কক্সবাজারের টেকনাফ সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের মংডুতে সামরিক বাহিনীর সঙ্গে দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠীর যুদ্ধে গোলার বিকট শব্দ শোনা গেছে যাচ্ছে।
গতকাল শুক্রবার রাত থেকে আজ শনিবার (৭ ডিসেম্বর) ভোর পর্যন্ত এসব শব্দ শোনা যায়। এতে নতুন অনুপ্রবেশ শঙ্কার পাশাপাশি সীমান্ত এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে।
সীমান্তের বাসিন্দারা বলছেন, টেকনাফ পৌরসভার জালিয়াপাড়া থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এবং সাবরাংয়ের পূর্বে নাফনদীর ওপারে রাখাইনের মংডু টাউনশিপের বিপরীতে মংডু শহরের অবস্থান। ওই সীমান্ত এলাকায় প্রচণ্ড বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
চলমান যুদ্ধে বিদ্রোহী আরাকান আর্মি অধিকাংশ এলাকা তাদের দখলে নেয়। এসব জায়গা পুনরুদ্ধারে কয়েক দিন ধরে ব্যাপক হামলা চালায় দেশটির জান্তা সরকার। এ কারণে সে দেশের গোলার শব্দে এপারের সীমান্ত কেঁপে উঠছে।
টেকনাফ সীমান্তের বাসিন্দা ওমর ফারুক বলেন, ‘রাতভর মিয়ানমারের গোলার কারণে নির্ঘুম রাত কেটেছে। সকাল পর্যন্ত বড় ধরনের গোলার বিকট শব্দ পাওয়া গেছে। তাই আমরা রাত জেগে বসে ছিলাম। বিশেষ করে নারী ও শিশুরা ভয়ে ছিল।’
সীমান্তের স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলছেন, মিয়ানমারে এখনও কয়েক লাখ রোহিঙ্গা বসবাস করছে। বর্তমানে মংডুতে হামলা হচ্ছে। সেখানে অধিকাংশ রোহিঙ্গার বসবাস। এভাবে যুদ্ধ চলমান থাকলে নতুন করে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।
সীমান্তে অনুপ্রবেশ রোধে বিজিবি কঠোর অবস্থানে রয়েছে বলে জানিয়েছেন টেকনাফ-২ ব্যাটালিয়নের ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর ইশতিয়াক মুর্শেদ।
এদিকে খারাংখালী, টেকনাফ, পৌরসভা, হ্নীলা, জাদিমুড়া, দমদমিয়া, নাইট্যংপাড়া, পৌরসভার জালিয়াপাড়া, নাজিরপাড়া, সাবরাং, শাহপরীর দ্বীপ, নাফ নদীর মোহনায় থেকে ভেসে আসছে বিস্ফোরণের বিকট শব্দ।
সীমান্তের বাসিন্দা গফুর আলম বলেন, ‘সীমান্তে রাতভর গোলার বিকট শব্দে মানুষ ঘুমাতে পারিনি। একটু পরপর গোলার বিকট শব্দ ভেসে আসছে এপারে, যার কারনে ভয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়ি। রাতের মতো এমন গুলির শব্দ আগে কখনও শুনিনি। এ পরিস্থিতিতে যেকোনো মুহূর্তে সীমান্তে আবারও অনুপ্রবেশ ঘটতে পারে।’
ক্যাম্পে বসবাসকারী এক রোহিঙ্গা নেতা বলেন, ‘রাখাইনে কয়েক দিন ধরে ফের যুদ্ধের তীব্রতা বেড়েছে, যার কারনে সে দেশে থাকার রোহিঙ্গা ক্যাম্পে স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করছে পালিয়ে আসার জন্য, কিন্তু তাদের এ দেশে না আসতে নিরুৎসাহিত করছি। তবু মানুষ প্রাণে ভয়ে পালিয়ে আসার চেষ্টা চালাচ্ছে।’
অন্যদিকে মিয়ানমারের মংডু শহরের মিয়ানমারের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন আরাকান আর্মির সঙ্গে দেশটির সেনাবাহিনীর তুমুল সংঘর্ষ চলছে।
এমন বাস্তবতায় টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং থেকে শাহপরীরদ্বীপ পর্যন্ত ৫৪ কিলোমিটার এলাকায় নাফ নদে বিজিবি ও বাংলাদেশ কোস্টগার্ড সদস্যরা দিন-রাত টহল বৃদ্ধি করেছেন।
সদ্য যোগদানকারী টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শেখ এহসান উদ্দিন বলেন, ‘আমিও গোলার বিকট শব্দ শুনেছি। মিয়ানমারে অভ্যন্তরীণ সংঘাতের কারণে এ ধরনের বিকট শব্দ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা সীমান্তের বসবাসকারী মানুষের খোঁজখবর রাখছি। পাশাপাশি সীমান্তে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে আমাদের বিজিবি ও কোস্টগার্ড সদস্যরা সর্তক অবস্থানে রয়েছে।’