ঝিকরগাছায় অর্থনৈতিক শুমারির তালিকায় যুবলীগ ছাত্রলীগ ও ছাত্র আন্দোলনের বিরোধীদের অন্তর্ভুক্ত
ঝিকরগাছায় অর্থনৈতিক শুমারির তালিকায় যুবলীগ ছাত্রলীগ ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতাকারীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে নতুন করে অন্তর্ভুক্তির নামে একটি নাটক মঞ্চায়নের ব্যবস্থা করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।
ডিজিটাল কারচুপির মাধ্যমে ফলাফল পাল্টে দিয়ে মেধাবী অনেক আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের নানা অজুহাতে বাদ দেয়া হয়েছে। অথচ বিতর্কিত ওই তালিকায় চিহ্নিত আওয়ামীলীগ যুবলীগ ও ছাত্রলীগ সদস্যদের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
ঘটনাটি জানাজানির ফলে নিয়োগ প্রত্যাশীদের মাঝে তীব্রনিন্দা, ক্ষোভ ও সমালোচনা সৃষ্টি হয়েছে।
জানা গেছে, ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অর্থনৈতিক শুমারি-২৪’ এর মূল শুমারী গনণা কার্যক্রমে ‘সুপারভাইজার ও তথ্য সংগ্রহকারী’ পদে ঝিকরগাছায় স্থায়ীভাবে বসবাসকারী বেকার যুবক, মহিলা এবং ছাত্র -ছাত্রীদের নিকট দরখাস্তের আহবান জানানো হয়।
গুগল লিংকের মাধ্যমে ঝিকরগাছা উপজেলায় অর্থনৈতিক শুমারি-২৪ এর মূল শুমারির তথ্য সংগ্রহের জন্য গত ১/১২/২৪ হতে ৩/১২/২৪ তারিখ পর্যন্ত অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়।
আবেদনকারীদের গত ০৪/১২/২৪ তারিখ বুধবার সুপারভাইজার ও তথ্যসংগ্রকারী পদের জন্য লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। ঐদিন রাতেই পরিক্ষায় উর্ত্তিণ প্রার্থীদের একটি তালিকা প্রকাশ করা হলেও পরদিন সকালে তা পরিবর্তন করে নতুন একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়।
এরপর থেকে এই নিয়োগে ব্যাপক অনিয়ম এবং আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের পুনর্বাসনের অভিযোগ ওঠে। আবেদনকারী নিয়োগবঞ্চিত মেধাবী শিক্ষার্থীদের অনেকের অভিযোগ, পূর্বের ও নতুন আবেদনের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত যুবলীগ ছাত্রলীগের যাদের নাম এসেছে তাঁরা আগস্টের 'বৈষম্য বিরোধী ছাত্র জনতার আন্দোলনের সরাসরি বিরোধী ভূমিকায় লিপ্ত ছিল।
তথ্যানুসন্ধানে জানা গেছে, ঝিকরগাছা উপজেলা পরিসংখ্যান কর্মকর্তা নাসরিন সুলতানার নির্দেশে আইটি সুপারভাইজার পদে নিয়োগ দেয়া হয়েছে শেখ শফিকুল ইসলামকে। এই পরিসংখ্যান বিভাগের কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানান অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে । তিনি আওয়ামী পরিবারের সদস্য।
অভিযোগ আছে, বেনেয়ালী গ্রামের বাসিন্দা শেখ শফিকুল ইসলাম জুলাই-আগস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে প্রকাশ্যে বিরোধীতাকারী ও গদখালী ইউনিয়ন যুবলীগের ক্যাডার হিসাবে পরিচিত।
এই ব্যাপারে নাসরিন সুলতানাকে ফোন করলে তিনি জানান, এই নামগুলো ঢাকা থেকে অর্ডার আসছে বাকি গুলো ইউএনও স্যার বলতে পারবেন।
সুপারভাইজার ও তথ্য সংগ্রহকারী পদে প্রকাশিত চূড়ান্ত তালিকায় ছাত্রলীগের একাধিক নেতাকর্মীর নাম এসেছে। এছাড়াও পরিক্ষা না দিয়েও চূড়ান্ত তালিকায় উর্ত্তীর্ণ হওয়া, এক জনের নাম একাধিকবার আসা, এনজিও এবং বিভিন্ন ব্যবসায়ী কর্মকর্তার নাম আসার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
সুপারভাইজার পদে গঙ্গানন্দপুর ইউনিয়ন ছাত্রলীগ নেতা রাজু, তথ্য সংগ্রহকারী পদে পৌর ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন, শফিকুল ইসলাম সহ একাধিক ছাত্রলীগের নেতৃবৃন্দের নাম পাওয়া গেছে চূড়ান্ত তালিকায়।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঝিকরগাছায় সক্রিয় ভূমিকা পালন করা যশোর সরকারি এম এম কলেজের শিক্ষার্থী আল আসিফ হিমেল জানিয়েছেন, চূড়ান্ত তালিকায় প্রথমে তার নাম থাকলেও অদৃশ্য কারণে তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অংশগ্রহণকারী একাধিক শিক্ষার্থীদের নাম বাদ দিয়ে ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সদ্য পাস করা এইসএসসি'র মেধাবী শিক্ষার্থী রাফিউল ইসলাম অভিযোগ করে বলেন, অনলাইনে তথ্য সংগ্রহকারী পদে আবেদন করি।এরপর লিখিত পরিক্ষায় অংশগ্রহণ করি। এক্ষেত্রে মূল আবেদনের সাথে আমার এসএসসির মূল সনদ ও এইচএসসির মার্কসিটের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত করে আবেদনপত্রের সাথে সংযুক্ত করা হলেও পরীক্ষার একইদিনে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টায় আমাকে জানানো হয় 'এইসএসসির মূল সনদ না থাকায় আবেদনটি বাতিল করা হয়েছে।'যা অত্যন্ত হাস্যকর ও বৈষম্যমূলক আচরণ বলে আমি মনে করি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন প্রার্থী জানিয়েছেন, এই নিয়োগে অবৈধভাবে ঘুষ-বানিজ্যের মাধ্যম ছাত্রলীগ এবং স্বৈরাচারের দোসরদের পুনর্বাসনের চেষ্টা করছেন ঝিকরগাছা উপজেলা প্রশাসনের কিছু কর্মকর্তা। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার ভূপালী সরকারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার প্রতিক্রিয়া জানা সম্ভব হয়নি। প্রশাসনের এমন কর্মকাণ্ডে ঝিকরগাছায় সাধারণ শিক্ষার্থী এবং জনসাধারণের মাঝে ব্যপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।