সপ্তাহের সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ দিন জুমাবার। মুমিনের জীবনে দিনটি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা এ দিনের নামে স্বতন্ত্র সুরা অবতীর্ণ করেছেন। জুমার আজানের সঙ্গে সঙ্গে দুনিয়ার যাবতীয় কাজকর্ম ত্যাগ করে তাঁর দরবারে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হাদিসেও এ দিনের বিশেষ কিছু আমলের কথা বিবৃত হয়েছে।
একজন মুসলমানের জন্য এই দিনে বেশ কিছু ফজিলতপূর্ণ আমল রয়েছে। যথা-
১. সকালে গোসল করা
২. উত্তম পোশাক পরে মসজিদে আসা
৩. সুগন্ধি ব্যবহার করা
৪. সবার আগে মসজিদে আসার চেষ্টা করা
৫. মনোযোগের সঙ্গে খুতবা শোনা
এই চার আমলের বিনিময়ে এক সপ্তাহের সব ছোট গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন গোসল করে উত্তম পোশাক পরিধান করে এবং সুগন্ধি ব্যবহার করে, যদি তার কাছে থাকে, তারপর জুমার নামাজে আসে এবং অন্য মুসল্লিদের গায়ের ওপর দিয়ে টপকে সামনের দিকে না যায়, নির্ধারিত নামাজ আদায় করে, তারপর ইমাম খুতবার জন্য বের হওয়ার পর থেকে সালাম পর্যন্ত চুপ করে থাকে, তাহলে তার এই আমল পূর্ববর্তী জুমার দিন থেকে পরের জুমা পর্যন্ত সব সগিরা গুনাহর জন্য কাফফারা হবে।’ (আবু দাউদ: ৩৪৩)
বেচাকেনা বন্ধ রাখা
জুমার দিন আজানের পর বেচাকেনা বন্ধ রাখা গুরুত্বপূর্ণ আমল। আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন, ‘হে মুমিনেরা, জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেওয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো।’ (সুরা জুমুআ: ৯)
দ্রুত মসজিদে যাওয়া
জুমার নামাজের জন্য আগে আগে মসজিদে যাওয়া ফজিলতপূর্ণ কাজ। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘জুমার দিন মসজিদের দরজায় ফেরেশতারা অবস্থান করেন এবং ক্রমানুসারে আগে আগমনকারীদের নাম লিখতে থাকেন। যে সবার আগে আসে সে একটি মোটাতাজা উট কোরবানি করার সওয়াব পায়। এর পর যে আসে, সে একটি গাভি কোরবানি করার সওয়াব পায়। এর পর আগমনকারী ব্যক্তি মুরগি দানকারীর সমান সওয়াব পায়। তার পর ইমাম যখন বের হন, তখন ফেরেশতারা সওয়াব লেখা বন্ধ করে দেন এবং মনোযোগসহকারে খুতবা শুনতে থাকেন।’ (বুখারি: ৯২৯)
সুরা কাহফ তিলাওয়াত
সুরা কাহফ তিলাওয়াত করা এই দিনের অন্যতম বিশেষ আমল। হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পড়বে, তা জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার জন্য আলোকিত হয়ে থাকবে। আর যে ব্যক্তি এই সুরার শেষ ১০ আয়াত পাঠ করবে, দাজ্জাল বের হলে তার কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (তারগিব, হাদিস: ১৪৭৩, মুসতাদরাক: ২ / ৩৯৯)
বেশি বেশি দরুদ পাঠ
মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর প্রতি বেশি বেশি দরুদ পড়া এ দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল। রাসুল (সা.) বলেন, ‘দিনসমূহের মধ্যে জুমার দিনই সর্বোত্তম। এই দিনে হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনে তিনি ইন্তেকাল করেছেন। এই দিনে শিঙায় ফুঁক দেওয়া হবে। এই দিনে সব সৃষ্টিকে বেহুঁশ করা হবে। অতএব, তোমরা এই দিনে আমার ওপর অধিক পরিমাণে দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়ে থাকে।’ (আবু দাউদ: ১০৪৭)
দোয়ায় মশগুল হওয়া
আল্লাহর দরবারে দোয়া ও ক্ষমা প্রার্থনায় মগ্ন হওয়া জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ আমল। এ দিনের একটি বিশেষ মুহূর্তে আল্লাহ দোয়া কবুল করেন। জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা) বলেন, ‘জুমার দিনের ১২ ঘণ্টার মধ্যে একটি বিশেষ মুহূর্ত এমন আছে, যখন মুমিন আল্লাহর কাছে যে দোয়া-ই করবে তিনি তা কবুল করেন।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ১০৪৮)