সাংবাদিক পলাশ মাহমুদ ও তার ফেসবুক স্ট্যাটাস
দেশের বাজারে খুচরা পর্যায়ে সয়াবিন তেলের দাম প্রতি লিটারে ৮ টাকা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এখন থেকে প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৭৫ টাকা, যা আগে ছিল ১৬৭ টাকা। আর খোলা সয়াবিন তেলের দাম হবে ১৫৭ টাকা, যা আগে ছিল ১৪৯ টাকা। গতকাল সোমবার (৯ ডিসেম্বর) ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠকের পর এ দাম ঘোষণা করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন।
তেলের এই দাম বৃদ্ধি প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা গতকাল বলেছিলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে সয়াবিন তেলের দাম ২০ শতাংশ বেড়েছে। ফলে স্থানীয় ছোট ছোট ব্যবসায়ীরা মজুদদারি করছে। অনেকে ধারণা করেছিলেন সামনে দাম বাড়বে, সেই পরিপ্রেক্ষিতে এই মজুদদারি হয়েছে। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় বাস্তবধর্মী বিশ্লেষণ করে নতুন এই দাম নির্ধারণ করা হলো।
এসময় বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, বাজারে ভোজ্য তেলের সরবরাহের ঘাটতি আছে। নতুন দাম আজকে (সোমবার) থেকেই কার্যকর হবে। এরপরে আর সরবরাহ ঘাটতি থাকবে না।
বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীনের এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি বিশেষ পোস্ট দেন প্রথম শ্রেণির একটি পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের প্রধান, সাংবাদিক পলাশ মাহমুদ। ভোরের পাতার পাঠকদের জন্য ফেসবুকের সেই পোস্টটি হবহু তুলে ধরা হলো:
“বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন আজ বলেছেন, ‘সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৮ টাকা না বাড়ালে আরও বেশি ঘাটতি দেখা দিত।’
বিষয় হচ্ছে, দাম বাড়ানোর আগে হঠাৎ করে বাজারে ঘাটতি দেখা দেয় এবং দাম বাড়ানোর ১ ঘণ্টার মধ্যে বাজারে বিক্রি শুরু হয়। তার মানে বাজারে আসলে ঘাটতি ছিল না। দাম বাড়ানোর জন্য সিন্ডিকেট করে কৃত্রিম ঘাটতি তৈরি করা হয়েছিল। বাণিজ্য উপদেষ্টা সেই কৃত্রিম ঘাটতি বা সিন্ডিকেটকে স্বীকৃতি বা বৈধতা দিয়ে দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। এতে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হচ্ছে, হয় সিন্ডিকেট মোকাবিলায় বাণিজ্য উপদেষ্টা ব্যর্থ অথবা তিনি নিজেই সিন্ডিকেটের অংশ।
উপদেষ্টা গতকাল বলেছেন, অংশীজনদের সঙ্গে আলোচনা করে সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ বক্তব্য বিনয়ের সঙ্গে প্রত্যাখ্যান করছি। উনি যদি শুধু ব্যবসায়ীদেরই অংশীজন মনে করেন তাহলে উনি জনগণের জন্য কাজ করছেন না, ব্যবসায়ীদের জন্য কাজ করছেন।
শুধু সয়াবিন তেল নয়, আলুর দাম নিয়ন্ত্রণেও তিনি সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দেশে যে পরিমাণ আলুর চাহিদা তার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে। আলু বিভিন্ন স্টোরেজে স্টক করে রেখে দাম বাড়ানো হয়েছে। বাণিজ্য উপদেষ্টা পুরো বিষয়টি জানেন। কোন কোন স্টোরেজে কী পরিমাণ আলু আছে সেই তালিকাও দেওয়া হয়েছিল। ভোক্তা অধিদপ্তর থেকেও চিঠি ইস্যু করে তালিকাসহ দিয়েছিল। কিন্তু উপদেষ্টা মহোদয়ের এ বিষয়ে সামান্যতম কোনো আগ্রহ দেখা যায়নি।
এবার বাণিজ্য উপদেষ্টার অন্য একটা বক্তব্য খেয়াল করি। উনি গত ২৪ নভেম্বর এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, কারখানায় গ্যাসের লাইন পেতে ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিয়েছিলেন। প্রশ্ন হলো, ঘুষ দেওয়া ও নেওয়া দুটোই অপরাধ কি না? যিনি নিজের কাজ উদ্ধারের জন্য ২০ কোটি টাকা ঘুষ দিতে পারেন তিনি একজন আত্মস্বীকৃত ঘুষ লেনদেনকারী। একজন আত্মস্বীকৃত ঘুষ লেনদেনকারীর হাতে এখন আমাদের গোটা দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও ভোক্তার ভাগ্য তুলে দেওয়া হয়েছে।
সাধারণ মানুষের স্বার্থ দেখার বিষয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টার কোনো আগ্রহ আছে বলে এখনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ দেখা যায়নি। ৫ আগস্টের পরবর্তী সরকার ছাত্র-জনতার সরকার। কিন্তু সেই সরকারে এমন বহু মানুষ ঢুকেছে যাদের ছাত্র-জনতার স্পিরিটের সঙ্গে সামান্যতম সম্পর্ক ছিল না এবং নেই।
আশঙ্কার বিষয় হলো, এই সরকারকে ছাত্র-জনতার সরকার বলা হলেও বাস্তবে জনতার কাছে এ সরকারের কোনো জবাবদিহি নেই এবং ভবিষ্যতেও করতে হবে না। পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের সংসদে বর্তমান সরকারের কাজের বৈধতা-জবাবদিহির প্রশ্ন আছে। যেহেতু জবাবদিহি নেই সেহেতু এ সরকারের কোনো কর্তা নির্দয়ভাবে জনগণের স্বার্থের ওপর ছুরি চালালেও তাকে পরিণাম নিয়ে ভাবতে হবে না।
এজন্য ৫ আগস্ট পরবর্তী সরকারের প্রতিটি কর্তার মনে রাখা দরকার, আপনাদের কাঁধে ১৫০০+ শহীদের জীবনের ভার, শত শত মানুষের পঙ্গুত্ববরণের ভার, ২০ হাজারের বেশি আহত মানুষের ভারী আর্তনাদ, কয়েক কোটি মানুষের প্রত্যাশার ভার। একটি জাতির স্বাধীনতার চাবি। আপনারা এভাবে স্রেফ কোনো ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের প্রতিনিধি হয়ে ১৮ কোটি মানুষের বিপক্ষে অবস্থান নিতে পারেন না।
বি. দ্র. তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তেল দিতে পারলাম না। দুঃখিত।”