প্রকাশ: শনিবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১২:১০ এএম | অনলাইন সংস্করণ
রাজধানীর শাহবাগের একটি সুপার হোম হোস্টেলে থাকতেন কবি হেলাল হাফিজ। শুক্রবার (১৩ ডিসেম্বর) সেখানেই মারা যান। জানা গেছে, ওই হোস্টেলের ওয়াশরুমে পড়ে ছিলেন কবি হেলাল হাফিজ। মাথায় ক্ষত, সেখান থেকে বের হয়েছে রক্ত। বর্তমানে তার মরদেহ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে রাখা হয়েছে।
শাহবাগ থানার ওসি মোহাম্মদ খলিল মনসুর বলেন, শাহবাগের ওই হোস্টেলের একটি রুমে থাকতেন কবি হেলাল হাফিজ। শুক্রবার দুপুরে হোস্টেলের একটি কমন ওয়াশরুমে যান তিনি। অনেকক্ষণ হলেও তার সাড়া না পেয়ে হোস্টেলের অন্য রুমের সদস্যরা ওয়াশরুমের সামনে এসে ডাকাডাকি করেন। এক পর্যায়ে তারা বাধ্য হয়ে ওয়াশরুমের দরজা ভাঙেন এবং দেখতে পান কবি ওয়াশরুমের ফ্লোরে পড়ে রয়েছেন কবি। এ সময় তার মাথা ফেটে রক্ত বের হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ধারণা স্ট্রোক বা অন্য কোনো শারীরিক সমস্যার কারণে তিনি ওয়াশরুমে পড়ে যান। সেখানকার বেসিনটিও ভাঙা ছিল। আমাদের ধারণা, তিনি বেসিনের ওপর পড়ে যান। এতে বেসিন ভেঙে যায় এবং ওনার মাথা ফেটে যায়।
১৯৪৮ সালের ৭ অক্টোবর নেত্রকোনায় হেলাল হাফিজের জন্ম হয়। ১৯৮৬ সালে তার প্রথম কবিতার বই ‘যে জলে আগুন জ্বলে’ প্রকাশিত হয়। কবিতার জন্য ২০১৩ সালে তিনি বাংলা একাডেমি পুরস্কার পান।
১৯৬৫ সালে হেলাল হাফিজ নেত্রকোনা দত্ত হাইস্কুল থেকে এসএসসি এবং ১৯৬৭ সালে নেত্রকোনা কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাস করেন। ওই বছরই কবি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ভর্তি হন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় ১৯৭২ সালে তিনি তৎকালীন জাতীয় সংবাদপত্র দৈনিক ‘পূর্বদেশে’ সাংবাদিকতায় যোগদান করেন।
১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তিনি ছিলেন দৈনিক পূর্বদেশের সাহিত্য-সম্পাদক। ১৯৭৬ সালের শেষ দিকে তিনি দৈনিক ‘দেশ’পত্রিকার সাহিত্য-সম্পাদক পদে যোগদান করেন। সর্বশেষ তিনি দৈনিক যুগান্তরে কর্মরত ছিলেন।
কবিতায় অসামান্য অবদানের স্মারক হিসেবে হেলাল হাফিজকে ২০১৩ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কার দেওয়া হয়। এ ছাড়াও তিনি পেয়েছেন- যশোর সাহিত্য পরিষদ পুরস্কার (১৯৮৬), আবুল মনসুর আহমদ সাহিত্য পুরস্কার (১৯৮৭), নেত্রকোনা সাহিত্য পরিষদের কবি খালেকদাদ চৌধুরী পুরস্কার ও সম্মাননা।
কবি হেলাল হাফিজের লেখালেখির সূচনা ঘটে ষাটের দশকের উত্তাল সময়ে। ১৯৬৯ সালে গণঅভ্যুত্থানের সময় রচিত ‘নিষিদ্ধ সম্পাদকীয়’ কবিতাটি তাকে কবিখ্যাতি এনে দেয়। সাংবাদিকতা করার দরুণ কবি ওই সময়ের উত্তাল পরিবেশের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হতে পেরেছিলেন। তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'যে জলে আগুন জ্বলে' লেখার ঠিক ২৬ বছর পর ২০১২ সালে দ্বিতীয় কাব্যগ্রন্থ লিখেন। বহুল প্রতিক্ষীত সেই 'কবিতা একাত্তর'ও ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।
স্বল্পপ্রজ এই কবি বিশের দশকে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। তার কবিতার ভাষা সঠিক সময়ে সঠিক শব্দকে ধারণ করায় সময়ের প্রাসঙ্গিক কবি বলেই পরিচিত। তাছাড়া প্রেম ও দ্রোহের কবি হিসেবেও তিনি জনপ্রিয়।