় ভাষায় অনবদ্য সংগীত এবং নৃত্য শিল্পীদের বর্ণিল পরিবেশনা অতিথিদের মুগ্ধ করে। এর পর, হাই কমিশনের লেবার উইং এর প্রথম সচিব সুমন চন্দ্র দাশ এর সঞ্চালনায় র্যাফেল ড্র অনুসঠিত হয়। সবশেষে, অভ্যাগত অতিথিবৃন্দকে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশী খাবার দ্বারা আপ্যায়িত করা হয় ও মৈত্রী ফুডস এর সৌজন্যে বাংলাদেশী বিভিন্ন খাদ্য সামগ্রী সম্বলিত গিফট ব্যাগ প্রদান করা হয়।
অনুষ্ঠান আয়োজনে হাইকমিশনকে সহযোগিতা করে বাংলাদেশের অগ্রণী ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং ন্যাশনাল ব্যাংক রেমিট্যান্স হাউজ এবং বাংলাদেশী ব্রান্ড প্রাণ এবং মৈত্রী ফুডস।