চাঁপাইনবাবগঞ্জে পরিবেশ অধিদপ্তরকে ম্যানেজ করে নদী থেকে ধানের জমিতে সেচের পানি দেয়ার জন্য নির্মিত ড্রেন দিয়ে আসছে অটোরাইস মিলের গরম, দুর্গন্ধযুক্ত, কালো-নোংরা বর্জ্য পানি। প্রায় এক কিলোমিটার দূর থেকে দিন-রাত ড্রেন দিয়ে সরাসরি ফসলী জমিতে ঢুকছে এসব পানি। এর প্রভাবে অধিক হারে পোকামাকড়ের আক্রমণ ও জমিতে জমে থাকা পঁচা পানিতে নুইয়ে পড়েছে ধান। এতে ফলনহীন হয়ে পড়েছে ধানের জমি। অন্যদিকে মিল মালিকগন এতই প্রভাবশালী কৃষকদের এ দুর্দশায় তাদের কোন ভ্রূক্ষেপ নাই।এমতাবস্থায় কৃষকরা তাদের পৈত্রিক জমি অল্প দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছে। ফলে অধিকাংশ মিল মালিক শত শত বিঘা জমির অনায়াসে মালিক হচ্ছেন। পরে তারা ঐসব জমিতে বর্জ্য না ফেলে নিজেরাই ধান চাষ করছেন।
কৃষকদের অভিযোগ, জমিতে থাকা পানির প্রভাব থেকে ধান রক্ষায় অধিক হারে সার ও কীটনাশক ব্যবহার করতে গিয়ে খরচ বাড়ছে কয়েকগুন বেশি। ঋণ করে ধান চাষাবাদ করতে গিয়ে উৎপাদন খরচ না উঠায় বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা। ক্ষতিপূরণ দাবি করলে বা এর প্রতিবাদ করলেই দেয়া হয় নানরকম ভয়ভীতি ও হুমকি। গত ৫-৭ বছর ধরে নদী থেকে পানি উত্তোলনের সেচ প্রকল্পের ড্রেন দিয়ে গরম ও দূষিত পানি ফসলী জমিতে যাচ্ছে বলে দাবি কৃষকদের।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে অটোরাইস মিলের ধান সিদ্ধ ও বিভিন্ন কাজে ব্যবহার করা দুর্গন্ধযুক্ত, নোংরা ও কালো পানিতে নষ্ট হচ্ছে কয়েক হাজার বিঘা ফসলী জমি। ঋণ করে ধান চাষাবাদ করে বিপাকে পড়েছেন সদর উপজেলার আতাহার, বুলনপুর, রাঁধুনীডাঙ্গা, বাইল্যাকান্দা মাঠের চাষীরা। কোথাও ফলন নেমেছে অর্ধেকে, আবার কোথাও শুধুমাত্র খড় পাচ্ছেন কৃষকরা। প্রতিবাদ করলেই উল্টো ভয়ভীতি দেখান মিল মালিকরা।
নয়াগোলা এলাকার কৃষক তরিকুল ইসলাম বলেন, গত ৬-৭ বছর ধরে এমন অবস্থা চলছে। অটোরাইস মিলের কেমিক্যালযুক্ত নোংরা সব পানি ছেড়ে দেয়া হয় ধানে সেচ দেয়ার জন্য ব্যবহৃত ড্রেনে। এসব পানি মিল থেকে সরাসরি এসে পড়ে ধানের জমিতে। এতে ধানের ফলন নেমেছে প্রায় অর্ধেকে। উল্টো নোংরা পানির কারনে খরচ বেড়েছে কয়েকগুণ। অন্যের জমি চাষাবাদ করে যে খরচ হচ্ছে জমিতে, তার কোন অংশই বাড়িতে তুলতে পারছি না।
ষাটোর্ধ আমজাদ হোসেন জানান, এনিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে পারে না। কারন প্রতিবাদ করলেই দেয়া হয় হুমকি ভয়ভীতি ও মামলার ভয়। কারন মিল মালিকরা বড় বড় ব্যবসায়ী। তাদের অর্থবিত্তের কাছে আমরা অসহায়। এমন অবস্থা জানার পরেও কোন প্রতিকার পায়না আমরা। স্বৈরাচারী মনোভাব নিয়ে রাইস মিল পরিচালনা করে তারা।
আতাহার এলাকার কৃষক আব্দুল খালেক বলেন, হাজার হাজার বিঘা জমি এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এরপরেও কোন পদক্ষেপ নেয় না স্থানীয় প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তর ও কৃষি বিভাগ। কারন তারা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। তাদেরকে বারবার অভিযোগ দিলেও কোন ব্যবস্থা নেয় না। অটোরাইস মিল মালিকদের অর্থবিত্তের কাছে তারা বিক্রি। কৃষকদের জন্য কেউ নেই।
জেলা মিল মালিক ও আতব ধান চাউল ব্যবসায়ী সমিতির কয়েকজন সদশ্য জানান তাঁদের বর্জ্য পরিবেশ অধিদপ্তর যে ভাবে নির্দেশনা দিয়েছেন সেটা তারা অক্ষরে অক্ষরে পালন করছেন। কৃষকরা বলছেন মিল মালিকগন মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করছেন। তারা প্রকৃতপক্ষে ধান উতপাদন ব্যাহত করছেন।পরিবেশ অধিদপ্তর চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. আবু সাইদ জানান, উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ধান সিদ্ধ করা গরম পানি রাইস মিলের মধ্যে থাকা পুকুরেই রাখতে হবে। রাইস মিলের নোংরা পানি ফসলী জমিতে গিয়ে কৃষকদের ক্ষতি হলে তদন্ত সাপেক্ষে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। । চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাছমিনা খাতুন বলেন, নোংরা পানি ফসলী জমিতে ছেড়ে কৃষকদের ক্ষতি করতে পারে না অটোরাইস মিল মালিকরা। এবিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের সাথে কথা বলে তাদেরকে সঙ্গে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর ডি ডি পলাশ বিষয়টা তিনি অবগত, তিনি উপর মহলে বিষয়টি অবগত করেছেন এবং ভবিষ্যতে জেলা প্রসাশকের মিটিয়ে উপস্থাপন করবেন।
এ ব্যাপারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক আব্দুস সামাদ বলেন অচিরেই কঠোর ব্যাবস্থা নেয়া হবে।
উল্লেখ্য, জেলাজুড়ে মোট অর্ধশতাধিক অটোরাইস মিল রয়েছে। এরমধ্যে প্রায় ত্রিশটি মিল রয়েছে আতাহার-বুলনপুর এলাকায়। চলতি আমন মৌসুমে জেলায় ৫৪ হাজার ৩৭৫ হেক্টর জমিতে ধান চাষাবাদ হয়েছে।