প্রকাশ: মঙ্গলবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০২৪, ১০:২৪ পিএম | অনলাইন সংস্করণ
বাংলাদেশে দিন দিন কমছে জমির উর্বরতা। একই সঙ্গে ধীরে ধীরে কমে যাচ্ছে শ্রমিকের উৎপাদনশীলতাও। ১৯৯১ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত জমির উর্বরতা ছিল ২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। তবে ২০০১ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত উর্বরতা শক্তি কিছুটা বেড়ে হয়েছিল ৩ দশমিক ৩০ শতাংশ। কিন্তু ২০১১ সাল থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত ব্যাপক কমে উর্বরতা শক্তি দাঁড়ায় মাইনাস শূন্য দশমিক ৪৪ শতাংশে। এর মধ্যে ২০১২ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে উর্বরতা শক্তি কমে হয়েছে মাইনাস শূন্য দশমিক ৩৫ শতাংশ।
জমির উৎপাদন বৃদ্ধি নির্ভর করে দক্ষ মানবসম্পদ ব্যবহারের ওপর। তবে সার, কীটনাশক এবং ভূগর্ভস্থ পানির অত্যধিক ব্যবহার পরিবেশের অবনতির দিকে নিয়ে যায়। এতে ধীরে ধীরে চাল উৎপাদনে খরচ বেড়েছে। তবে সে হারে বাড়েনি কৃষকের লাভ।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) চার দিনব্যাপী বার্ষিক গবেষণা সন্মেলনের শেষ দিনে এক গবেষণায় এসব তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। রাজধানীর গুলশানের এক হোটেলে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
‘এগ্রিকালচারাল প্রডাকটিভিটি অ্যান্ড টেকনিক্যাল ইফিসিয়েন্সি ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক গবেষণাপত্র উপস্থাপন করেন বিআইডিএসের রিসার্স ফেলো তাজনোয়ারা সামিনা খাতুন। এ অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন বিআইডিএসের সাবেক মহাপরিচালক কাজী সালাউদ্দিন। শুরুতেই বক্তব্য দেন সংস্থাটির মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন। গবেষণাপত্র তৈরিতে টিমের সদস্য ছিলেন, বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ ইউনূস, সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর আব্দুস সাত্তার মন্ডল, সংস্থাটির রিসার্স ফেলো আজরিন করিন এবং রিসার্স অ্যাসোসিয়েটস রিজওয়ানা ইসলাম।
গবেষণায় বলা হয়েছে, দেশে চালের উৎপাদন খরচ বাড়ছে। প্রতি কেজি চালের উৎপাদন খরচ ২০১২ সালে ছিল ১০ টাকা ৫১ পয়সা। সেটি বেড়ে ২০১৫ সালে হয়েছে ১১ টাকা ৬৭ পয়সা, ২০১৮ সালে হয় ১২ টাকা ৮৮ পয়সা। এই কয়েক বছরে উৎপাদন খরচ বেড়েছে ৩ দশমিক ৪৫ শতাংশ। অন্যদিকে এক কেজি চাল বিক্রি করে লাভ হতো ২০১২ সালে ১৬ টাকা ১৭ পয়সা। এছাড়া ২০১৫ সালে ১৬ টাকা ৫২ পয়সা এবং ২০১৮ সালে ১৭ টাকা ৪৮ পয়সা। এক্ষেত্রে গড় লাভ আসে এক দশমিক ৩১ শতাংশ। মোট উৎপাদন খরচের সঙ্গে বিক্রির পর পাওয়া অর্থ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে লাভ কমছে। ফলে কৃষকরা তাদের বিনিয়োগে কম রিটার্ন পাচ্ছেন। কারণ তাদের উৎপাদিত পণ্যের দামের তুলনায় উৎপাদন খরচ দ্রুত বাড়ছে। এই প্রবণতা ধানচাষিদের জন্য একটি ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে।
গবেষণার ফলাফলে বাংলাদেশে কৃষি উৎপাদনশীলতা, প্রযুক্তিগত দক্ষতা এবং সম্পদের ব্যবহার সম্পর্কে গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে। জমির উর্বরাশক্তি বাড়াতে মাটির স্বাস্থ্য উন্নত করা জরুরি। উর্বরতা পুনরুদ্ধার করতে নিয়মিত মাটি পরীক্ষা, জৈবসার প্রয়োগ এবং একই জমিতে ফসলের ঘূর্ণন (ভিন্ন ভিন্ন ফসল চাষ) করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।