পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, আমাদের মাটি, পানি, বায়ু নষ্ট করে কোনও উন্নয়ন হতে পারে না। এটা যদি হয়, তাহলে বুঝতে হবে এটা ব্যক্তি স্বার্থের উন্নয়ন।
বুধবার (১৮ ডিসেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে আয়োজিত ‘কৃষি খাতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও করণীয়’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ এগ্রিকালচার রিপোর্টার্স ফোরামের (বিএআরএফ) উদ্যোগে এ আয়োজন করা হয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘কৃষি ও পানিকে একসঙ্গে থাকতে হবে। পানি ব্যবস্থাপনাকে কৃষি ব্যবস্থাপনা থেকে সরিয়ে নেওয়া যাবে না। আমরা অধিক খাদ্য ফলাবো এতে কোনও দ্বিমত নেই। কিন্তু খাদ্য অধিক ফললেই যে, যার খাদ্যের বেশি প্রয়োজন সে বেশি পাচ্ছে তা কিন্তু নয়। খাদ্যের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘কৃষক অধিকার আইন বলে একটা আইন ২০০৮, ২০০৯, ২০১০ ও ২০১১ সালে খসড়া হয়েছিল। ওই খসড়া নিয়ে আমরা ভাবতে পারি। কৃষি জমি সুরক্ষা আইনের একটা খসড়া চূড়ান্ত হয়েছে। আশা করছি, সেই খসড়াটি জানুয়ারিতে পাবলিক কনসালটেশনের মাধ্যমে খুব তাড়াতাড়ি আইনে পরিণত করার উদ্যোগ নেবে কৃষি মন্ত্রাণাল। কৃষি বাঁচলে দেশ বাঁচবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘খাদ্যের অধিকারকে সাংবিধানিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কথা ভাবতে হবে। এখন কিন্তু খাদ্যের অধিকার বা নিরাপদ খাদ্যের অধিকার নেই। অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান ও খাদ্য এগুলো আমাদের রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি হিসেবে আছে। এগুলো মূলনীতি হিসেবে অবলবৎ থাকা উচিত নয়। এগুলো বলবৎযোগ্য অধিকার হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া উচিত।’
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এখন একটা হাইব্রিড যুগে আছি। খাদ্যেও আমরা হাইব্রিড যুগে চলে গিয়েছি। রাষ্ট্রীয় পর্যায় থেকে বলা হয়, অধিক খাদ্য ফলাও; এটা যেমন একটা বাস্তবতা, অধিক খাদ্যের পাশাপাশি নিরাপদ খাদ্যও কিন্তু একটা বড় বাস্তবতা।’
অন্তর্বর্তী সরকারের এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বাংলাদেশ সরকারের একটা নীতি আছে। সেটির নাম হলো অর্গানিক ফার্মিং নীতিমালা। জৈব কৃষি নীতিমালা। সরকার এই নীতিমালা নিয়ে সিরিয়াসলি কাজ করছে এটা কিন্তু দেখিনি। অর্গানিক ফার্মিং করে বিদেশে আমাদের রফতানি দিন দিন বাড়ছে। এটা অনেকটাই হচ্ছে প্রাইভেট উদ্যোগে। তবে এটা সত্য এখন আমরা যে অবস্থায় এসেছি, ১০০ পারসেন্ট অর্গানিক ফার্মিং দিয়ে আমরা এত মানুষকে খাওয়াতে পারবো না। কিন্তু আমাদের কৃষির একটা পরিমাণ তো অর্গানিক ফার্মিংয়ে হওয়া উচিত।’
বিএআরএফর সভাপতি রফিকুল ইসলাম সবুজের সভাপতিত্ব এবং সাধারণ সম্পাদক কাওসার আজমের সঞ্চালনায় বৈঠকে আরও ছিলেন– কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মোহাম্মদ এমদাদ উল্লাহ মিয়ান, বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু, বাংলাদেশ সিড অ্যাসোসিয়েশনের (বিএসএ) মহাসচিব কৃষিবিদ ড. মো. আলী আফজাল প্রমুখ।