হলে পরীক্ষা চলাকালীন হিজাব খোলে মুখ না দেখানোয় এক অন্তঃসত্তা নারী শিক্ষার্থীর পরীক্ষা বাতিল করে হল থেকে বহিষ্কার করার অভিযোগ উঠেছে। পরে এ বিষয়ে ৯৯৯ এ কল দিয়ে সহযোগিতা চাইলে পুলিশ আসলেও ঐ পরীক্ষার্থী কোন সহযোগিতা পাননি।
ঐ নারী শিক্ষার্থীর নাম উম্মে আন্জুমানয়ারা। সে মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের ২০২১ সেশনের ৩য় এবং ৪র্থ সেমিস্টারের পরীক্ষার্থী।
ঘটনাটি ঘটেছে খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা সরকারি কলেজে।
শুক্রবার বিকেল ২টা থেকে বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয় (বাউবি) এর সমাজতত্ত্ব-২ এর পরীক্ষা চলছিল। পরীক্ষা চলাকালীন খাতায় স্বাক্ষর করতে আসেন কলেজের গণিতের শিক্ষক আবুল হোসেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থী উম্মে আন্জুমানয়ারার হিজাব খোলে মুখ দেখাতে বলেন। শিক্ষার্থী মহিলা শিক্ষকের সামনে মুখ খুলবেন বলে জানালে অপর শিক্ষক আবুল বাশার মিয়াজি এসে তাকে বহিষ্কার করা হবে বলে ধমক দেন।
এসময় অন্যান্য শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে উম্মে আন্জুমানয়ারার পক্ষে সুপারিশ করলে শিক্ষকরা তা নাকচ করেন। মুখ না দেখালে শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দিবেন বলে জানান এবং তার খাতা জমা নিয়ে নেন। পরে অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন মজুমদার শিক্ষার্থীকে হল থেকে বহিষ্কার করেন। পরীক্ষা দিতে আসা অন্তঃসত্তা ঐ শিক্ষার্থীর শত অনুরোধেও শিক্ষকদের মন গলেনি। এরপর শিক্ষার্থী ৯৯৯ এ কল দিয়ে সহযোগিতা চাইলে মাটিরাঙ্গা থানার ওসিসহ একটি টিম কলেজে আসেন এবং অধ্যক্ষের কথা মতো শিক্ষার্থীকে কলেজ থেকে বের করে দেন। গেইটের বাহিরে বের করে দিয়ে এসময় গেইট তালা মেরে দেওয়া হয়।
পরীক্ষার্থী উম্মে আন্জুমানয়ারা বলেন, ‘আমার পরীক্ষা চলছে। আমি আরো ২টা বিষয়ের পরীক্ষা দিয়েছি। গত বছরও ৮টা পরীক্ষা দিয়েছি। শিক্ষকরা আমাকে চিনে এবং জানে। আমার অন্যান্য সহপাঠীরাও আমাকে চিনে। এখানে জোর করে আমার হিজাব খোলে মুখ দেখতে চাওয়া হয়েছে। আমি সবসময় হিজাব পরে আসি। কখনো সমস্যা হয়নি। অধ্যক্ষ স্যার, বাশার মিয়াজি স্যার এবং আবুল হোসেন স্যার আমাকে অপমান করেছে। নিকাব-হিজাবকে কটাক্ষ করে আমার পরীক্ষা বাতিল করেছে। আমাকে হেনস্থা করেছে। ৯৯৯ এ কল দিয়েও আমি কোন সহযোগিতা পায়নি। আমি এদের দৃষ্টান্তমুলক বিচার চাই।’
মাটিরাঙ্গা কেন্দ্রীয় জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব মাওলানা হারুনুর রশিদ বলেন, ‘হিজাব খোলে মুখ না দেখানোয় মহিলা শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করা এটা খুবই জঘন্য একটি অপরাধ। পর্দা আল্লাহর ফরজ বিধান। ঐ নারী শিক্ষার্থী যখন হলে প্রবেশ করলো তখন কেন মুখ দেখার প্রয়োজনবোধ হলোনা। তাছাড়া তার তো প্রবেশপত্র রয়েছে। পরীক্ষা চলাকালীন স্বাক্ষর করার সময় কেন মুখ দেখতে হবে? তাছাড়া নারী শিক্ষার্থী যেহেতু বলেছে যে সে মহিলা শিক্ষিকার সামনে মুখ দেখাবে তাহলে তো তা আর অন্যায় বলেনি। আমরা মনে করি ঐ শিক্ষকরা এখানে কৌশলে আল্লাহর ফরজ বিধান পর্দাকে হেয় করেছে, কটাক্ষ করেছে। এটা জঘন্য অপরাধ। অভিযুক্ত সকল শিক্ষকদের শাস্তির দাবী জানাচ্ছি।’
মাটিরাঙ্গা থানার অফিসার্স ইনচার্জ তৌফিকুল ইসলাম তৌফিক বলেন, ‘পরীক্ষা চলাকালীন মাঝামাঝি সময়ে ৯৯৯ থেকে আমাকে বিষয়টি সম্পর্কে জানানো হয়। পরে আমি টিম নিয়ে কলেজে যাই এবং অধ্যক্ষের সাথে কথা বলি। গিয়ে দেখি অধ্যক্ষ শিক্ষার্থীকে বহিষ্কার করে দিয়েছেন। যেহেতু কলেজের বিষয় এবং আমি যাওয়ার পূর্বেই তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে তাই আমি শিক্ষার্থীকে সহযোগীতা করতে পারিনি।’
এই বিষয়ে মাটিরাঙ্গা সরকারি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ কামাল উদ্দিন মজুমদার’র ব্যক্তিগত দুই মোবাইল নাম্বারে বার বার কল করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। মোবাইল টেক্স করলেও তিনি কোন উত্তর দেননি।
মাটিরাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনজুর আলম বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। শিক্ষার্থীকে আমি ডেকেছি। আগামীকাল তার থেকে বিস্তারিত জেনে উর্ধ্বতন কর্মকতাদের সাথে কথা বলে এ বিষয়ে আইনি ব্যবস্থা নেব।’
খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান বলেন, ‘বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আমি বিষয়টি জেনেছি এবং বিস্তারিত খোঁজ-খবর নিচ্ছি। আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করব।’