সৌদি আরবে ১০ দিন ধরে চলা রেড সি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের পর্দা নামল। এই জাঁকজমকপূর্ণ চলচ্চিত্র উৎসব বছরের সেরা কাজের স্বীকৃতি দিয়েই শেষ করল এবারের যাত্রা।
ধর্মীয়ভাবে রক্ষণশীল দেশটি কল্পনাশক্তির বাইরে গিয়েই বিগত তিন বছর ধরে সিনেমা নিয়ে এমন মহাযজ্ঞ করে বিশ্ববাসীকে চমকে দিয়ে আসছিল। আর এবারের উৎসব ছিল চোখ ধাঁধানো।
যেখানে জড়ো হয়েছেন বিশ্ব চলচ্চিত্র অঙ্গনের নামিদামি সব তারকা।
এ বছর তিউনিসীয় পরিচালক লতফি আচার পরিচালিত সিনেমা ‘রেড পাথ’ জিতেছে সৌদি আরবের রেড সি আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের সেরা চলচ্চিত্র এবং সেরা পরিচালকের পুরস্কার। সিনেমাটির বিশ্ব প্রিমিয়ার হয়েছিল সুইজারল্যান্ডের লোকার্নো ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে। এবার উৎসবের প্রতিযোগী বিভাগে থাকা ১৫টি চলচ্চিত্রের মধ্যে এটি ছিল একটি।
যেগুলো মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং প্রথমবারের মতো এশিয়া থেকে নির্বাচন করা হয়েছিল।
সেরা ফিচার ফিল্মের খেতাব ও সেরা নির্মাতা হওয়ার পর লুতফি বলেন, ‘এটি আমার জন্য সত্যিই আনন্দের। আমি আসলে সিনেমাটির মাধ্যমে আমার দেশের গল্পটা বলতে চেয়েছি। বিশ্ববাসীর কাছে জানাতে চেয়েছি যে আমার দেশের শিশুরা কেমন আছে। কতটা ভয়ংকর মানসিক অসুস্থতা নিয়ে তারা বেড়ে ওঠে।’
উৎসবের মূল ফিচার ফিল্ম প্রতিযোগিতার জুরি সভাপতি ছিলেন বিখ্যাত পরিচালক স্পাইক লি। যিনি সঙ্গী হিসেবে মিসরীয় পরিচালক আবু বাকর শওকি, যুক্তরাজ্যের অভিনেত্রী মিনি ড্রাইভার, তুর্কি অভিনেত্রী তুবার বয়ুকস্তুন এবং মার্কিন অভিনেতা-প্রযোজক ড্যানিয়েল ডে কিমকে নিয়ে কাজ করেন।
সেরাদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস এবং ভায়োলা ডেভিসকেও সম্মাননা প্রদান করা হয়। যারা যথাক্রমে সারা জেসিকা পার্কার এবং হানা আল-ওমাইর দ্বারা পুরস্কৃত হন।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া জোনাস তার সম্মাননা গ্রহণকালে বলেন, ‘আমি সব সময় বিশ্বাস করি, বিনোদনের বিশ্বজনীন শক্তি মানুষের মধ্যে সংহতি সৃষ্টি করতে পারে। রেড সি দলের প্রতিশ্রুতি এবং বিশ্বজুড়ে গল্প বলার বৈচিত্র্য প্রদর্শনের জন্য আমি তাদের প্রশংসা করি।’
রেড সির এবারের চতুর্থ সংস্করণে উপস্থিত ছিলেন সেলিব্রিটিসহ আরো অনেক বড় তারকা, যেমন সিনথিয়া এরিভো, মিশেল ইয়ো, বেঞ্জামিন কুম্বারব্যাচ, মাইকেল ডগলাস, ক্যাথরিন জেটা-জোনস, অলিভিয়া, এমিলি ব্লান্ট এবং ইভা লংগোরিয়া।
এ বছর রেড সি চলচ্চিত্র উৎসবের মূল থিম ছিল ‘দ্য নিউ হোম অফ ফিল্ম’। এই থিমের অধীনে উৎসবে ৮১টি দেশের ১২০টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এবারের উৎসবের ভেন্যু ছিল নতুন। সেটা আল বালাদের সৌকে। আগেরগুলো শহরের রিটজ-কার্লটন হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থাপনা করেন ড্যানিয়েল রহমে ও হাকিম জামা এবং পরিচালনা করেন জোমানা আল-রশিদ, রেড সি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আসেরি, রেড সি ফিল্ম ফাউন্ডেশনের সিইও এবং শিভানি পান্ডিয়া মালহোত্রা।
ফেস্টিভ্যাল পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা
গোল্ডেন ইউসর সেরা ফিচার ফিল্ম : রেড পাথ
পরিচালক : লতফি আচার
সিলভার ইউসর ফিচার ফিল্ম : টু এ ল্যান্ড আননুন
পরিচালক : মাহদি ফ্লেইফেল
ইউসর সেরা পরিচালক : লতফি আচার (রেড পাথ)
ইউসর জুরি পুরস্কার : স্পিকিং হেব ফর মি. রামবো।
পরিচালক : খালেদ মনসুর
ইউসর সেরা অভিনেতা : মাহমুদ বাকরি (টু এ ল্যান্ড আননুন)
ইউসর সেরা অভিনেত্রী : মারিয়াম শেরিফ (স্নো হোইট)
ইউসর সেরা স্ক্রিনপ্লে : সং অব অ্যাডাম (ওদে রাসিদ)
ইউসর সিনেমাটিক অ্যাচিভমেন্ট : টু কিল অ্যা মোঙ্গলিয়ান হর্স।
পরিচালক : শাওক্সুয়ান জিয়াং
গোল্ডেন ইউসর সেরা শর্ট ফিল্ম : হাচ
পরিচালক: আলিরেজা কাজেমিপুর, পান্টা মোস্লেহ
সিলভার ইউসর শর্ট ফিল্ম : আলাজার
পরিচালক: বেজা হেইলু লেমা
শর্ট স্পেশাল মেনশন : চিলর্ডন অব বেজান
পরিচালক : আহমেদ খাত্তাব
অন্যান্য পুরস্কার
আশার্ক সেরা ডকুমেন্টারি : স্টেট অব সাইলেন্ট
পরিচালক : সান্তিয়াগো মাজা
চোপার্ড এমার্জিং সৌদি ট্যালেন্ট : রুলা দাখিলাল্লাহ
চলচ্চিত্র : মাই ড্রাইভার অ্যান্ড আই।
আল-উলা দর্শক পুরস্কার সৌদি ফিল্ম : হাবল
পরিচালক : আব্দুল আজিজ আলশলাইহি
আল-উলা দর্শক পুরস্কার আন্তর্জাতিক ফিল্ম : লিটল জাফান
পরিচালক : লরেন্স ভ্যালিন