দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের স্বচ্ছতা নিশ্চিতে তাদের আয় ও সম্পদ বিবরণীর তথ্য প্রকাশের আহ্বান জানিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।
একইসঙ্গে তাদের দুর্নীতির অভিযোগ ও দলীয় আনুগত্য প্রকাশ, পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনা ও নজিরবিহীন প্রাণহানি ও ত্যাগের বিনিময়ে সৃষ্ট ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর অভীষ্টের প্রতি অনড় ও সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকারের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।
বুধবার (১১ ডিসেম্বর) এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে এই আহ্বান জানায় টিআইবি।
দুদকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের গুরুদায়িত্ব গ্রহণের প্রেক্ষিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘জাতির ক্রান্তিলগ্নে জনপ্রত্যাশার কেন্দ্রীয় প্রতিষ্ঠান দুদকের শীর্ষ অবস্থানের স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিতের স্বার্থে নিম্নোক্ত বিষয়সমূহ স্বপ্রণোদিতভাবে প্রকাশের জন্য আহ্বান জানাই।’
ইফতেখারুজ্জামান দুদকের দুই কমিশনার ও চেয়ারম্যানের নিজের ও নিকট পরিবারের নামে বেনামে অর্জিত আয় ও সম্পদের তথ্য, আয়ের বৈধ সূত্রের সঙ্গে অর্জিত আয় ও সম্পদের সামঞ্জস্যতার তথ্য, নিরপেক্ষ নিরীক্ষক কর্তৃক আয় ও সম্পদ বিবরণীর যথার্থতা, পর্যাপ্ততা ও সামঞ্জস্যতা যাচাইয়ের সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ, পেশাগত জীবনের কোনো পর্যায়ে কোনো প্রকার ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের প্রকাশিত বা অপ্রকাশিত তথ্যের বিষয়ে নিজের অবস্থান, প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ দলীয় রাজনৈতিক আনুগত্যের তথ্য চেয়েছেন।
পাশাপাশি উল্লিখিত বিষয়ে কোনো প্রকার অসামঞ্জস্যতার ক্ষেত্রে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ায় তদন্ত সাপেক্ষে জবাবদিহি করতে প্রস্তুত মর্মে ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন।
একইসঙ্গে, দুদকের নবনিযুক্ত চেয়ারম্যান ও কমিশনারদের প্রতি বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের মূল চেতনা ও ‘নতুন বাংলাদেশ’-এর অভীষ্টের প্রতি অনড় থাকার পাশাপাশি সর্বোচ্চ শ্রদ্ধাবোধের সঙ্গে অর্পিত দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকারের আহ্বান জানান টিআইবির নির্বাহী
এর আগে গতকাল মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) দুদকের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে সদ্য পদত্যাগ করা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে। কমিশনার হিসেবে তার সঙ্গী হয়েছেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদ।
গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদের সই করা এক প্রজ্ঞাপন থেকে এ তথ্য জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ (২০০৪ সনের ৫ নম্বর আইন)-এর ৬(১) ধারার বিধান অনুসারে তাদেরকে দুর্নীতি দমন কমিশনের কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হলো।
এর মধ্যে দুদক আইন, ২০০৪-এর ৫(১) ধারার বিধানমতে ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনকে কমিশনের চেয়ারম্যান নিয়োগ করা হয়। নিয়োগকৃতদের মধ্যে চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মোমেনের বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের এবং কমিশনার মিঞা মুহাম্মদ আলি আকবার আজিজী এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) হাফিজ আহ্সান ফরিদের বেতন, ভাতা, অন্যান্য সুবিধা ও পদমর্যাদা সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের একজন বিচারকের সমরূপ হিসাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।
গত ২৯ অক্টোবর দুর্নীতি দমন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ মঈনউদ্দীন আবদুল্লাহ এবং কমিশনার (তদন্ত) মো. জহুরুল হক ও কমিশনার (অনুসন্ধান) মোছা. আছিয়া খাতুন পদত্যাগ করেন। তারা সবাই আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে নিয়োগ পেয়েছিলেন।