গাজীপুরের টঙ্গীর ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা ঘিরে গাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও মারধরের ঘটনায় মাওলানা জুবায়েরের অনুসারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে।
ভারতের মাওলানা সাদ কান্ধলভীর অনুসারী তাবলিগের এক সাথী বাদী হয়ে গতকাল শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোরে টঙ্গী পশ্চিম থানায় মামলাটি দায়ের করেন। এতে ৩৪ জনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা ৩০ থেকে ৪০ জনকে আসামি করা হয়।
অন্যদিকে ঘটনার প্রতিবাদে শুক্রবার জুমার নামাজের পর সাদ অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল করেন জুবায়েরপন্থী কয়েকশ মুসল্লি। এ সময় ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে তাঁদের ওপর সাদের অনুসারীদের হামলার বিচার দাবি করে পুলিশের কাছে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সতর্ক অবস্থানে ছিল পুলিশ, র্যাব ও সেনাবাহিনী।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ২৯ নভেম্বর থেকে ৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ইজতেমা মাঠে পাঁচ দিনের জোড় ইজতেমা পালন করেন জুবায়েরপন্থীরা। এরপর ২০ ডিসেম্বর থেকে ৫ দিনের জোড় পালনের ঘোষণা দেন সাদের অনুসারীরা। কিন্তু জুবায়েরের অনুসারীরা সাদের অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে জোড় ইজতেমা করতে দেবেন না বলে ঘোষণা দেন। এর মধ্যে গত বৃহস্পতিবার সাদের অনুসারীদের ইজতেমা মাঠে প্রবেশের খবর ছড়িয়ে পড়লে বেলা ১টার দিকে স্টেশন রোড এলাকায় মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন জুবায়েরের অনুসারীরা। এ সময় সাদ অনুসারীদের একটি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। সাদ অনুসারী দুই মুসল্লি আহত হন। ওই ঘটনায় শুক্রবার ভোরে সাদ অনুসারী তাবলিগের সাথী মো. শিহাব বাদী হয়ে থানায় মামলা করেন।
এ বিষয়ে সাদ অনুসারীদের গণমাধ্যম সমন্বয়ক মো. সায়েম বলেন, ‘আমরা গতকাল (গত বৃহস্পতিবার) কোনো উচ্ছৃঙ্খলতায় জড়াইনি। জুবায়েরের অনুসারীরা আমাদের ওপর পরিকল্পিতভাবে হামলা করেছে। পরে আমরা মাশোয়ারা (পরামর্শ) করে মামলার সিদ্ধান্ত নিই।’
টঙ্গী পশ্চিম থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. ইস্কেন্দার হাবিব মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ‘আজ (শুক্রবার) ভোরে সাদের অনুসারীরা থানায় একটি মামলা করেছেন। মামলায় ৩৪ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামা আসামি ৩০ থেকে ৪০ জন। এ ব্যাপারে আইনি পদক্ষেপ চলমান।’
এদিকে শুক্রবার জুমার নামাজের পর সাদের অনুসারীদের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে টঙ্গী পূর্ব থানার সামনে জড়ো হন জুবায়ের অনুসারীরা। তাঁরা থানার মূল ফটকের সামনে অবস্থান নিয়ে ২০১৮ সালের হামলার বিচার দাবি করেন। পরে সেখান থেকে কয়েকজন প্রতিনিধি গিয়ে গাজীপুর মহানগর পুলিশের টঙ্গী জোনের উপকমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিনের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দেন।
বিক্ষোভ চলাকালে জুবায়ের অনুসারীরা বলেন, ২০১৮ সালের ১ ডিসেম্বর যারা ইজতেমা মাঠকে রক্তাক্ত করেছে, হামলা-সন্ত্রাস করে বিশ্বে বাংলাদেশের বদনাম করেছে, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে তাদের বিচার করতে হবে। তাবলিগের মধ্যে কোনো মামলা-মোকদ্দমা নেই। তাঁরা অনেক ধৈর্যের পরিচয় দিয়েছেন, কোনো মামলা করেননি। কিন্তু তাঁদের ধৈর্যের বাঁধ ভাঙলে হাজার হাজার মামলা হবে। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ৪ ফেব্রুয়ারি তাঁদের (সাদ অনুসারী) কাছে মাঠ হস্তান্তর করা হবে।
টঙ্গী জোনের উপকমিশনার এন এম নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘আমার কাছে তারা (জুবায়েরপন্থী) একটি স্মারকলিপি দিয়েছেন। আমরা এ বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব। এরপর যে সিদ্ধান্ত আসে, সেই অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’